শিল্পের প্রদর্শনী, না খেলার মাঠ?
২৫ জুলাই ২০১৯লিনৎস শহরে একাধিক ভবনের ছাদজুড়ে শিল্পের প্রদর্শনী চলছে, যার পোশাকি নাম ‘ইন্দ্রিয়র নেশা – শিল্প ও গতিশীলতা'৷ সেখানে প্রাপ্তবয়স্করাও আবার শিশু হয়ে উঠতে পারেন৷ এখানে শিল্প শুধু দেখা যায় না, ছোঁয়াও যায়৷ বস্তুগুলির উপর চড়া যায়, সেগুলি নিয়ে খেলা করা যায়, ইচ্ছামতো নাচা যায়৷
‘লিনৎসের নল' নামের শিল্পকর্ম বিশেষ নজর কাড়ছে৷ নীল জাল দিয়ে তৈরি এই বস্তুটি ছাদের ইস্পাতের কাঠামোর কল্যাণে সীমা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ছে৷ ক্রোয়েশিয়া ও অস্ট্রিয়ার এক শিল্পীসংঘ ৬ দিনের মধ্যে প্রায় ৩,০০০ মিটার তার ও ১,০০০ মিটারেরও বেশি নায়লনের জাল সৃষ্টি করেছে৷ অস্ট্রিয়ার ক্রিস্টফ কাৎসলার এই সংঘের তিনজন প্রতিষ্ঠাতার একজন৷ ক্রিস্টফ বলেন, ‘‘ফ্রাংকফুর্ট শহরের একটি গ্যালারিতে আমরা এই ধারার অন্যতম প্রথম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলাম৷ দর্শকদের প্রতিক্রিয়া ছিল অসাধারণ৷ এই অভিজ্ঞতা, এই আনন্দ, এই উৎসাহ আমাকে সত্যি অত্যন্ত নাড়া দিয়েছিল৷ তখনই এ রকম আরও স্পেস বা শিল্পের ক্ষেত্র সৃষ্টি করার আইডিয়া মাথায় এসেছিল৷''
‘লিনৎসের নল'-এর ঠিক পাশেই ‘সমবেত আলোকপাত' নামের আরেকটি ইনস্টলেশন শোভা পাচ্ছে৷ দর্শকরা লাল রঙের কাপড়ের এই জঙ্গলে খেলাচ্ছলে হারিয়ে যেতে এবং পরস্পরকে আবার খুঁজে নিতে পারেন৷ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার ‘আর্জেন্ট এজেন্সি' এটি সৃষ্টি করেছে৷ তাঁরা ডিজাইন ও সংস্কৃতির বিশ্লেষণের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে চেয়েছেন৷ লিনৎস শহরের প্রদর্শনীর জন্যই আলাদা করে এই ইনস্টলেশন সৃষ্টি করা হয়েছে৷ দর্শনের ছাত্র হিসেবে ক্রিস্টিয়ান পাগ মনে করেন, ‘‘একটি অনুভূতি হতে বাধ্য৷ এ যেন বাতাস ও সূর্যের সঙ্গে খেলা৷ রোদ উঠলে ফ্যাব্রিক বা কাপড়ের মধ্যে তা আরো লক্ষ্য করা যায়৷ অন্যদিকে এই শিল্পকর্ম আত্ম প্রতিফলন ও সমবেতভাবেও সেই প্রতিফলনে প্রেরণা জোগায়৷''
একাধিক সংঘ ও ২০ জনেরও বেশি শিল্পী এই প্রদর্শনীর খেলার উপকরণ সরবরাহ করেছেন৷ আল্ডো জানোটি সেই খেলার নির্দেশিকা সৃষ্টি করেছেন৷ প্রদর্শনী ক্ষেত্রের মধ্যে ছোট ছোট স্কেচের মাধ্যমে তিনি ইনস্টলেশনগুলি সম্পর্কে মন্তব্য রেখেছেন৷ এভাবে তিনি গোটা প্রদর্শনীটিকে একই সূত্রে বেঁধেছেন৷ আল্ডো বলেন, ‘‘সব সময়ই ইন্টারঅ্যাকশন বা আদানপ্রদান ঘটছে৷ শুধু শারীরিক নয়, ইন্টারঅ্যাকশনের অর্থ মস্তিষ্ক, কোনো ছবি বা কোনো কনসেপ্ট বা ধারণার সঙ্গে বোঝাপড়াও হতে পারে৷ অর্থাৎ ইন্টারঅ্যাকশন ছাড়া শিল্পই সম্ভব নয়৷''
এই প্রদর্শনীর দর্শকরা শুধু শারীরিকভাবেই শিল্পের জগতের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছেন না৷ বেশ কয়েকটি শিল্পকর্ম ছলে-বলে-কৌশলে নতুন দৃষ্টিকোণ খুলে দিচ্ছে৷ ফলে দর্শকদের অবস্থান সত্যি আক্ষরিক ও রূপক অর্থেও বদলে যাচ্ছে৷
ইয়োসেফিন গ্যুন্টার/এসবি