1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাত জাগতে কি তৈরি কলকাতা?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৩ জানুয়ারি ২০২০

২৬ জানুয়ারি থেকে রাতভর জেগে থাকবে মুম্বাই৷ ভারতের বাণিজ্যনগরীর প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে প্রশ্ন উঠছে কলকাতা কি একই পথ নিতে পারে না? 

https://p.dw.com/p/3WimS
Indien Luxuxszug Maharajas Express
ছবি: Getty Images/AFP/Deshakalyan Chowdhury

মহারাষ্ট্রের পর্যটনমন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে মুম্বাই রাতেও জেগে থাকবে৷ দোকান, রেস্তোরাঁ, পানশালা ও শপিং মল ২৪ ঘন্টার জন্য খোলা থাকবে কোনো কোনো এলাকায়৷ পরীক্ষামূলকভাবে প্রজাতন্ত্র দিবস থেকে যেসব এলাকায় মুম্বাই জেগে থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার৷

সাধারণভাবে রাত গড়ালেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়৷ পানশালা বা নাইটক্লাব খোলা থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছে রাত বিশ্রামের সময়, দিনটা কাজের৷ গোটা ভারতে এমনটাই নিয়ম৷ স্কুল, কলেজ থেকে অফিস কাছারিতে দিনভর ব্যস্ত থাকে মানুষজন৷ রাত গড়ালে রেস্তোরাঁ থেকে শপিং মল বন্ধ হয়ে যায়৷ প্রাণচঞ্চল শহর ঘুমিয়ে পড়ে৷ পথচারীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় সরকারি থেকে বেসরকারি যানবাহনের পরিষেবাও তলানিতে ঠেকে৷ মহারাষ্ট্র সরকারের এই সিদ্ধান্তকে অভিনব বলছেন অনেকে৷    

রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

মুম্বাইয়ের এই পদক্ষেপ ভাবিয়ে তুলেছে কলকাতাকে৷ নিশিযাপন বলতে যা বোঝায়, সেই অর্থে কলকাতায় তা নেই বললেই চলে৷ নাইটক্লাব, যৌনপল্লীর সঙ্গে হাসপাতাল বা দমকলের মতো জরুরি পরিষেবা রাতে সক্রিয় থাকে৷ ইদানীং কলকাতায় অসংখ্য কল সেন্টার গড়ে ওঠায় সেই অফিসে কর্মীদের তৎপরতা থাকে৷ কিন্তু মোটের ওপর রাত ১০টা থেকে ১১টার পর কলকাতা ঘুমিয়ে পড়ে৷ মধ্যরাতের আগে শহরতলির শেষ ট্রেন চলে যাওয়ার পর শহর আরো ফাঁকা হয়ে যায়৷

কলকাতায় জরুরি পরিষেবার সঙ্গে রেস্তোরাঁ, শপিং মল খোলা থাকলে কেমন হয়? এমন প্রস্তাবে সাহিত্যিক রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লন্ডন জেগে থাকে৷ নিউ ইয়র্ক জেগে থাকে৷ লাসভেগাসে রাতটাই দিনের মতো৷ সুতরাং জেগে থাকার ভাবনা ভালো৷ ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য আছে৷ তবে প্রাচীন ভারত জেগে থাকত৷ উপনিষদে জাগরণের কথা আছে৷''

কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘মুম্বাই যা করেছে তার কাছাকাছি ব্যবস্থা আমরা আগেই করে দিয়েছি৷ কলকাতা পৌরসভার একাধিক পরিষেবা রাতভর চালু থাকে৷ বাসও এখন রাতভর চলছে৷''

সন্ধি মুখোপাধ্যায়

মুম্বাই ভারতের সবচেয়ে বড় মহানগরী, যা বাণিজ্যনগরী হিসেবেও পরিচিত৷  দেশের জিডিপির পাঁচ শতাংশ এখান থেকে উৎপাদিত হয়৷ এই অর্থনীতির নিরিখে কলকাতা অনেক পেছনে৷ তবু কলকাতায় এখন রাতভর বাস চলে৷ সরকারি পরিবহন সংস্থায় নয়টি রুটে সারারাত বাস চলে৷ এই বাসে যাত্রীর সংখ্যা খুব বেশি থাকে না৷ এ থেকে বোঝা যায়, কলকাতার রাতের জীবন এখনও ততটা পরিণত না৷ কলকাতা মেট্রো রেলের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইন্দ্রানী বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘‘রাতভর নিরাপদ পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়৷'' অর্থাৎ পরিষেবা চালু রাখলেই হবে না৷পরিবহনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরি৷ নইলে সাধারণ মানুষ বিশেষত মহিলারা কিসের ভরসায় রাস্তায় বেরোবেন! এই প্রশ্ন তুলেছেন প্রাক্তন পুলিশ কর্তা সন্ধি মুখোপাধ্যায়৷ তিনি বলেন, ‘‘রাতে শহর ফাঁকা হয়ে যায়, সেখানে কোনো মহিলার পক্ষে স্বচ্ছন্দে ঘুরে বেড়ানো এখনই মুশকিল৷ পুলিশ থাকলেও ভরসার জায়গা তৈরি করতে সময় লাগবে৷ কলকাতায় দিনে আমরা যে মানুষ দেখি, তার একটা বড় অংশ শহরের বাইরে থেকে আসে৷ ফলে তারা ফিরে গেলে শহর অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়৷ রাতে রেস্তোরাঁ, মল খোলা রাখার থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি৷ অন্ধকারে অপরাধ চক্রও সক্রিয় হয়ে উঠবে৷''

না ঘুমোলেই জেগে থাকার সঠিক মর্ম বোঝা যায়, এমনটা মনে করেন না রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়৷ বৌদ্ধিক জাগরণের উপর জোর দিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘বাঙালি তার নবজাগরণের ইতিহাসকে পিছনে ফেলে এসেছে৷ তারাই ভারতকে জাগিয়েছিল৷ শাহরুখ খান আর কলকাতার জেগে থাকা এক নয়৷ বাঙালি মধ্যবিত্ত এখন ঘুমিয়ে পড়ে৷ মধ্যরাতে বাতি আবার জ্বালাতে হবে৷ জেগে উঠতে হবে৷''