রোজায় আবারও জমজমাট ঢাকা
বাংলাদেশে রোববার রোজার প্রথম দিন ছিল৷ করোনার প্রভাব কমায় দুই বছর পর এবার মুসলমানরা বিধিনিষেধ ছাড়া রোজা পালন করতে পারছেন৷ ঢাকায় রোজার প্রথম দিনের কিছু স্থিরচিত্র দিয়ে সাজানো এই ছবিঘর৷
নিত্যপণ্যের দাম
ঢাকার অন্যতম প্রধান কাঁচাবাজার কারওয়ান বাজার, হাতিরপুলসহ একাধিক বাজার ঘুরে দেখা যায়, শসা কেজিপ্রতি ৮০-১১০ টাকা, লেবু প্রতি হালি ৪০-৮০ টাকা, বেগুন কেজিপ্রতি ৮০-১১০ টাকা, কাঁচামরিচ ১২০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে৷ শেওড়াপাড়া কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মোঃ জুয়েল জানান, এবার রোজার আগেই দাম যা বাড়ার বেড়েছে৷ দুই-একটি আইটেম ছাড়া অন্যবারের মতো এবার রোজার শুরুতে তেমন দাম বাড়েনি বলে জানান একাধিক বিক্রেতা৷
খেজুরের বাজার স্থিতিশীল
ঢাকার বাদামতলীর খেজুরের পাইকারি বিক্রেতারা জানান, এবার রমজান উপলক্ষ্যে প্রায় ৫০ হাজার টন খেজুর আমদানি করা হয়েছে৷ এছাড়া চাহিদার চেয়ে মজুদ বেশি আছে৷ তাই রোজার আগের চেয়ে দামে খুব একটা হেরফের হয়নি বলে জানান একাধিক বিক্রেতা৷
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা
এবার রোজার মাসে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে৷ মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২০ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা রাখা হবে৷ এছাড়া রোজায় সাপ্তাহিক ছুটি থাকবে দুই দিন (শুক্র ও শনিবার)৷
যানজটে নাকাল ঢাকাবাসী
অতীতে রোজার শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলেও এবার এর ব্যত্যয় ঘটেছে৷ এছাড়া মেট্রোরেলসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলায় ঢাকাবাসীকে যানজটে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে৷ রোববার ঢাকার বিজয়স্মরণি, ফার্মগেট, কলেজগেট, নিউমার্কেট, শাহবাগ, গুলিস্তান ঘুরে দিনভর তীব্র যানজট দেখা গেছে৷
অফিসের সময়সূচি পরিবর্তন
রমজানের প্রথম দিন থেকে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও আধা-স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে সরকার৷ এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদানের সময়ও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে৷
বাজারে ১-২ লিটার তেলের অভাব
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, বোতলজাত ১-২ লিটার তেল নেই বললেই চলে৷ কারণ জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিক্রেতা জানান, ১-২ লিটার তেলের দামের সাথে ৫ লিটারের বোতলের দামের পার্থক্য লিটারপ্রতি ৫ টাকা৷ বোতলের গায়ের রেট সরকার নির্ধারিত রেটের চেয়ে বেশি হওয়ায় বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত জরিমানা করে৷ ‘‘তাই আমরা এই তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছি,’’ বলে জানান ঐ বিক্রেতা৷
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার তৈরি
কারওয়ান বাজারের বড় মসজিদ সংলগ্ন একাধিক হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রাস্তার পাশেই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ইফতার বানানোর প্রস্তুতি চলছে৷ সারাদিন রোজা রাখার পর মানুষকে এমন খাবার খাওয়াবেন কেন জানতে চাইলে এক দোকানের বিক্রয়কর্মী মোঃ সোলেমান মিয়া বলেন, ‘‘কী করমু কন? আমাগো এহানে জায়গার অভাব৷ অল্প একটু জায়গায় হোটেল খুলসি৷ তাই চাইলেও এর চাইতে ভালো অবস্থায় ইফতারি বানাইতে পারি না৷’’
পর্দা টানিয়ে খাওয়া-দাওয়া
রোজার মাসে খাবার হোটেল ও চায়ের দোকানে পর্দা টানানো নতুন প্রথা নয়৷ কেন পর্দা টানানো হয় জানতে চাইলে সুরুজ আলী নামের একজন দোকানদার বলেন, ‘‘এই মাসে আমরা মুসলমানরা অনেকেই রোজা থাকতে পারি না বিভিন্ন কারণে৷ যারা কষ্ট করে রোজা থাকতেসে তাদের যেন সমস্যা না হয়, তাই কাস্টমারেরাই আমগোরে পর্দা লাগায় দিতে কয়৷’’
ভ্রাম্যমাণ আদালতের তদারকি
রোজায় নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম কারসাজি করে যেন বাড়ানো না হয় সেজন্য প্রথম দিন থেকে বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের উপস্থিতি দেখা গেছে৷ এ সময় তারা রমজানে তরমুজ, খেজুর, ছোলা, চিনি, তেল, মসুর ডাল, বেগুন, শসা, লেবু ইত্যাদি পণ্যের দাম না বাড়ানোর জন্য বিক্রেতাদের বারবার সতর্ক করেন৷
শুরু হয়েছে ঈদের কেনাকাটা
ঢাকার নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটসহ একাধিক মার্কেট ঘুরে এবং দোকানদারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, রমজানের প্রথম দিন থেকেই তাদের বেচাকেনা বাড়তে শুরু করে৷ ঈদ-উল-ফিতরকে সামনে রেখে অনেকেই আগেভাগে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলতে চান৷ গত দুই বছর লকডাউনে বেচাবিক্রি তেমন না হলেও এবার ভালো হবে বলে আশা করছেন ব্যবসায়ীরা৷
ইফতার কেনায় ভিড়
ঢাকার কলাবাগান, চকবাজার, ধানমন্ডি, গুলশান, ইস্কাটনের ইফতারের বড় দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর না গড়াতেই তারা বিক্রি শুরু করে দিয়েছেন৷ এত আগে কেন বিক্রি করছেন জানতে চাইলে বিক্রেতারা জানান, ‘‘বিকাল চারটার মধ্যেই বিখ্যাত আইটেমগুলো প্রায় শেষ হয়ে যায়৷ তাছাড়া সেসময় ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়৷ তাই আগেভাগেই বিক্রি শুরু করতে হচ্ছে আমাদের৷’’
পরিবারের সবাই মিলে ইফতার
বছরের অন্য সময়ে ব্যস্ততার কারণে খাবার টেবিলে একসাথে হওয়া না গেলেও রোজার সময় সবার চেষ্টা থাকে পরিবারের সবাই যেন একসঙ্গে ইফতার ও সেহরি করতে পারেন৷
তারাবির নামাজ
রোজার শুরুর দিকে এশার নামাজ শেষে তারাবির নামাজ পড়তে মসজিদগুলোতে অনেক ভিড় দেখা যায়৷ মুসল্লিরা সারা মাস জুড়ে ৮, ১২ মতান্তরে ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ে থাকেন৷ সাধারণত পুরো মাসের তারাবিতে কোরআন শরিফ একবার পড়া শেষ করা হয়ে থাকে৷