1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লুপ্তপ্রায় অ্যালব্যাট্রস পাখি রক্ষার অভিনব উদ্যোগ

১৬ সেপ্টেম্বর ২০২০

দেখতে অনেকটা সিগাল পাখির মতো হলেও অ্যালব্যাট্রস আকারে অনেক বড়৷ বেআইনি মাছধরাসহ নানা কারণে এই প্রজাতি লুপ্তপ্রায়৷ গবেষকরা সেই বিপদ দূর করতে প্রাণপন চেষ্টা চালাচ্ছেন৷

https://p.dw.com/p/3iX7g
ছবি: picture-alliance/A. Cooper

অ্যালব্যাট্রস পাখি তার ডানা প্রায় সাড়ে তিন মিটার পর্যন্ত মেলতে পারে৷ দক্ষিণ গোলার্ধের সম্ভবত সবচেয়ে খানদানি এই পাখি লুপ্তপ্রায় হয়ে উঠছে৷

ভারত মহাসাগরে ফ্রান্স নিয়ন্ত্রিত ক্রোজে দ্বীপপুঞ্জে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ ও তাঁর সহকর্মীরা পাখিগুলির গায়ে ট্রান্সমিটার লাগিয়েছেন৷ গত বছরের শরৎ কাল থেকে তাঁরা আকাশে অ্যালব্যাট্রস পাখির গতিবিধির উপর নজর রাখছেন৷ ছোটবেলা থেকেই অঁরি এই সামুদ্রিক পাখি দেখে মুগ্ধ৷ অঁরি বলেন, ‘‘অ্যালব্যাট্রস ঘণ্টায় ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিতে উড়তে পারে৷ সামুদ্রিক ঝড়ও তাদের দমিয়ে রাখতে পারে না৷ বাতাস কাজে লাগিয়েই তারা ঘোরাফেরা করে৷ তবে এই পাখির উড়ালের মধ্যে সত্যি বেশ রাজকীয় ও চমৎকার একটা ব্যাপার রয়েছে৷ সমুদ্রে পাড়ি দিলে সব পক্ষিবিজ্ঞানীর অন্তত একটি অ্যালব্যাট্রস দেখার স্বপ্ন থাকে৷’’

তবে এমন সম্ভাবনা দিনে দিনে কমে চলেছে, কারণ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অ্যালব্যাট্রসের বিচরণ নাটকীয় মাত্রায় কমে গেছে৷ গবেষকদের ধারণা, গোটা বিশ্বে এই প্রজাতির মাত্র ২৫,০০০ প্রাণী টিকে রয়েছে৷

খোরাকের সন্ধানে অ্যালব্যাট্রস প্রায়ই নৌকার পিছু নেয়৷ নিজের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে গিয়ে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ বলেন, ‘‘ক্রোজে দ্বীপপুঞ্জে যাবার নৌকা থেকে আমি প্রথম অ্যালব্যাট্রস দেখি৷ হঠাৎ যেন পাখিটি উদয় হলো৷ সমুদ্র অস্থির ছিল৷ আমরা দেখলাম অ্যালব্যাট্রস নৌকার দিকে উড়ে এসে উপর দিয়ে চলে গেল এবং নৌকার পাশে উড়তে লাগলো৷ আমাদের পর্যবেক্ষণ করে আবার সমুদ্রে উধাও হয়ে গেল৷’’

অ্যালব্যাট্রস টিকিয়ে রাখতে চলছে গবেষণা

জেলেদের কারণে বিপদ

এই পাখি মূলত জেলে নৌকা অনুসরণ করে৷ তবে দুর্ভাগ্যবশত অনেক জেলে পানির উপর কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ জালের দড়ি ফেলে রাখে, যেগুলির মধ্যে অসংখ্য হুক বা বঁড়শি থাকে৷ টোপ ছিনিয়ে নিতে গিয়ে অ্যালব্যাট্রস প্রায়ই বঁড়শি গিলে ফেলে, যার পরিণাম ভীষণ কষ্টকর মৃত্যু৷

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই সব জেলে নৌকার মাছ ধরার অনুমতি থাকে না৷ ফলে নিয়ম অনুযায়ী সেগুলি শনাক্ত হবার সিগন্যালও পাঠায় না৷ পানির উপরিভাগ থেকে জাল দ্রুত গভীরে নামানোর জন্য ওজনদার দড়ির মতো নিরাপত্তার ব্যবস্থাও থাকে না৷ ফলে গি দুয়ামেলের মতো সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানীদের দুশ্চিন্তা বেড়েই চলেছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আন্তর্জাতিক জলসীমার সমস্যা হলো, যে সেখানে কোনো অধিকার স্বীকৃত নয়৷ ফলে আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির হাতে সেখানে কোনো আইনি পদক্ষেপ প্রয়োগ করে এই সব নৌকার বেআইনি মাছ ধরা বন্ধ করা সম্ভব নয়৷’’

আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ

সে কারণে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ ও তাঁর সহকর্মীরা তাঁদের ‘ওশেন সেন্টিনেল রিসার্চ প্রজেক্ট’ শুরু করে অন্য পথে বেআইনি মাছধরা মোকাবিলার চেষ্টা করছেন৷ তাঁরা ১৭০টি পাখির শরীরে রাডার ট্রান্সমিটার লাগিয়েছেন৷ সেই যন্ত্র এমনকি সেই সব নৌকাও শনাক্ত করতে পারে, যেগুলি নিয়ম অনুযায়ী নিজস্ব অবস্থান জানাতে সংকেত পাঠাচ্ছে না৷ সেটি দেখিয়ে অঁরি বলেন, ‘‘এটা একটা ট্রান্সমিটার৷ এর মধ্যে জিপিএস অ্যান্টেনা রয়েছে, যেটি নিখুঁতভাবে সেই জায়গার প্রতি নির্দেশ করতে পারে, যেখানে রাডার শনাক্ত করা হয়েছে৷ তারপর আরেকটি অ্যান্টেনা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আমাদের সংকেত পাঠায়৷’’

বিজ্ঞানীরা পাখিদের শরীরে বসানো ট্রান্সমিটার থেকে পাওয়া তথ্য আইনসঙ্গত জেলে নৌকা থেকে পাঠানো তথ্যের সঙ্গে তুলনা করেন৷ এভাবে তাঁরা জানতে পারেন, যে সমুদ্রের বুকে প্রায় ৩০ শতাংশ নৌকারই প্রয়োজনীয় অনুমতি নেই৷ গবেষকদের দাবি, এমন কিছু নৌকো স্পেন ও চীনের পতাকার ছত্রছায়ায় ঘোরাফেরা করছে৷

রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল?

স্পেনের টেকসই মাছধরা বিভাগের মহাপরিচালক ইসাবেল আর্তিমে গার্সিয়া অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে একেবারেই প্রস্তুত নন৷ তিনি বলেন, ‘‘এই মহাসাগর বা অন্য যে কোনো মহাসাগরে স্পেনের পতাকার ছত্রছায়ায় যে সব নৌকা চলছে, সেগুলির উপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকে৷ আমরা প্রত্যেকটি নৌকা মনিটর করি এবং সেগুলির কার্যকলাপ না জানা অসম্ভব৷’’

কিন্তু পক্ষিবিজ্ঞানীরা নিজেদের গবেষণার উপর আস্থা রাখেন৷ তাঁদের সংগৃহিত তথ্য যে বেআইনি মাছধরা বন্ধ করতে এবং অ্যালব্যাট্রস বাঁচাতে সাহায্য করবে, সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত৷ অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ বলেন, ‘‘কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় মৃত্যুর হার বেশি এবং সেখানকার বেশিরভাগ নৌকা শনাক্ত করার প্রণালী বন্ধ রয়েছে – সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতে আমরা এমন প্রমাণ দিতে পারলে তা হবে সঠিক দিশায় এক পদক্ষেপ৷’’

সমুদ্রে বিচরণরত অ্যালব্যাট্রস নিয়ে কাজের সুবাদে অঁরি ওয়াইমার্সকের্শ একইসঙ্গে সংরক্ষণবাদী ও গবেষক হয়ে উঠেছেন৷ তিনি জানেন, এই প্রজাতির অস্তিত্ব বাঁচানোর সময় কমে চলেছে৷ তাই বেআইনি মাছধরায় রাশ টানতে তিনি নিজের সংগৃহীত তথ্য কাজে লাগাচ্ছেন৷ ক্রোজে দ্বীপপুঞ্জের আকাশে অ্যালব্যাট্রসের উড়াল চালু রাখতে তিনি বদ্ধপরিকর৷

সুসানে ড্যোরহাগে/এসবি