1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘শনিবার বিকেল': এক সপ্তাহে সিদ্ধান্ত না পেলে আইনি ব্যবস্থা

সমীর কুমার দে ঢাকা
১১ আগস্ট ২০২২

তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আপিল বোর্ডে ঝুলে আছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘শনিবার বিকেল' সিনেমাটি৷ সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পেজে ফারুকী একটা পোস্ট দেওয়ার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় এসেছে৷ নড়ে চড়ে বসেছে আপিল বোর্ডও৷

https://p.dw.com/p/4FQ3I
মোস্তফা সরয়ার ফারুকী
মোস্তফা সরয়ার ফারুকীছবি: privat

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কাছে আপিলের কাগজ চেয়েছে বোর্ড৷ বৃহস্পতিবার সেই কাগজ জমাও দেওয়া হয়েছে৷এখন এক সপ্তাহ অপেক্ষা করবেন ফারুকীর আইনজীবী ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেছেন, "এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত না পেলে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব৷”

নির্মাতা ফারুকী গত রোববার সকালে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "আজ সকাল সকাল মনটা খারাপ হয়ে গেলো! এরকম কত সকাল যে আমার গেছে৷ আমি একটা ছবি বানাইছি শনিবার বিকেল নামে৷ যেটা সেন্সর বোর্ড সদস্যরা দেখে বিভিন্ন পত্রিকায় ইন্টারভিউ দিয়ে বললেন, আমরা দ্রুতই সেন্সর সার্টিফিকেট দিয়ে দিচ্ছি৷ তারপর এক অদৃশ্য ইশারায় ছবিটার দ্বিতীয় শো করে তারা৷ এবং তারপর বলে দিলো, ছবি ব্যান! আমরা আপিল করলাম৷ আজকে সাড়ে তিন বছর হলো আপিলের৷ কোনও উত্তর নাই৷”

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব পদাধিকার বলে আপিল বোর্ডের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন৷আর মন্ত্রীপরিষদ সচিব পদাধিকার বলে আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান৷ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মকবুল হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিষয়টি আমার একেবারেই জানা ছিল না৷ গত দু'তিন দিন আগে বিষয়টি জানলাম৷ মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সঙ্গে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল, তখন উনি বিষয়টি বললেন৷ আমি ওনাকে বলেছি, এতদিন ধরে বিষয়টি ঝুলে আছে, আপনার আরেকটু তৎপর হওয়ার দরকার ছিল৷ আমি নিজে ছবিটি দেখা চেষ্টা করেছি, কিন্তু দেখতে পারিনি৷ আজকের মধ্যে দেখে ফেলব৷ এখন উনারা যদি রিভিউ চান তাহলে নিশ্চয় আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান আমাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন৷ তখন আমরা বিষয়টি দেখব৷ আমার ধারণা নিশ্চয় বড় কোন সমস্যা আছে, না হলে আটকালো কেন?”

এক সপ্তাহে সিদ্ধান্ত না পেলে আইনি পদক্ষেপ:ফারুকীর আইনজীবী

ছবিটি নির্মাণের পর ২০১৯ সালে সেন্সর বোর্ডে জমা দেন ফারুকী৷ হলি আর্টিজানের ঘটনা অবলম্বনে এই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে৷ সেন্সর বোর্ডের সদস্য নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজারের কাছে অনুমতি না পাওয়ার কারণ জানতে ফোন করা হলে তিনি প্রথমে কিছু বলতে রাজি হননি৷ শুধু বলেছেন এ বিষয়ে কথা বলা নিষেধ আছে৷ পরে অবশ্য তিনি বলেন, "ছবিটি দেখে কোনোভাবেই আমার মনে হয়নি শিল্প-সাংস্কৃতিক দৃষ্টিতে কোন সমস্যা আছে৷ আমরা তো অনুমোদন দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছি৷ কিন্তু প্রশাসন কেন ছাড়েনি সেটা তো আমি বলতে পারব না৷ সাবজেক্ট নিয়ে প্রশাসন আটকালে তো আমরা কিছু বলতে পারি না৷”

একটা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে বর্তমানে ক্যানাডা আছেন নির্মাতা মোস্তাফা সরয়ার ফারুকী৷ এক সপ্তাহ পর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে৷ ক্যানাডা যাওয়ার আগে দেশের সাংবাদিকদের কাছে ফারুকী বলেছেন, "আমার ধারণা বড়সড় কোনও গেম চলছে৷ ২০১৯-এর ৯ জানুয়ারি ছবিটি দেখে সেন্সর বোর্ডের অনেকে পত্রিকায় সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছেন, ছবিটি মুক্তির সনদ দেওয়া হবে৷ বোর্ডের অনেকে আমাকে পারসোনালি বলেছেন, ছবিটি দেখে তাদের ভালো লেগেছে৷ এর পরদিনই ১০ তারিখে অনলাইনকে ব্যবহার করে এমন কিছু পরিস্থিতি তৈরি করা হয় এবং জাহিদ হাসান ও তিশার স্টিল ছবি ব্যবহার করে কিছু কনটেন্ট আপ করা হয়, যেখানে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ তোলা হয়! অথচ তারা জানেও না, ছবিতে তিশা বা জাহিদ হাসান কোন চরিত্রে অভিনয় করেছেন৷ এর পরের দিন ১১ তারিখে সেন্সর বোর্ড ছবিটি রি-কল করে দ্বিতীয়বার দেখতে চাইলো এবং দেখলো৷ দেখে তারা এবার সুনির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ না করে ঢালাও কিছু অভিযোগ করে জানালো, সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে! এরপর আপিল করা হয়েছে আমাদের পক্ষ থেকে৷ কিন্তু কোনও জবাব মেলেনি৷ পরে নির্মাতা ও সংস্কৃতিকর্মী নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, মোরশেদুল ইসলাম- এনাদের ডেকে ছবিটি দেখানো হয়েছে৷ তারা এরমধ্যে এমন কোনও রাষ্ট্র বা ইসলামবিরোধী বিষয় খুঁজে পাননি, যার কারণে এটিকে আটকানো যেতে পারে৷”

"জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণার অংশও হতে পারে সিনেমাটি"

বিশ্বের নানা জায়গায় ইতিমধ্যে ছবিটি প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ বাংলাদেশে সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও এরইমধ্যে মিউনিখ, মস্কো, সিডনি, বুসান, প্যারিসসহ বিশ্বের বিভিন্ন নামকরা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত এবং প্রশংসিত হয়েছে৷ যার মধ্যে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়ে দুটি ইনডিপেনডেন্ট জুরি পুরস্কারও অর্জন করেছে ছবিটি৷

আপিলের শুনানিতে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর পক্ষে কথা বলেছেন সংস্কৃতিকর্মী মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, "আপিলের শুনানিতে আমি বলেছি, এই সিনেমাটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ জঙ্গিবাদ বিরোধী প্রচারণার অংশও হতে পারে সিনেমাটি৷ কেউ সিনেমাটি দেখলে জঙ্গিদের ঘৃণা করবে৷ তাদের পরিণতি সম্পর্কেও ধারণা পাবে৷ আমি মনে করি, সরকারের তো উচিৎ হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সিনেমাটি সারাদেশের বিভিন্ন হলে ফ্রি দেখানো৷ এতে দেশের ভাবমূর্তি একটুও ক্ষুন্ন হবে না, বরং বৃদ্ধি পাবে৷ আমাদের শুনানির পর আপিল বোর্ডে থাকা কর্মকর্তারা বলেছেন, এই দুঃখজনক বিষয়টিকে তারা আর সামনে আনতে চান না৷ তাছাড়া বাংলাদেশের উপর জঙ্গিবাদের তকমা লাগানোর জন্য তো অনেকেই বসে আছেন৷ ফলে এই সময়ে ছবিটি মুক্তি পেলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে! এক সপ্তাহ পর ফারুকী ক্যানাডা থেকে ফিরে আসলে এটা নিয়ে আমরা আন্দোলন গড়ে তুলব৷” 

সম্প্রতি ছবিটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়া তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছে৷ সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারি, ‘শনিবার বিকেল' সিনেমাটিতে কোনো দেশবিরোধী বা ধর্মবিরোধী কিছু নেই৷ বরং এই সিনেমাটিতে আমাদের ধর্ম ও আমাদের দেশের সাংস্কৃতিকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ এখানে উল্লেখ করছে যে, বিশ্বখ্যাত পত্রিকা দ্য হলিউড রিপোর্টারশনিবার বিকেল' সিনেমাটি দেখে লিখেছে, ‘‘এই সিনেমাটি বাংলাদেশে ব্যান করা হয়েছে, বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষুন্ন হওয়ার আশংকায়, কিন্তু ছবিটি দেখে আমাদের উপলব্ধি হলো, সিনেমাটি বাংলাদেশের ইমেজ বৃদ্ধি করবে, কমাবে না৷’’ সর্বশেষ বৃহস্পতিবার জাজ মাল্টিমিডিয়া আপিল বোর্ডের কাছে পুরনো আবেদনের কপি জমা দিয়েছে৷

ছবিটি আজকের মধ্যেই দেখে ফেলব: মকবুল হোসেন

ফারুকী ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার পর সামাজিক মাধ্যমে ক্রমশই ছবিটি নিয়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে৷ নির্মাতা, শিল্পী, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষেরাও ছবিটি মুক্তির আহবান ও আটকে রাখায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন৷ নির্মাতা অনিমেষ আইচ ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, "লাইভে এসে আত্মহত্যা দেখি, বিডিআর বিদ্রোহ লাইভ দেখি, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে মেরে ফেলতে দেখি, পি কে হালদারের দুর্নীতি তাও দেখি শান্ত দু'চোখে৷ একটা সিনেমা দেখতে গেলেই হয়তো আমাদের ঘুমিয়ে থাকা গতজন্মে মৃত আত্মা জেগে উঠবে৷ তাই দেখি না, দেখাতে পারি না৷ সিনেমার সঙ্গে কেন এমন ফ্যাসিস্ট আচরণ?”

প্রসঙ্গত, ‘শনিবার বিকেল' ছবিটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ১২টি দেশের খ্যাতনামা অভিনেতারা৷ যার মধ্যে আছেন ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি, ইউরোপের এলি পুসো, সেলিনা ব্ল্যাক, বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়সহ আরও অনেকেই৷