1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রবাসীদের আয় কমছে না অবৈধ প্রবাহ বাড়ছে?

সমীর কুমার দে ঢাকা
২ মার্চ ২০২২

করোনা মহামারির শুরু থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ ফুলে ফেঁপে উঠেছিল৷৷ কিন্তু গত ৮ মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমছে৷ সর্বশেষ ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার৷ যা ২১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন৷ এই ধ্বসের কারণ কী?

https://p.dw.com/p/47u6B
Bangladesch Dhaka Arbeiterinnen kehhren aus Saudi-Arabien zurück
ছবি: DW/S. Hossain

প্রবাসীদের আয় কমে গেছে নাকি অবৈধ পথে প্রবাহ বেড়ে গেছে? রেমিট্যান্সের এই ধ্বসকে দুইভাবে বিশ্লেষণ করছেন অর্থনীতিবিদেরা৷ তবে নিশ্চিত করে কেউ এই ধ্বসের কারণ বলতে পারছেন না৷

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানিত ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "করোনার সময়ে প্রবাসীরা তাদের সঞ্চয় দেশে পাঠিয়েছেন৷ ওই সময়ে যারা কাজ হারিয়েছেন তারা তাদের সমস্ত উপার্জন একসঙ্গে পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন৷ বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে৷ করোনার সময়ে দেশ থেকে বিদেশে কোন কর্মী যেতে পারেনি৷ সময় মিলিয়ে রেমিট্যান্স কমেছে৷ পাশাপাশি করোনার পরে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসা কমে অন্যান্য মাধ্যম ব্যবহার হতে পারে৷ কারণ সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার পরও সরকারি রেটের চেয়ে খোলাবাজারে দামের পার্থক্য এখনও তিন থেকে চার টাকা৷ ফলে অনেকেই সেই পথে যাচ্ছেন৷ আরেকটা বিষয় হল, ২০১৯ বা ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির তুলনায় অংকটা কমেনি৷ এখন যেটা কমেছে সেটা ফুলে ফেঁসে ওঠা সময়ের চেয়ে কম৷ ফলে এখনই এটা নিয়ে খুব বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই৷”    

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালানাগাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত জানুয়ারিতে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৭০ কোটি ৪৩ লাখ ডলার৷ আগের মাসের চেয়ে ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ২১ কোটি ডলার কম রেমিট্যান্স এসেছে৷ ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসের মধ্যে রেমিট্যান্স এসেছে জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার, আগস্টে ১৮১ কোটি, সেপ্টেম্বর মাসে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ, অক্টোবরে ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ, নভেম্বর ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ, ডিসেম্বরে ১৬২ কোটি ৯০ লাখ, জানুয়ারিতে ১৭০ কোটি ৪৪ লাখ এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৪৯ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার৷

প্রবাসীদের বৈধ পথে পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনা এতদিন ছিল ২ শতাংশ৷ অর্থাৎ ১০০ টাকা পাঠালে ২ টাকা প্রণোদনা দেওয়া হতো৷ চলতি বছরের শুরুতে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে এ প্রণোদনা বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে৷

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেলের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "করোনা মহামারির মধ্যে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ছিল চমকপ্রদ৷ ওই সময়ের রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে অনেকে বিস্মিত হয়েছিলেন৷ এর কারণ হিসেবে আমার মনে হয়েছে, ওই সময়ে সব ধরনের অর্থ আনুষ্ঠানিক চ্যানেলের মাধ্যমে আসছিল৷ যাতায়াতের বিধিনিষেধ ও বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি কার্যত বন্ধ থাকার কারণে হুন্ডির মতো অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছিল না৷ করোনার বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলো আবার চালু হয়েছে৷ এদিকে করোনার মধ্যে আমাদের যত মানুষের বিদেশে কাজের জন্য যাওয়ার কথা ছিল, ততজন তো যেতে পারেনি৷ ফলে এর একটা প্রভাব তো পড়বে৷ এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে রিজার্ভের উপর তো একটা চাপ পড়বেই৷”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি৷ ২০১৯-২০ অর্থবছর প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন ১ হাজার ৮২০ কোটি ডলার৷ এই অর্থবছর শেষে দুই হাজার কোটিতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা৷ তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে বেশি হবে বলে আশা তাদের৷

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্ভনর আবুল কাশেম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "যখন সারা পৃথিবীতে সবকিছু নিম্নমুখী ছিল, তখন আমাদের রেমিট্যান্স বাড়ছিল৷ তখন আমার সন্দেহ হয়েছিল, খারাপ টাকাগুলো কী এর মধ্যে ঢুকছে কি-না? আবার দেখেন এখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে আসছে, অথচ আমাদের রেমিট্যান্স নিম্নমুখী৷ অবৈধ চ্যানেল তো আছেই, এর বাইরে প্রবাসে কর্মজীবী মানুষের উপার্জনও কমে গেছে৷”

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনো পর্যন্ত অল্প কয়েকটি দেশ থেকেই রেমিট্যান্সের সিংহভাগ আসছে৷ আমাদের দেশের রেমিট্যান্স এখনো মধ্যপ্রাচ্য নির্ভর৷ এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের বাইরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রচুর রেমিট্যান্স আসছে৷ বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে দেশে সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও যুক্তরাজ্য এই পাঁচটি দেশ থেকে সিংহভাগ রেমিট্যান্স এসেছে ৷

বিশ্বের ১৬৮ দেশে প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশি বসবাস করেন৷ বাংলাদেশের প্রবাসীদের সব চেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব৷ বিভিন্ন সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ২২ লাখের মতো বাংলাদেশি অভিবাসী সৌদি আরবে কর্মরত আছেন৷