1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা হোক পরিবেশবান্ধব'

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২০ ডিসেম্বর ২০১৯

শান্তিনিকেতনকে দূষণের হাত থেকে বাঁচাতে বিশেষ কমিটি গঠন করলো জাতীয় পরিবেশ আদালত৷ রাজ্যের মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে কাজ করবে তিন সদস্যের এ কমিটি৷

https://p.dw.com/p/3V80z
Indien | Kalkutta | Poush Mela
ছবি: DW/P. Samanta

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৯৪ সালে পৌষমেলা শুরু করেছিলেন৷ পরে ১৯৫১ থেকে মেলা আয়োজনের দায়িত্ব নেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ৷ বীরভূমের শান্তিনিকেতনে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলায় হাজার হাজার মানুষ প্রতি বছর জড়ো হয়৷ সংখ্যাটা পৌঁছে যায় দু' লাখে৷ এত মানুষ জড়ো হওয়ার ফলে দূষণ ছড়ায়৷ এই দূষণ রুখতে পরিবেশ আদালতে মামলা করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত৷ ২০০৭ সালে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বেঁধে দেওয়া দৃষণ বিধি বিশ্বভারতী মানছে না- এই অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন সুভাষ দত্ত৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান হলেও আইনের উর্ধ্বে নয়৷ আইন মেনেই তাদের মেলা করা উচিত৷ কিন্তু বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের ব্যবহারিক অভিজ্ঞতার অভাবে মেলা পরিবেশবান্ধব করা যাচ্ছে না৷'' 

২০১৫ সালে বিশ্বভারতীর সার্বিক দূষণ নিয়ে তিনি মামলা করেন৷ সেই মামলার ভিত্তিতে কমিটি গড়ে দিয়েছিল আদালত৷ সেই কমিটি গঠনের পরও যে মেলা ঘিরে দূষণমুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা যায়নি তার প্রমাণ আদালতের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণ৷ সেখানে আদালত বিশ্বভারতীর ‘স্বাস্থ্য' নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷ তারা নির্দেশ দিয়েছে, রাজ্যের মুখ্যসচিব, বীরভূমের জেলা শাসক, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বোলপুর পুরসভার চেয়ারম্যান এবং রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রতিনিধিকে নিয়ে কমিটি গড়তে হবে৷ এই কমিটি বৈঠক করে মেলার কঠিন বর্জ্য শোধন নিয়ে সিদ্ধান্ত আদালতকে একমাসের মধ্যে জানাবে৷

সুভাষ দত্ত

১১ ডিসেম্বরের নির্দেশে বিচারপতি এস পি ওয়াংদি, এ কে গোয়েল ও এস সিং গারবিয়ালের বেঞ্চ মন্তব্য করে, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ ও দেশের মানুষের কাছে এই মেলার সাংস্কৃতিক তাৎপর্য অনেকটাই৷ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এই আয়োজনকে আরো সুন্দর করবে, কোনো বাধা সৃষ্টি না করে৷ নতুন যে কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেটির সঙ্গে আগের কমিটিও বহাল থাকবে৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কতটা সঠিকভাবে হচ্ছে, সেটার উপর নজরদারি চালাবে কমিটি৷''                                                                                                                                                                           

দূষণের জন্য মেলা বন্ধ হয়ে যাক সেটা কেউই চান না৷ পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী নব দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি পৌষমেলা বন্ধের পক্ষে নই৷ আর সব ব্যাপারেই বিশ্বভারতীকে আদালতের কাঠগড়ায় টেনে নিয়ে যাওয়া হবে, তারও সমর্থন করি না৷ রবীন্দ্রনাথের ভাবধারায় গড়ে ওঠা পৌষমেলায় আজ সবটাই ব্যবসায়িক৷ শব্দদূষণ এবং কর্পোরেটের থাবায় পৌ্ষমেলা নিজস্বতা হারিয়েছে৷ এতে আশ্রমিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে৷ বিশ্বভারতী যেহেতু কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে চলে, তাই এ ব্যাপারে কেন্দ্রের সক্রিয় ভূমিকা কাম্য৷''  মেলার বাণিজ্যিকীকরণের থাবা যে এখানেও লেগেছে সে ব্যাপারে একমত পড়ুয়ারা৷ বিশ্বভারতীর বিএড-এর ছাত্র সৌরভ চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মেলার নিজস্বতা হারিয়েছে৷ আগের মতো আর নেই৷

সৌরভ চক্রবর্তী

মেলা অনেক বেশি কর্পোরেট হয়েছে৷'' দূষণ সম্পর্কে তাঁর মত, ‘‘পৃথিবীর সব মেলাতেই দূষণ হয়৷ সেক্ষেত্রে পৌষমেলাতেও হয়৷ কিন্তু বারবার এই ইস্যুতে পৌষমেলা বন্ধ করার কথা ওঠে কেন? সবাই মিলে চাইলে দৃষণ বন্ধ করা যেতে পারে৷'' সুভাষ দত্তের বক্তব্য, ‘‘পৌষমেলা শেষ হয়ে যাওয়ার পরও মেলা চলে৷ কখনোই মেলা চারদিনে সীমাবদ্ধ থাকে না৷ তাছাড়া মেলা বন্ধ হয়ে যাবে বলে যে রব উঠেছে, সেটা ভিত্তিহীন৷ মেলা পরিবেশবান্ধব করে তোলার চেষ্টাকে এতে খাটো করা হচ্ছে৷''    

 বাস্তবিকই এই মেলা চারদিনের হলেও তারপরও চলতে থাকে৷  এতে দূষণের মাত্রা বাড়ে৷ কর্তৃপক্ষের দাবি, তারা মেলা চারদিনেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায়৷ ব্যবসায়ীরা ২৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হতে যাওয়া মেলা আয়োজনেও সমস্যার মুখে পড়েছে বিশ্বভারতী৷ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে৷ বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতি প্লট বুকিংয়ের জন্য যে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে তা ৭০ শতাংশ কমানোর দাবি জানিয়েছে৷ সাধারণ ব্যবসায়ীদের পক্ষে বর্ধিত ভাড়া দেওয়া সম্ভব নয়৷ দুই পক্ষের এই সংঘাতে মীমাংসা সূত্র না মেলায় ব্যবসায়ীরা মেলা বাঁচাও কমিটির ব্যানার টাঙিয়ে দোকান বসাতে শুরু করেছেন৷ এ বিষয়ে বিশ্বভারতীর জনসংযোগ আধিকারিক অনির্বাণ সরকার জানিয়েছেন, ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত প্লট বুকিংয়ের ভাড়া কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ ব্যবসায়ীরা রাজি হলে পৌষমেলা হবে৷ কিন্তু ব্যবসায়ীরা মনে করে, ভাড়া বহুগুণ বাড়িয়ে ছাড় দেওয়ার অর্থ নেই, ছাড়ের পরও বিপুল বোঝা থাকছে তাঁদের উপর৷