শিল্পী সংগ্রামী পল রবসন
অ্যামেরিকা, জার্মানি হয়ে বাংলাদেশ বা ভারত, সর্বত্র জনপ্রিয় পল রবসনকে চিনুন, এই ছবিঘরে...
ক্রীতদাসের ঘরে জন্ম
১৮৯৮ সালের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দাসপ্রথা ছিল বৈধ৷ প্রিন্সটন শহরে ক্রীতদাস বাবা ও মায়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন পল রবসন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান চলচ্চিত্র তারকা হবার আগে তিনি ছিলেন একজন পেশাদার ফুটবল খেলোয়াড়৷
চলচ্চিত্রে সাফল্য
বিশ শতকের বহু সিনেমায় অভিনয় ও গান করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও খ্যাতি লাভ করেন তিনি৷ শেকসপিয়ারের বিখ্যাত চরিত্র ওথেলো চরিত্রে অভিনয় করা প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ অভিনেতা তিনি৷ কিছুদিনের জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়ে লন্ডনের দর্শকদেরও মোহিত করেন তিনি৷ এরপর আবার অ্যামেরিকায় ফিরে এসে রাজনীতিক কার্যকলাপে যোগ দেন তিনি৷
কৃষ্ণাঙ্গ ও কমিউনিস্ট
১৯৩৯ সালে অ্যামেরিকায় ফিরে আসার পর সোভিয়েতপন্থি মনোভাবের কারণে মার্কিন গোয়েন্দাসংস্থা এফবিআই-র নজরে আসেন৷ রাশিয়ান ভাষায় নানা ধরনের কমিউনিস্ট নথিতে তাঁর আগ্রহ আরো তাঁকে কর্তৃপক্ষের নজরে বিপজ্জনক করে তোলে৷
ঠাণ্ডা যুদ্ধে রবসন
১৯৪০ থেকে কৃষ্ণাঙ্গদের সমানাধিকারের আন্দোলনে যুক্ত তাকায় তৎকালীন সরকারের নিশানায় এসে পড়েন তিনি৷ সামাজিকভাবে একঘরে করে দেবার পাশাপাশি তাঁর গান বাজানো নিষিদ্ধ করা হয়৷ ১৯৫৬ সালে তিনি কমিউনিস্ট নন, এমন স্পষ্টিকরণে সই করতে বলা হলে, তা প্রত্যাখ্যান করেন৷ পরে, তাঁর পাসপোর্ট কেড়ে নিয়ে গৃহবন্দি করে রাখা হয়৷ তবুও সেখান থেকেই তাঁর কাজ চালিয়ে যান তিনি৷
জার্মানিতে রবসন
পাসপোর্ট ফিরিয়ে দেবার পর ষাটের দশকে তৎকালীন পূর্ব জার্মানি সমাদরে স্বাগত জানায় রবসনকে৷ তাঁর জীবনীকার হানেস ব্র্যুভাইলার বলেন, ‘‘একজন স্বঘোষিত পুঁজিবাদবিরোধী ও বর্ণবৈষম্যবিরোধী মানুষ হিসাবে রবসন পূর্ব জার্মানিতে সোভিয়েতের তুলনায় একটা অন্য সমাজ খুঁজে পান৷ এই দুই সংস্কৃতিকে কাছে আনতে পারবেন তিনি, এই ছিল তাঁর বিশ্বাস৷’’
বাংলা কীভাবে চেনে তাঁকে
অসমীয়া সঙ্গীতশিল্পী ভূপেন হাজারিকার কণ্ঠে দুই বাংলায় ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে পল রবসনের বিখ্যাত গান ‘ওল্ড ম্যান রিভার’-র বাংলা সংস্করণ ‘বিস্তীর্ণ দুপারে’ গানটি৷ এছাড়া, হেমাঙ্গ বিশ্বাসের লেখা ও সুরে ‘ওরা আমাদের গান গাইতে দেয় না’ গানেও ধরা পড়েছে শিল্পী-সংগ্রামী পল রবসনের কথা, যে গান বাকস্বাধীনতার লড়াইয়ে দুই বাংলাতেই অনুপ্রেরণার উদাহরণ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আলোচনায়
রবসনের জীবনী ‘দ্য সাউন্ড অফ ফিউরি’র লেখক ব্র্যুভাইলার মনে করেন, চলমান ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে নতুন করে প্রাসঙ্গিকতা খুঁজে পাবে রোবসনের জীবনী৷ পাশাপাশি, বাকস্বাধীনতা ও সমানাধিকারের লড়াইয়েও অনুপ্রেরণা হতে পারেন তিনি বলে তাঁর মত৷