1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ আরো দুই সপ্তাহ বাড়ানো হয়েছে৷ সরকারের এই সিদ্ধান্তে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে৷ বিশ্লেষকেরা বলছেন অপরিকল্পিত এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার ক্ষতি আরো বাড়বে৷

https://p.dw.com/p/46Poy
ফাইল ছবিছবি: Mortuza Rashed/DW

বুধবার সকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করোনা পরিস্থিতি দেখে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানালেও দুপুরে জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আরো দুই সপ্তাহের জন্য বাড়ানো হচ্ছে৷ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবুল খায়ের জানান, ‘‘৬ ফেব্রুয়ারির পর আরো দুই সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তারপর করোনা পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যে বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হবে, না খুলে দেয়া হবে৷ শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও জীবনের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷’’

বাংলাদেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হওয়ার পর ২২ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘেষণা করা হয়৷ এর আগে করোনার কারণে ৫৪৪ দিন দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো৷ গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর থেকে বিধি নিষেধের আওতায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়৷

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে দুই নীতি কেন: ডা. লেলিন চৌধুরী

এদিকে ইউনেস্কো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও বাংলাদেশ তার নিজস্ব সিদ্ধান্তে এবারও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে৷ বিশ্বের যে গুটিকয়েক দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখছে তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি৷

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী মনে করেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে অপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘জাতীয় পরামর্শক কমিটিই বলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করোনার হটস্পট নয়৷ তারপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হলো৷ এখন আবার তা বাড়ানো হচ্ছে৷ বন্ধ যখন করা হয়েছে এখন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় খোলার সময় আরো বেড়ে যেতে পারে৷ কিন্তু বন্ধ তরার সিদ্ধান্তই তো যথার্থ ছিল না৷ আর কিন্তু মাদ্রাসাগুলো খোলা থাকছে৷ তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে দুই নীতি কেন?’’

তার কথা, বাণিজ্য মেলা চলছে, সবকিছু খোলা আছে৷ সবাই বাইরে যাচ্ছেন৷ মাস্ক পরার কোনো আগ্রহ নাই৷ স্বাস্থ্যবিধি কেউ যেমন মানতে চাইছেন না৷ মানানোর ব্যাপারে সরকারের কোনো উদ্যোগ নাই৷ ফলে শিক্ষার্থীদের ঘরে রেখে কী লাভ! বাইরে থেকে যারা ঘরে ফিরছেন তারা তো স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না৷ সুতরাং ঘরে থেকেও তারা সংক্রমিত হচ্ছে৷ তিনি মনে করেন, ‘‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে, নিয়ম মেনে সবকিছু চালু রাখা সম্ভব৷ যেটা দরকার ছিল সেটা আমরা করছি না৷ আসলে অপরিকল্পিতভাবে কাজ করা হচ্ছে৷’’

সীমিত পরিসরে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সচল রাখা জরুরি: মোহাম্মদ মজিবুর রহমান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান মনে করেন, ভিন্ন প্রক্রিয়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা সম্ভব ছিল৷ আবারো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোয় শিক্ষা ক্ষতি আরো বাড়বে বলে মনে করেন তিনি৷ তিনি বলেন, ‘‘মহামারি তো এখন আরা নতুন নয়৷ আর কতদিন থাকবে তাও আমরা জানি না৷ তাই আমরা তো বছরের পর বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে পারি না৷ তাই যদি পালাক্রমে সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখা হলে ক্ষতি কিছুটা হলেও কমানো যেত৷ মানচিত্র তৈরি করে এলাকাভিত্তিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেত৷ গ্রামে কিন্তু কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না৷ আমরা শিক্ষার্থীদের ট্রেইনড আপ করতে পারতাম৷ তা করিনি৷ আবার মাদ্রাসা খোলা রাখছি৷’’

তার মতে, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ক্ষতি ছাড়াও বিচ্ছিন্নতা বাড়বে, মানসিক সমস্যা বাড়বে৷ বাড়বে বাল্যবিবাহ৷ আরো অনেক সমস্যা হবে৷ তাই সীমিত পরিসরে হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সচল রাখা জরুরি৷’’

আমরা বলেছি এবারের পর যেন বন্ধ আর বাড়ানো না হয়: ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ

জাতীয় পরামর্শক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা না হয় সেটা আমাদেরও সুপারিশ৷ তবে এবার ওমিক্রন সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর আমরা দেখলাম শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে বেশি৷ আমাদের কাছে অনেক আক্রান্ত শিশুকে নিয়ে আসা হচ্ছে৷ আগে সেটা ছিল না৷ তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিছুদিন বন্ধ রাখা ঠিক আছে৷ কিন্তু আমরা বলেছি এবারের পর যেন বন্ধ আর বাড়ানো না হয়৷’’

তার কথা, ‘‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যদি বাণিজ্য মেলার তুলনা করা হয় তাহলে ভুল মেসেজ যাবে৷ আমরা বাণিজ্য মেলা বন্ধের কথাও বলেছি৷ জনসমাগম বন্ধের কথাও বলেছি৷ তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রাখলে শিশুরা যেতে বাধ্য হয়৷ সেটা আমাদের ভাবতে হবে৷ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময় আমরা বলেছিলাম যেন দীর্ঘদিন বন্ধ রাখা না হয়৷ এখনো তাই বলছি৷ সংক্রমণ একটু কমে এলেই যেন খুলে দেয়া হয়৷’’

এদিকে ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে করোনায় আরো ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ১৯৩ জন৷ শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ৷