1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রুশ গ্যাস বন্ধের শঙ্কা, তীব্র শীতের প্রস্তুতি জার্মানির

১০ জুলাই ২০২২

জার্মানিতে রাশিয়ার সরবরাহ করা গ্যাসের পরিমাণ দিনদিন কমে চলেছে৷ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন বন্ধ করা হচ্ছে এবং কবে তা আবার চালু হবে কারো জানা নেই৷

https://p.dw.com/p/4Dv9o
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন বন্ধ করা হচ্ছে এবং কবে তা আবার চালু হবে কারো জানা নেই৷
রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন বন্ধ করা হচ্ছে এবং কবে তা আবার চালু হবে কারো জানা নেই৷ছবি: Sean Gallup/Getty Images

ভোক্তারা সম্প্রতি কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গ্যাস নিয়ে নানা ধরনের চিঠি পাচ্ছেন৷ ঘর উষ্ণ রাখার ব্যবস্থাপনায় থাকা প্রতিষ্ঠান এবং বাড়ির মালিকরাও মাসিক খরচ বাড়াচ্ছেন৷  বার্লিনের একটি প্রতিষ্ঠান গ্যাস বা তেলে ঘর উষ্ণ রাখার খরচ দ্বিগুণ করে দিয়েছে৷

কিন্তু এভাবে কি সংকট মোকাবিলা করা যাবে? জ্বালানির দাম বাড়লেও সেটার প্রভাব বাজারে পড়বে বছরের শেষ দিকে৷

তিন হাজার হাউজিং প্রতিষ্ঠানের সংগঠন জিডিডাব্লিউ জানিয়েছে, আগামী বছরে প্রতিটি বসতবাড়িকে জ্বালানির জন্য তিন হাজার ৮০০ ইউরো বাড়তি খরচ করতে হতে পারে৷

সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা

সাক্সনি রাজ্যের এক হাউজিং সংগঠন সতর্ক করে দিয়েছে, নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষের জন্য জ্বালানি খরচ বৃদ্ধি বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে৷ এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, ‘‘আমরা পরিবারগুলোর জীবন নিয়ে কথা বলছি, রাজনীতিবিদদের এটা বুঝতে হবে৷''

কেবল জ্বালানির দাম বৃদ্ধিই সংকট নয়, মূল্যস্ফীতির ফলে সবকিছুতেই প্রভাব পড়ছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এরই মধ্যে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, বিশ্বের কোনো দেশই দামবৃদ্ধির সংকট এড়াতে পারবে না৷ জানিয়েছেন, ‘‘সবকিছুতে আমরা ভর্তুকি দিতে পারব না৷'' গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই জার্মানদের বিদ্যুৎ বাঁচানোর আহ্বান জানাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী রবার্ট হাবেক৷

জার্মানির সবচেয়ে বড় রিয়েল এস্টেট গ্রুপ ভনোভিয়া গ্যাস দিয়ে উষ্ণ রাখা বাড়িঘরে তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামিয়ে আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে৷ এর ফলে জ্বালানি খরচ আট শতাংশ কমবে বলে আশা তাদের৷ তবে জল গরম করার ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়বে না৷

কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় পরিস্থিতি আরো খারাপ৷ সাক্সনির ছোট শহর ডিপোলডিসভাল্ডে এক হাউজিং সংগঠন তাদের ভাড়াটেদের জানিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতে তারা দিনে কেবল তিনবার গরম জল পাবেন৷ সংগঠনটি বলছে, ‘‘সাধারণ বৈঠকে দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী আমাদের এখন থেকেই শীতের জন্য সঞ্চয় করতে হবে৷''

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে৷ গরম জল পাওয়ার সময় বেঁধে দেয়ার এই ঘোষণাকে অবৈধ বলে আখ্যা দিয়েছেন জার্মান নির্মাণমন্ত্রী ক্লারা গেভিৎস৷ ভাড়াটেদের সংগঠন জানিয়েছে, গরম জলের সরবরাহ ঠিকমতো দিতে না পারলে ভাড়াও কমানো উচিত৷

তবে ডিপোলডিসভাল্ডের হাউজিং সংগঠন সমালোচনায় পিছু হটেনি৷ তারা বলেছে, তাদের ভাড়াটিয়ারা বিষয়টি ঠিকভাবে বুঝতে পেরেছেন৷ প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের এক সদস্য বার্তাসংস্থা ডিপিএকে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিতে পেরে তারা বরং আনন্দিত৷ তিনি বলেন, ‘‘বার্লিনের রাজনীতিবিদদের চেয়েও মানুষ এখন এ ব্যাপারে বেশি এগিয়ে গেছে৷''

বিতর্ক সত্ত্বেও আণবিক শক্তির পথে ফ্রান্স

নর্ড স্ট্রিমের দুরবস্থা

অর্থ মন্ত্রণালয়ে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কয়েক সপ্তাহ আগেই বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ শরৎকালেও ঘর উষ্ণ রাখার ব্যবস্থা অনেক কম ব্যবহার করা হবে৷ শুক্রবার জার্মান রাজ্যগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী পার্লামেন্ট কক্ষ বুন্দেসরাটে মন্ত্রী হাবেক জানিয়েছেন, রাজ্য পর্যায়ের মন্ত্রণালয় এবং অন্য সরকারি সংস্থাগুলোতেও এ ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে৷

দীর্ঘদিন ধরেই রুশ গ্যাসের উপর জার্মানির নির্ভরতার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়নি৷ এই গ্যাসের বেশিরভাগই নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে সরবরাহ হয়ে থাকে৷ এই পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে বাল্টিক সাগরের নীচ দিয়ে সরাসরি জার্মানিতে গ্যাস আসে৷

২০২১ সালেজার্মানিতে গ্যাসের ৫৫ শতাংশই ছিল রাশিয়া থেকে আসা৷ অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে এখন সে হার ৩৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে৷

রাশিয়া হঠাৎ করেই গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে  দিয়েছে৷ কারণ হিসাবে মস্কো বলছে, জার্মান প্রতিষ্ঠান সিমেন্সের তৈরি করা একটি গ্যাস টারবাইন মেরামতের জন্য ক্যানাডায় আটকে আছে৷ কিন্তু রাশিয়ার উপর দেয়া নিষেধাজ্ঞার ফলে সেটিকে ফেরত আনা যাচ্ছে না৷

সোমবার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন পুরো বন্ধ করে দেয়া হবে৷ কিন্তু স্বাভাবিক অবস্থায় ১০ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে সেটি আবার চালু হলেও এখন কি তা হবে? গ্যাসকে রাজনীতির ঘুঁটি হিসাবে ব্যবহার করার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাশিয়া বলেছে, ‘গ্য়াস টারবাইন মেরামতের পর ফেরত এলেই পাইপলাইনে সরবরাহ হওয়া গ্যাসের পরিমাণ বাড়বে৷'

গ্যাসবিহীন শীতের শঙ্কা

এমন আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছে না জার্মান সরকার৷ সবচেয়ে ভালোর আশা করলেও, সবচেয়ে খারাপের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে৷ জ্বালানি সংকট এবং দামবৃদ্ধি মোকাবিলায় এরই মধ্য়ে নানা ধরনের আইন পাস করা হচ্ছে৷

জ্বালানি নিরাপত্তা আইন অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে আরো বেশি কয়লা-ভিত্তিক উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করা যাবে, যাতে ঘর গরমের কাজে আরো বেশি গ্যাস ব্যবহার করা যায়৷ এতদিন পরিবেশের কথা চিন্তা করে জার্মানিতে কয়লার ব্যবহার কমানো হচ্ছিল৷

তীব্র অর্থনৈতিক সংকটের পথে জার্মানি?

সেবাখাত সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়মিতই বিপত্তিতে পড়ছে৷ বৃহত্তম বিরোধী দল সিডিইউ এর নেতা ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস বলেছেন, ‘‘ফেডারেল রিপাবলিক অফ জার্মানির প্রতিষ্ঠার পর থেকে সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক সংকটের দিকে যাচ্ছে আমাদের দেশ৷'' তিনি বলেন, দেশটিতে গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে এবং কয়েক দশকের মধ্যে এই প্রথম রপ্তানির চেয়ে বেশি আমদানি করছে জার্মানি৷ প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় জার্মান প্রতিষ্ঠানগুলো আন্তর্জাতিক অঙ্গনে হুমকির মুখে পড়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি৷

রাশিয়ার সরবরাহ করা গ্যাস পুরোপুরি বন্ধ হলে ঠিক কী ঘটতে পারে, এ নিয়ে জুনে এক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রোগনোস৷ সেখানে দেখা গেছে, চার সপ্তাহ পরই সবার জন্য গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না৷ আইন অনুযায়ী, বসতবাড়ি, সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান এবং হিটিং সরবরাহকারীদের গ্যাস দিতেই হবে৷ ফলে গ্যাস বন্ধের প্রথম প্রভাব পড়বে শিল্পপ্রতিষ্ঠানের উপর৷ ইস্পাত, অপরিশোধিত লোহা, রাসায়নিক এবং কাচের কারখানায় উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসবে৷

সমগ্র অর্থনীতিই এর ফলে সংকটে পড়বে৷ প্রোগনোস ধারণা করেছে, রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হলে বছরের শেষে জার্মানির অর্থনীতি ১২ দশমিক সাত শতাংশ সংকুচিত হতে পারে৷

সাবিনে কিনকার্ৎস/এডিকে