লন্ডনে গত ৫০০ বছরের রোবট নিয়ে প্রদর্শনী
যুক্তরাজ্যের সায়েন্স মিউজিয়ামে খুলেছে বিগত ৫০০ বছরের ‘রোবট’ বা যন্ত্রমানবদের নিয়ে চমকে দেওয়ার মতো একটি প্রদর্শনী৷
অ্যানিমাট্রনিক বেবি
লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামে ‘রোবটস’ প্রদর্শনীর সূচনাতেই রাখা রয়েছে একটি মানবশিশু, তবে রক্তমাংসের নয়, যন্ত্রের৷ অন্যান্য নবজাতকের মতো এই শিশুটিও শুধু হাত-পা নাড়তে পারে৷ তবে দেখলে মনে হবে যেন দম নিচ্ছে, আবার হেঁচেও ফেলতে পারে! ফিল্মের শুটিংয়ের জন্য এ ধরনের বেবি তৈরি করা হয় বটে, কিন্তু এরা এতই জীবন্ত যে অনেক মা এদের প্রেমে পড়ে যান৷
কলের পুতুল
‘রোবট’ শব্দটি সৃষ্টি হয় ১৯২০ সালে, কিন্তু দম দেওয়া কলের পুতুল তার অনেক আগে থেকেই আছে৷ পুতুলনাচের ভঙ্গিতে বাইবেলের কাহিনি উপস্থাপনার জন্য মেলায় বা গির্জায় ব্যবহার করা হতো এই সব কলের পুতুল৷ এই দম দেওয়া যাজকটি এসেছেন স্পেন থেকে৷ এর সৃষ্টি সম্ভবত ১৫৬০ সালে৷
জাদু আলমারি
ষোড়শ শতাব্দীর সম্ভ্রান্ত মানুষদের বাড়িতে আলমারি কিংবা বিশেষ কক্ষে নানা ধরনের ‘আশ্চর্য’ জিনিসপত্র রাখা থাকত৷ সেখানে থাকত অত্যন্ত জটিল ও মনোহারী সব কলের পুতুল৷ লন্ডন প্রদর্শনীর ‘মার্ভেল’ বা ‘আশ্চর্য’ বিভাগে রয়েছে ১৭৭৩ সালের সেই সুবিখ্যাত ‘রুপোর রাজহাঁস’৷ দম দিলে এই হাঁসটি নড়ে-চড়ে, নিজের পালক পরিষ্কার করে, এমনকি একটি মাছও ধরে৷ ঔপন্যাসিক মার্ক টোয়েন নাকি এই হাঁসটির চোখে ‘বুদ্ধির ঝলক’ দেখেছিলেন৷
লৌহমুষ্টি
প্রস্থেটিক বা কৃত্রিম অঙ্গ দিয়ে দেহের হৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বদলে দেওয়ার প্রথা বহুদিনের৷ তার একটি নিদর্শন পাওয়া গেছে খ্রিষ্টপূর্ব ৯৫০ থেকে ৭১০ সালের একটি মিশরীয় ‘মামি’তে৷ প্রদর্শনীতে দেখানো হচ্ছে, রানি ভিক্টোরিয়ার আমলের প্রস্থেটিক হাত, যা অনেকের কাছে ভীতিকর মনে হতে পারে৷
‘রোবট’ নামটির স্রষ্টা এক চেক লেখক
কারেল চাপেক তাঁর ‘আর.ইউ.আর’ বা ‘রোসুমস ইউনিভার্সাল রোবটস’ নামের সায়েন্স ফিকশন নাটকটিতে ‘রোবট’ কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন৷ কথাটা এসেছে চেক ‘রোবোটা’ শব্দটি থেকে, যার অর্থ বেগার খাটা৷ ১৯২৩ সালের মধ্যে চাপেকের নাটক ৩০টি ভাষায় অনুদিত হয়েছিল৷ ডানদিকের ‘এরিক’ রোবটটি ১৯২৮ সালের একটি রোবটের অনুকরণে তৈরি৷
সিনেমার প্রথম রোবট ছিল এক মহিলা
জার্মান চিত্রনির্মাতা ফ্রিৎস লাঙ-এর ১৯২৭ সালের পথিকৃৎ সায়েন্স ফিকশন ছবি ‘মেট্রোপোলিস’-এ ফিল্মের ইতিহাসে এক আদিম রোবট রাখা হয়েছিল, যার নাম ছিল ‘মাশিনেনমেন্শ’বা যন্ত্রমানব৷ ছবির কাহিনি ২০২৬ সালের৷ রোবটটির স্রষ্টা তাঁর প্রেমিকা মারিয়াকে নতুন করে সৃষ্টি করতে চান৷ লন্ডনের প্রদর্শনীতে মারিয়ার একটি মডেল রাখা হয়েছে৷
‘আমি আবার ফিরব’
রোবটদের সম্পর্কে আমাদের ধারণা ও কল্পনা যতটা না বিজ্ঞান, তার চেয়ে বেশি শিল্পকলা থেকে এসেছে৷ কারেল চাপেকের নাটকেই রোবটরা বিদ্রোহ করে তাদের স্রষ্টাদের বিতাড়ন করার চেষ্টা করছে৷ তারপর আরো অনেক ছবিতে রোবটদের বিপজ্জনক হিসেবে দেখানো হয়েছে৷ যেমন, পরিচালক জেমস ক্যামেরনের ১৯৮৪ সালের থ্রিলার ‘দ্য টার্মিনেটর’৷ ‘টার্মিনেটর জেনাইসিস’ কোম্পানির টি৮০০ টার্মিনেটর লন্ডনের প্রদর্শনীর অঙ্গ৷
বিজ্ঞান আর কল্পনা
লন্ডন প্রদর্শনীতে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই সংক্রান্ত ফিল্ম দেখানো হচ্ছে, যেমন স্টিভেন স্পিলবার্গের ২০০১ সালের ছবি ‘এ.আই. আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ বা অ্যালেক্স গারল্যান্ডের ২০১৫ সালের ছবি ‘এক্স মাশিনা’৷ ছবিতে যে অত্যাধুনিক রোবটটিকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন অভিনেত্রী অ্যালিসিয়া ভিকান্ডার৷ এ ধরনের ছবি আর সায়েন্স ফিকশন না থেকে, ক্রমেই আমাদের দৈনন্দিন বাস্তবতার অঙ্গ হয়ে উঠছে৷
একঘেয়ে কাজ
শিল্পকারখানায় রোবটের ব্যবহার আজ সর্বত্র৷ যে কাজ মানুষের জন্য বুদ্ধিহীন, ক্লান্তিকর, নোংরা অথবা বিপজ্জনক, সেখানেই রোবটদের কাজে লাগানো হয়৷ ব্যাক্স্টার নামের এই রোবটটিকে কোনো নতুন কাজ শেখাতে কয়েক মিনিটের বেশি সময় লাগে না৷ ব্যাক্স্টারের দাম ২৫ হাজার ডলার, যা কিনা পশ্চিমা বিশ্বে একজন শ্রমিকের গড় বাৎসরিক বেতনের সমান৷
এই খবরপাঠকও কিন্তু রোবট!
স্থল মাইন সরাতে রোবটকে কাজে লাগানো যায়৷ কিন্তু টেলিভিশনে খবর পড়াটাও তো একঘেয়ে হয়ে উঠতে পারে? জাপানের ‘কোডোমোরয়েড’ হলো একটি সংবাদ পড়ার রোবট৷ ইনার জন্ম ২০১৪ সালে৷ তাঁকে দেখতে একেবারে মানুষের মতো এবং ইনি একাধিক ভাষায় অবিরাম সংবাদ পড়তে পারেন - একবারও হোঁচট না খেয়ে৷ এমনকি তাঁর রসবোধও আছে৷
একদিন না একদিন...
রব নাইট-এর ওপেন সোর্স অ্যান্ড্রয়েড ‘রোজা’ হলো বিশ্বের প্রথম ‘অ্যানথ্রোপোমিমেটিক’ রোবট, অর্থাৎ তাকে মানবদেহের কাঠামোর নকল করে তৈরি করা হয়েছে৷ লন্ডনের সায়েন্স মিউজিয়ামে যে রোবটদের দেখানো হয়েছে, তারা টেলিভিশনের ‘ওয়েস্টওয়ার্ল্ড’ সিরিয়ালের অ্যানড্রয়েডগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারলেও, আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মানুষ কে ও কেন৷ প্রদর্শনী চলবে ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে তেসরা সেপ্টেম্বর২০১৭ অবধি৷
প্রতিবেদন: এলিজাবেথ গ্রেনিয়ার/এসি
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী