1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শিক্ষার্থীদের একটা অংশের ঝরে পড়ার শঙ্কা আছে'

সমীর কুমার দে ঢাকা
২১ মে ২০২১

করোনা অতিমারির সময়ে শিক্ষার অবস্থা প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকার চেয়ারম্যান অধ্যাপক নেহাল আহমেদের মুখোমুখি ডয়চে ভেলে৷

https://p.dw.com/p/3tn1Q
Bangladesch 2019 | Besuch Bildungsminister Dipu Moni
ছবি: Abdullah Al Momin/bdnews24.com

ডয়চে ভেলে : করোনার মধ্যে তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, শিক্ষা ব্যবস্থা সচল রাখতে আপনারা কী উদ্যোগ নিয়েছেন?

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমরা সরাসরি ক্লাস নিতে পারছি না, শিক্ষকরা সামনাসামনি যেভাবে ক্লাস নেন সেভাবে হয়ত হচ্ছে না, কিন্তু সারাদেশে ভার্চুয়ালি অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ তবে এটাতে অনেক জায়গায় যাওয়া যায়নি৷ যেমন দ্বীপ, হাওর, পাহাড়ি অঞ্চলে নেটওয়ার্কে সমস্যা আছে৷ আর সব বাচ্চাদের তো ডিভাইসটা নেই হাতে৷ এখন পর্যন্ত আমরা অনলাইনের উপর নির্ভর করছি এবং ওই ক্লাসগুলো আবার ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে৷ কেউ যদি ক্লাস মিস করে তাহলে পরবর্তী সময়ে যেখানে নেটওয়ার্ক আছে সেখানে গিয়ে ইউটিউব থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারছে৷ আপাতত এই অবস্থার মধ্যে আছি৷ আর আমরা অপেক্ষা করছি, করোনা পরিস্থিতি যদি একটু স্বাভাবিক হয় তাহলে সরাসরি ক্লাসে চলে যাবো৷

অনলাইনে ক্লাস নেওয়া বা ইউটিউবে পাওয়া গেলেও তো সেখানে অনেক শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারছে না৷ এতে কি শিক্ষায় বৈষম্য বাড়বে না?

শিক্ষার বৈষম্য বাড়বে ঠিক৷ কিন্তু এই মুহুর্তে তো আমাদের সামনে বিকল্প কিছু নেই৷ সারাদেশে তো আমাদের নেটওয়ার্ক অতটা সবল না৷ আর অন্তত একটা স্মার্টফোন তো সবার হাতে নেই৷ অনেক গরিব ছাত্র আছে তাদের হাতে এটা নেই৷ কিছু তো বৈষম্য আছে৷ তারপরও আমাদের একটা বিশাল অংশ কিন্তু অনলাইনে পড়ছে৷ আর যাদের নেই তারা কিন্তু পরবর্তীতে বন্ধুর কাছ থেকে বা কারো কাছ থেকে ফোন চেয়ে নিয়ে ডাউনলোড করে নিতে পারে৷ এই সুযোগটা রাখা হয়েছে৷

গত বছর তো পরীক্ষা ছাড়াই শিক্ষার্থীদের পরবর্তী কাসে তুলে দেওয়া হলো৷ এবার কী করবেন?

এখন আমরা অপেক্ষায় আছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ক্লাসে ফিরে যাওয়ার৷ আমাদের তো চিন্তাভাবনা ছিল গত মার্চ মাসে ক্লাসে যাওয়ার, কিন্তু সেটা তো পারিনি৷ তখন তো করোনা পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে গেল৷ আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আকাঙ্খায় আছি৷

আগামী জুনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার চিন্তা করা হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সেটা কি সম্ভব হবে?

করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে তো সেটা সম্ভব হবে না৷ পৃথিবীর সব জায়গায় কিন্তু খুলছে, আবার বন্ধ করে দিতে হচ্ছে৷ আমাদের শিক্ষকদের একটা বড় অংশ কিন্তু টিকা নিয়ে নিয়েছে৷ ছাত্রদের এখন দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে৷ এটা যদি পারা যায় তাহলে আমরা খানিকটা পজিটিভ জায়গায় চলে আসবো৷ ইংল্যান্ডে আমরা গতকাল দেখলাম ওদের অনেক কিছু খুলে দিয়েছে৷ কারণ হলো তারা টিকা কার্যক্রমটা ব্যাপকভাবে চালাতে পেরেছে৷ বাংলাদেশে তো সেই বাস্তবতাটা এখনো হয়নি৷ তবে আমরা আশাবাদী আমাদের করোনা পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হবে৷ সেই আকাঙ্খা থেকে আমরা জুন-জুলাইয়ে স্কুল খোলার কথা বলছি৷

উন্নত দেশগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভাগ করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে? আপনারা কি এমন কিছু ভেবেছেন?

হ্যাঁ, আমাদের এখানেও ক্লাসের সাইজ আমরা ছোট করে ফেলবো৷ ধরেন একটা ক্লাসে যদি ৬০ জন থাকে, সেটা আমরা ৩০ জনে নামিয়ে আনবো, যাতে ক্লাসে ছেলে-মেয়েরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস করতে পারেন৷ সব ক্লাস একসঙ্গে স্কুলে যাবে সেই চিন্তাভাবনা আমাদের নেই৷ শুধুমাত্র এসএসসি ও এইচএসসির পরীক্ষার্থী যারা তারা প্রতিদিন স্কুল বা কলেজে আসবে৷ আর অন্য ক্লাসের ক্ষেত্রে রোববারে হয়ত ক্লাস সিক্স, সোমবারে ক্লাস সেভেন এভাবে করার চিন্তা আছে৷ 

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ

দীর্ঘদিন স্কুল-কলেজ এভাবে বন্ধ থাকলে তো পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে একটা সংকট তৈরি হবে?

এই সংকট তো শুধু বাংলাদেশ না, সারা পৃথিবীতেই৷ মাঝখানে অ্যামেরিকায় একবার স্কুল খোলার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু দেখা গেল এক মাসে একলাখেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী আক্রান্ত হয়ে গেল৷ তখন সঙ্গে সঙ্গে আবার বন্ধ করে দিয়েছে৷ এখন এটা তো আমাদের হাতে নেই৷ অপেক্ষা করা ছাড়া তো আর কিছু করার নেই৷ আমাদের কাছে তো কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন আগে৷ শিক্ষার তো ক্ষতি হচ্ছে এটা নিঃসন্দেহে৷ একটা প্রজন্ম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে৷ তারপরও তো জীবনের চেয়ে কোনো কিছু বড় না৷

স্কুল খুললেও গণপরিবহন যদি না চলে তাহলে তো সব শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারবে না?

যখন আমরা স্কুল খুলবো, তখন সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবো, ছেলেমেয়েরা যাবে কীভাবে সেটা তো আমাদের দেখতে হবে৷ তাদের স্কুলে আসার ব্যবস্থা করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবো৷ গ্রামে তো এটা লাগে না, তারা হেঁটেই স্কুলে চলে যায়৷ বিশেষ করে কয়েকটি মহানগরী যেমন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী এই শহরগুলোতে সমস্যা বেশি৷ অন্য জেলা শহরগুলোতেও গণপরিবহন কোনো ফ্যাক্টর না৷

প্রায় দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, এই সময়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যে ঘাটতি হয়েছে সেটা কিভাবে পূরণ করা সম্ভব?

আমরা প্রত্যেক ক্লাসের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে দিয়েছি৷ যেটা একেবারেই না পড়লে নয়, সেটাই শুধু পড়ানো হবে৷ পরবর্তী ক্লাসে উঠার পর যেন কোনো সংকট না হয় সেদিকে খেয়াল রেখেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে এটা করা হয়েছে৷ শুধু আবশ্যকীয় চ্যাপ্টারগুলো কাটছাঁট করে পড়ানো হবে৷ প্রতি ক্লাসেই এভাবে যেতে হবে৷ আমাদের তো পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতেই হবে, বিকল্প তো কিছু করার নেই৷ অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়েদের ক্লাসে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন৷ আবার অনেক অভিভাবক বলছেন, কেন আমরা স্কুল খুলছি না৷ দুই ধরনেরই অভিভাবক আছে৷ 

দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কি বেড়ে যেতে পারে?

অবশ্যই বেড়ে যেতে পারে৷ বিশেষ করে মেয়েরা৷ গ্রামাঞ্চলে অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা আছে৷ অনেক ছেলে-মেয়ে হয়ত স্কুলে না এসে অন্য কাজ-কর্মে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শিক্ষকদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া আছে যে, যারা স্কুলে আসবে না তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া এবং অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার৷ আমাদের মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সেই উদ্যোগ নেওয়া হবে৷

এই ঝরে পড়া রোধ করতে এর মধ্যে আপনারা কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন?

যারা ঝরে পড়েছে সেটা তো এখন আমরা জানি না৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললে তো সেটা আমরা জানতে পারবো না৷ এটা আমরা আন্দাজ করছি, কিন্তু সত্যিকারের পরিসংখ্যান তো আমাদের কাছে নেই৷ স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা বিষয়টা জানতে পারবো৷ তবে আমাদের একটা নির্দেশনা আছে, স্কুল খোলার সঙ্গে সঙ্গে আমরা দেখবো কারা স্কুলে আসছে না৷ তাদের বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিতে হবে কেন তারা আসছে না৷ এবং তাদের আবার ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে কি আপনারা শিক্ষার্থীদের খোঁজ -খবর নিয়েছেন?

প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই চেষ্টা করেছে তাদের সাধ্যমতো৷ শহরঅঞ্চলে সমস্যা, কিন্তু তাপরপরও শিক্ষাকরা ফোনে চেষ্টা করেছেন৷ আর গ্রামাঞ্চলে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তারা যেন বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ নেয়৷ সেই প্রচেষ্টাটা আছে৷ তারপরও পূর্ণচিত্রটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না খুললে পাওয়া যাবে না৷

বর্তমানে যে দিশেহারা শিক্ষা ব্যবস্থা, সেটা থেকে উত্তরণে সামনের দিনগুলোতে আপনাদের পরিকল্পনা কী? 

এটা তো সারা বিশ্বের সমস্যা৷ করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আমাদের বারবার এই চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে পড়তেই হবে৷ আমরা যদি প্রতিষ্ঠান খুলতে পারি, তাহলে ছুটিগুলো কমিয়ে দেবো৷ আমাদের সামারের ছুটি থাকে, রোজায় ছুটি থাকে, শুক্র বা শনিবার বন্ধ থাকে৷ এই বন্ধের দিনগুলোতে ক্লাসের সংখ্যা বাড়িয়ে চেষ্টা করা হবে ছাত্রদের যতটা পুষিয়ে দেওয়া যায়৷ এখন শুরুটা করা দরকার৷ শুরু করতে পারলে সত্যিকারের চ্যালেঞ্জগুলো আমরা বুঝতে পারবো৷ ইতিমধ্যে বেশ কিছু পরিকল্পনা হয়েছে, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ হবে আশা করি৷