1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শস্য বীজের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ

৬ জুলাই ২০২১

আজ থেকে প্রায় ১১ হাজার বছর আগের মেসোপটেমিয়া মানে বর্তমানের ইরাক ও তুরস্কের কৃষকেরা প্রথম বীজ থেকে শস্য উৎপাদন শুরু করেছিলেন৷ তখন থেকে এখন পর্যন্ত গমের প্রায় দুই লাখ জাত আবিষ্কৃত হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/3w52f
ছবি: DW

এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা শস্যের প্রায় চার লাখ জাতের খবর জানেন৷ এর মধ্যে মাত্র এক দশমাংশ খাওয়া যায়৷ আর আমাদের খাবার চাহিদার প্রায় অর্ধেক মেটায় ভুট্টা, চাল আর গম৷

অনেক জাতের শস্য এবং আলাদা জিনগত বৈশিষ্ট্যের বিভিন্ন জাত আমাদের খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য জরুরি৷ বৈচিত্র্যতা যত বেশি হবে, একটি রোগের কারণে বিশ্বব্যাপী গম বা অন্য শস্য পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তত কম হবে৷

সে কারণে বীজ ব্যাংক খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ ১৮৯৪ সালে সেন্ট পিটার্সবার্গে প্রথম বীজ ব্যাংক স্থাপিত হয়৷ জার্মানির গাটার্সলেবেনের বীজ ব্যাংক বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ বীজ ব্যাংক৷ সেখানে এমন অনেক বীজ আছে যা শুধু সেখানেই পাওয়া যায়৷

শস্য বীজ নিয়ে যত কথা

বিশ্বের অনেক জায়গায় এখন বড় আকারের বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিশেষ জাতের বীজ ও শস্য সংগ্রহ করতে তারা একসঙ্গে কাজ করে৷ এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বড় বীজ ব্যাংকটি নরওয়ের স্ভালবার্ডে অবস্থিত৷

তবে মাঠে বৈচিত্র্যতা কমে যাচ্ছে৷ শুধু বিংশ শতাব্দীতেই শস্যের বৈচিত্র্যতা প্রায় ৭৫ শতাংশ কমে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা৷

এর অনেক কারণ রয়েছে৷ কৃষিকাজে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালুর কারণে হঠাৎ করে শস্যকে বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে৷ যেমন ফলন বেশি হতে হবে, একই সময়ে সংগ্রহের উপযোগী হতে হবে এবং যন্ত্র দিয়ে ফসল সংগ্রহের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া যাবেনা৷

বিশ্ব বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা চান যেন অনেক দূরের যাত্রাপথে ফল ও সবজি টিকে থাকতে পারে৷ খুব অল্পসংখ্যক জাতই এই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে৷ সুপারমার্কেটে আমরা যে টমেটো বা শসা দেখতে পাই সেগুলো দেখতে অন্যরকম হলেও তাদের জিনগত বৈশিষ্ট্য প্রায় একই৷

জিনগত দারিদ্র্যতা কত ভয়ংকর হতে পারে তা গত শতকের সত্তরের দশকে দেখা গিয়েছিল৷ সেই সময় একটি ভাইরাসের কারণে এশিয়ায় পাওয়া যাওয়া ধানের জাতের প্রায় এক-চতুর্থাংশ হারিয়ে গিয়েছিল৷ বুনো জাতের সঙ্গে ক্রসব্রিডিং করে ঐ শস্যকে পরবর্তীতে ভাইরাস প্রতিরোধী করে তোলা হয়েছিল৷

শস্য উৎপাদন বাড়াতে ও নতুন জাত উদ্ভাবন করতে কৃষকেরা হাজার হাজার বছর ধরে তাদের নিজেদের ফসল থেকে বীজ সংগ্রহ করেছেন এবং অন্যদের সঙ্গে অদলবদল করেছেন৷

বীজ কোম্পানিগুলো গত কয়েক দশক ধরে বাজারে অল্পসংখ্যক জাত নিয়ে আসছে৷ যেমন বাঁধাকপির প্রায় ৯৫ শতাংশ জাত ইতিমধ্যে হারিয়ে গেছে৷ এখন কোম্পানিগুলো নিজেদের শস্য ডিজাইন করে সেগুলোর মেধাস্বত্ত্ব নিয়ে নেয়৷ বিশ্বের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সরবরাহ এই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আসে৷ কৃষকরা এসব শস্যের বীজ সংগ্রহ করতে পারেননা, এমনকি এসব শস্য ফলাতে বিশেষ ধরনের সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়৷

তবে বিশ্বের অনেক মানুষ এই নিয়মের বাইরে আসতে চাইছেন৷ তারা শস্যের বৈচিত্র্যতা বাড়াতে চান ও বাধাহীনভাবে বীজ বিতরণ করতে চান৷

যেমন অস্ট্রিয়ার বেসরকারি সংস্থা নোয়াস আর্কের সদস্যরা হুমকির মুখে থাকা পুরনো জাত থেকে বীজ সংগ্রহ করেন৷ এরপর সেগুলো ব্রিড করে চেন সুপারমার্কেটে বিক্রি করে থাকেন তারা৷

সুপারমার্কেটে বীজ আর শস্য দুইটাই বিক্রি হয়৷ এখানে জিনগত বৈশিষ্ট্য বাস্তব৷

কর্নেলিয়া বরমান/জেডএইচ