1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লুই কানের নকশায় ফিরছে সংসদ ভবন?

হারুন উর রশীদ স্বপন
৭ ডিসেম্বর ২০১৬

জাতীয় সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের মূল নকশা আসার পর থেকে নকশার বাইরে নির্মাণ করা স্থাপনা সরানোর বিষয়টিই আলোচনায় রয়েছে৷ সরানোর সিদ্ধান্ত আছে৷ সিদ্ধান্ত কার্যকর করলে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবরসহ অনেক স্থাপনা সরাতে হবে৷

https://p.dw.com/p/2TsUw
Bangladesch Parlament Gebäude in Dhaka
ছবি: AP

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা এখন ঢাকায়৷ ৪১টি বাক্স করে নিয়ে আসা হয়েছে স্থপতি লুই আই কানের করা নকশা৷ মার্কিন এই স্থপতির নকশা অনুযায়ীই জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ করা হয়৷

কিন্তু সংসদ ভবন এলাকায় লুইকানের নকশার বাইরেও কিছু স্থাপনা গড়ে উঠেছে৷ ১৯৮১ সালের ৩০ মে তখনকার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার দুই দিন পর তার কবর সেখানে প্রতিস্থাপন করা হয়৷ ক্রিসেন্ট লেকে ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা হয়৷ আর চন্দ্রিমা উদ্যানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় জিয়া উদ্যান৷ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত সংসদ ভবন এলাকায় আরো সাতজনকে সমাহিত করা হয়৷ তাদের মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজুর রহমান, খান এ সবুর ও মশিউর রহমান জাদু মিয়ার কবরও রয়েছে৷

নকশা লঙ্ঘন করে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনসহ আরো সাতটি স্থাপনা ও বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে সংসদ ভবন এলাকায়৷ ২০১৪ সালে সংসদ ভবন এলাকায় নকশা বহির্ভূত সব ধরণের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয় সরকার৷ নকশার বাইরে সব ধরণের স্থাপনা ভাঙারও সিদ্ধান্ত হয়৷ একই বছরের ১৭ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় জিয়াউর রহমানের কবর সংসদ ভবন এলাকা থেকে অন্য জায়গায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়৷ ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, সংসদ ভবনকে তার মূল নকশায় ফিরিয়ে আনা হবে৷ তারই অংশ হিসেবে স্থপতি লুইকানের মূল নকশা বাংলাদেশে আনা হলো৷ এর সফট কপিও আনা হবে বলে জানা গেছে৷

আর সংসদ ভবন মূল নকশায় ফিরিয়ে আনতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগেই একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে৷ তাতে বলা হয়েছে, ‘‘শেরে বাংলা নগরে সংসদ ভবনের মূল নকশায় জিয়াউর রহমানের কবরের কোনো জায়গা নেই৷’’ একই সঙ্গে অন্যান্য নকশাবহির্ভূত স্থাপনাও সরানোর প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়৷

তবে মূল নকশা আসার পর সংসদ ভবন এলাকার নকশাবহির্ভূত স্থাপনা সরানোর ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে কোনো কথা বলা হয়নি৷ সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, ‘‘আজকালের মধ্যে নকশার বাক্সগুলো খোলা হবে৷ এরপর প্রধানমন্ত্রীকে তা দেখানো হবে৷ আগে নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ সরকার এবং সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের৷’’

গণপূর্ত মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন আগেই সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘কারো কবর সরানোর জন্য সংস্কার করা হবে না৷ লুই আই কানের নকশা যেভাবে আছে, সে অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য যা যা করণীয়, সবই করা হবে৷’’ তবে মঙ্গলবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি৷

এর বেশি এখন আর কিছু বলা যাচ্ছেনা: ফিরোজ

জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘নকশা সংসদ সচিবালয় এনেছে৷ এখন এই নকশা আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবো৷ আমরা চাই সরকার তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করুক৷ এখন দেখার বিষয় সংসদ ভবন এলাকায় নকশার বাইরে কতটুকু বা কত স্থাপনা আছে৷ সেই অনুযায়ী কাজ হবে৷ এখানে সংসদের কাজ আছে৷ তবে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মূল কাজ৷ এর বেশি এখন আর কিছু বলা যাচ্ছেনা৷’’

জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার নকশা সম্পর্কে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসির মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লুই কানের এই স্থাপত্য বিশ্ববিখ্যাত, বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ৷ কিন্তু বিগত সময়ে মূল নকশার বাইরে অনেক স্থাপনা হয়েছে৷ আমাদের কথা হলো, এই সংসদ ভবনকে লুই কানের নকশায় ফিরিয়ে আনতে হবে৷ এখানে শুধু জিয়উর রহমানের কবর নয়, এখানে পাকিস্তানিদের কবরও আছে৷ জিয়াউর রহমানসহ পাকিস্তানি মনোভাবসম্পন্নদের কবর এখানে থাকতে পারেনা৷ আর সংসদ ভবন শুধু ভবন নয়, পুরোটা মিলেই সংসদ ভবন৷ এটা কোনো কবরস্থান নয়৷’’

অধ্যাপক মুনতাসির মামুন মনে করেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই জিয়াউর রহমানসহ অন্যদের কবর সেখানে স্থাপন করা হয়েছিল এবং সে কারণেই মূল নকশায় ফিরে যাওয়াটা বেশি দরকার৷ তাঁর মতে, ‘‘এটা নিয়ে কেউ রাজনীতির প্রশ্ন তুলতে পারেন৷ আমার কথা হলো, জিয়াউর রহমানের কবর এখানে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে৷ একই উদ্দেশ্যে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কবর এখানে করা হয়নি৷ আমরা সংসদ ভবন নিয়ে সব রাজনীতির অবসান চাই৷ চাই মূল নকশায় ফিরে যেতে৷’’

সরকারের উচিত নকশার বাইরের সব কিছু সরিয়ে ফেলা: মুনতাসির মামুন

তিনি আরো বলেন, ‘‘নকশা লঙ্ঘন করে স্পিকার, ডেপুটি স্পিকারের বাসভবনও নির্মাণ করা হয়েছে৷ সরকারের উচিত হবে নকশার বাইরের সব কিছু সরিয়ে ফেলা৷’’

আরেক প্রশ্নের জবাবে মুনতাসির মামুন বলেন, ‘‘সংসদ ভবন এলাকায় যদি জিয়াউর রহমানের কবর থাকে, তাহলে যে কোনো বিবেচনায় আরো অনেক কবর সেখানে থাকতে পারে৷ সেটাতো সম্ভব নয়৷ সংসদ ভবন এলাকা তো করস্থান নয়৷ আর জিয়াউর রহমানের কবর তো সংসদ ভবন এলাকায় ছিলনা৷ অন্য জায়গা থেকে এনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে৷’’

সংসদ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৬১ সালে, অর্থাৎ পাকিস্তান আমলে৷ স্থপতি মাযহারুল ইসলামকে সংসদ ভবনের নকশার দায়িত্ব দেয়া হলেও তাঁর প্রস্তাবে লুই কান প্রধান স্থপতি হিসেবে কাজ করেন৷ আর আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ ভবনের উদ্বোধন করা হয় ১৯৮২ সালে ২৮ জানুয়ারি৷

সামনে ও পেছনে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠসহ ২০৮ একর জমির ওপর জাতীয় সংসদ ভবন লুই কানের নকশার প্রথম ধাপ৷ এর চারদিকে আট লেনের সড়ক, মাঝখানে লেক৷ দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ চত্বর৷ এছাড়া বাকি জায়গায় গড়ে তোলার কথা সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিকবলয়৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে নীচে মন্তব্যের ঘরে লিখুন৷