1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রাণী সংরক্ষণে অভিনব আশ্রয়কেন্দ্র

৩১ জুলাই ২০১৯

মানুষের নানা কার্যকলাপের ফলে দক্ষিণ অ্যামেরিকার অ্যামাজন অববাহিকায় অনেক প্রাণী আজ বিলুপ্তির পথে৷ পেরুতে একটি আশ্রয়কেন্দ্র এমন অনেক প্রাণীর সুরক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ তবে সেই পথ সমস্যায় ভরা৷

https://p.dw.com/p/3N4HR
Global ideas Infofilm Wildtiere
ছবি: DW/Tanja Blut

অ্যামাজনের দুর্গম অঞ্চল

ইকিটোস যেতে হলে কোনো পাকা রাস্তা নেই৷ বিমান অথবা নৌকাই ভরসা৷ পেরুর অ্যামাজন বনাঞ্চলের মাঝে এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৪ লক্ষ৷ নিয়ম অনুযায়ী জঙ্গলের বাসিন্দারা একমাত্র নিজস্ব প্রয়োজন মেটাতে শিকার করতে পারেন৷ পেরুতে জীবন্ত বা মৃত বন্য প্রাণী নিয়ে ব্যবসা নীতিগতভাবে নিষিদ্ধ৷

তা সত্ত্বেও বেলেন শহরের কুখ্যাত হাটে সবকিছুই কেনাবেচা চলে৷ প্রাণী সংরক্ষণবিদ গুডরুন স্প্যারার বলেন, ‘‘এখানে ফলমূল, শাকসবজি রয়েছে৷ কিছুকাল আগে আমি এক প্রাক্তন প্রাণী ব্যবসায়ীকে বলেছিলাম, অবশেষে এবার বেআইনি প্রাণী ব্যবসা কিছুটা কমবে৷ তিনি বলেছিলেন, এখন আর প্রকাশ্যে প্রাণী কেনাবেচা চলে না, বায়না এলে তবেই প্রাণী জোগাড় করে গোপনে বাসায় লুকিয়ে রাখা হয়৷''

প্রাণীদের আশ্রয়কেন্দ্র

গুডরুন স্প্যারার প্রায় ৩০ বছর ধরে ইকিটোসে বসবাস করছেন৷ তিনি লুপ্তপ্রায় প্রাণীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন৷ সপ্তাহে দুই বার তিনি বেলেনের হাটে প্রাণীদের জন্য ফলমূল ও শাকসবজি কেনেন৷

ইকিটোসের আশেপাশের জঙ্গল ধীরে ধীরে খালি হয়ে যাচ্ছে৷ কমবয়সি প্রাণী শিকার বাড়ছে৷ গুডরুন বাজারের দৃশ্যের বর্ণনা করে বলেন, ‘‘টেবিলের উপর ছোট কেইমান পড়ে রয়েছে৷ খুবই ছোট৷ আগেই মারা গেছে৷ মাত্র ২-৩ মাস বয়স হয়েছিল৷ মানুষ যে এমন প্রাণী কেনে, সেটা সত্যি দুঃখজনক৷''

লুপ্তপ্রায় প্রাণীরা হুমকির মুখে

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বংশবৃদ্ধির আগেই এমন সব প্রাণী হত্যা করা হয়, যা বিভিন্ন প্রাণীর বিলুপ্তির অন্যতম প্রধান কারণ৷ গুডরুন স্প্যারার বলেন, ‘‘ধূসর রংয়ের এই মাংস ঠিক কোন প্রাণীর, তা আমি জানি না৷ জানতে পারলাম এর নাম সাতচাভাকা৷ খুবই খারাপ বিষয়, কারণ এই প্রজাতির টাপির লুপ্তপ্রায় হিসেবে পরিচিত৷''

বাজারে এমন একটি প্রাণী দেখা গেল, যেটিকে সম্ভবত খুব কম বয়সে মারা হয়েছে৷ মনে রাখতে হবে, টাপির বেশ বড় প্রাণী৷ এমন প্রাণীর ওজন ৩০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে৷ সমস্যা হলো, বংশবৃদ্ধির পর্যায়ে পৌঁছতে ৬ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত সময় লাগে৷

প্রকৃতির কোলে আশ্রয়কেন্দ্র

হাতে সময় কম, প্রাণীরা খোরাকের জন্য অপেক্ষা করছে৷ ইকিতোসের পশ্চিম বন্দরে নৌকা এসেছে৷ গুডরুন-কে পানির উপর দিয়ে কিছুটা পথ যেতে হয়৷ রিও নানে থেকে পাদ্রে কোচা পর্যন্ত৷ সেখানেই প্রাণীদের আশ্রয়কেন্দ্র৷ প্রাণীদের স্বার্থে জঙ্গলের মধ্যেই সেটি গড়ে তোলা হয়েছে৷

২৪ বছর আগে প্রজাপতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছিল৷ আজ সেখানে পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীও থাকে৷ গুডরুন সেই সব প্রাণীদের আশ্রয় দেন, বাকিরা যেগুলি একেবারেই পেতে চায় না৷

এর মধ্যে এই জাগুয়ারের মতো অনেক লুপ্তপ্রায় প্রাণীও রয়েছে৷ শিশুশাবক হিসেবে গুডরুন সেটিকে হাতে পেয়েছিলেন৷ বেআইনি প্রাণী পাচারের সময় সেটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল৷ তিনি বলেন, ‘‘কাঁটাতারে মোড়া কাঠের বাক্সে এই শাবকটিকে কেউ আমার এখানে এখানে ফেলে গেছিল৷ সেই ব্যক্তি আদিবাসীদের সঙ্গে ব্যবসা করে এবং নানারকম পণ্য বিক্রি করে৷ সে এই প্রাণীটি বিক্রি করতে পারে নি৷ প্রায় ২ সপ্তাহ ধরে সে প্রাণীটিকে বাক্সবন্দি রেখেছিল৷ শাবকটি আর দাঁড়াতেই পারছিল না৷''

জাগুয়ারের সমস্যা

জাগুয়ারদের প্রায় ৭০ শতাংশ রেড মিট বা লাল মাংসের প্রয়োজন হয়৷ তা না হলে তাদের কিডনির ক্ষতি হয়৷ পেদ্রো বেলোর ওজন এখন ৯৪ কিলো৷ প্রতি ৩ সপ্তাহ অন্তর সে একটা আস্ত গরু খায়৷ গুডরুন স্প্যারার বলেন, ‘‘বিশেষ করে বিচরণক্ষেত্র হারিয়ে যাওয়ার কারণে জাগুয়াররা বিলুপ্তির পথে চলেছে৷ এই প্রাণী একাই থাকে৷ প্রত্যেক জাগুয়ার কমপক্ষে ৫০ বর্গ কিলোমিটার নিজস্ব ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে৷ তা না হলে তারা যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্যের নাগাল পায় না৷ এখনো যথেষ্ট জায়গা থাকলেও রাস্তাঘাট ও পাইপলাইনের কারণে সমস্যা হচ্ছে৷ এই প্রাণী সেগুলির উপর দিয়ে যায় না৷''

হুমকির মুখে টেপির

বেলেনের হাটে টেপিরের মাংস বিক্রি হয়৷ জীবিত প্রাণী হিসেবে সেগুলি এরকম দেখতে হয়৷ গুডরুন স্প্যারার বলেন, ‘‘পর্যটকদের কাছে খবর পেয়ে পরিবেশ পুলিশ চিবোলো-কে বাজেয়াপ্ত করেছিল৷ একটি রেস্তোরাঁয় ভাসমান এক ভেলায় সে অতিথিদের জন্য একটা আকর্ষণ হয়ে উঠেছিল৷ তার মালিকরা উচ্ছিষ্ট খাবার দিতো, ফলে তার কিডনির মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল৷ তা সত্ত্বেও এখন সে সুস্থ হয়ে উঠেছে৷ যখন এখানে এসেছিল, তার গায়ে ডোরাকাটা ছিল৷ দেখতে শুয়োরের মতো হলেও আসলে তারা প্রজাতি হিসেবে ঘোড়ার গোত্রের মধ্যে পড়ে৷''

টাপির স্নান করতে খুব ভালবাসে৷ মলমূত্র ত্যাগের জন্যও পানির উপর তারা খুব নির্ভরশীল৷ তুষার যুগেও তারা টিকে গিয়েছিল৷ অথচ মাত্র ১৫ বছরের মধ্যে মানুষ তাদের লুপ্তপ্রায় করে তুলেছে৷

পেরুতে দুর্লভ প্রাণী রক্ষার লড়াই

টানিয়া ব্লুট/এসবি