1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজারবাগ পীরের বিরুদ্ধে ‘জঙ্গি তৎপরতার' অভিযোগ

৭ ডিসেম্বর ২০২১

‘রাজারবাগের পীর নামে পরিচিত দিল্লুর রহমান ভিন্ন ধর্মের মানুষ এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের কতল (হত্যা) করার নির্দেশ দিয়েছেন।  বেশ কয়েকটি জেলার নাম পরিবর্তনেরও চিন্তা আছে তার।

https://p.dw.com/p/43uy1
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/Z.H. Chowdhury

হাইকোর্টের নির্দেশে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিশেন বিভাগ যে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে, তাতে এইসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনটি হাইকোর্টের বিচারপতি এম এনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে রবিবার উপস্থাপন করা হয়। ডয়চে ভেলের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের একটি কপি আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিন্ন মতাবলম্বী ও ভিন্ন ধর্মের মানুষকে ‘মালাউন’ হিসেবে উল্লেখ করে তাদের হত্যা করা ‘ঈমানি দায়িত্ব’ বলে ফতোয়া দিয়েছেন রাজারবাগের পীর। তিনি তাদের কতল করার আদেশ দিয়েছেন, যা বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবি এবং আনসার আল ইসলামের মানুষ হত্যা করার ফতোয়ার অনুরূপ।  এটি ইসলামের নামে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের মতো একই প্রক্রিয়ায় বিরোধী এবং অন্য ধর্মের মানুষকে হত্যা করা ও ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করার কৌশল। তাদের এই ধরনের বক্তব্য মানুষকে জঙ্গিবাদের দিকে ধাবিত করবে,অসহিষ্ণু করবে এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনা নষ্ট করতে ভ‚মিকা রাখবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷

প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়, রাজারবাগের পীর এবং তার অনুসারীরা বাল্য বিবাহের পক্ষেও ফতোয়া দিয়েছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে অভিমত দেয়া হয়েছে যে, তারা এখনো জঙ্গি সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত না হলেও তাদের মাধ্যমে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। তাদের সাথে প্রচারণার কারণে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে কেউ কেউ লোন উলফ ( জঙ্গিদের একক হামলার কৌশল) হামলা করতে পারে।

রাজারবাগ পীরের সংগঠনের নাম ‘উলামা আঞ্জুমান আল বাইয়্যিনাত’। রাজাবাগ দরবারই এই সংগঠনের প্রধান আস্তানা।  তাদের নিয়ন্ত্রণে ‘দৈনিক আল ইহসান’ ও ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত' নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়। প্রধানত এই দুইটি পত্রিকার  মাধ্যমেই তারা প্রচার-প্রচারণা চালায়। এই দুইটি পত্রিকার অনলাইন সংস্করণও আছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, তারা ইসলাম ধর্মের নামে নানা অপব্যাখ্যা প্রচার করে। সারা দেশে তারা অনেক খানকা, মসজিদ ও মাদ্রাসা স্থাপন করে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। তদন্তে মোট ৭৩টি মাদ্রাসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তবে এর বাইরে অনেক জায়গায়ই মাদ্রাসা ও মসজিদের সাইনবোর্ড টানিয়ে তারা জমি দখল করেছে।

কক্সবাজারের চকোরিয়ায় জমি দখল করে জঙ্গি আস্তানা ও ট্রেনিং সেন্টার গঠনের অভিযোগও আছে তাদের বিরুদ্ধে।

দিল্লুর রহমান ও তার অনুসারীরা শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠা করতে চায় এটা করতে গিয়ে তারা জাতীয় সংগীত অবমাননা, বাঙালি সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ করে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা তথ্য থেকে জানা যায়৷

রাজারবাগ পীরের কাছের লোক এবং ‘দৈনিক আল ইহসান? ও ‘মাসিক আল বাইয়্যিনাত'-এর সম্পাদক মাহবুবুল আলম তদন্তকারীদের কাছে দাবি করেছেন , সারা দেশে রাজারবাগ পীরের এক কোটি মুরিদ (অনুসারী) আছেন। তার দাবি, ‘‘পীর দিল্লুর রহমানের জ্বিন এবং রেজালুল গায়েব( অদৃশ্য মানুষ বা আত্মা) মুরিদের সংখ্যা আরো বেশি।’’

সাত হাজার একর জমি দখল ও অসংখ্য মিথ্যা মামলার অভিযোগ

রাজারবাগের পীর বিভিন্ন জেলার নাম পরিবর্তন করে ইসলামিকরনের কথাও তার পত্রিকার মাধ্যমে প্রচার করেছেন। তিনি গোপালগঞ্জের নাম গোলাপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জের নাম নূরানীগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও-এর নাম নূরগাঁও, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাম আমানবাড়িয়াসহ আরো কিছু জেলা এবং এলাকার নাম পরিবর্তনের পক্ষে দীর্ঘদিন ধরে প্রচার চালিয়ে আসছেন বলেও জানা গেছে।

এছাড়া বিভিন্ন ব্যক্তির জমি দখল এবং মিথ্যা মামলায় তাদের ফাঁসানোর বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে হাইকোর্টে রাজারবাগ পীরের বিরুদ্ধে একাধিক রিট হয়েছে। সেই সব রিটের প্রেক্ষিতেই আদালত মোট তিনটি সংস্থাকে রাজারবাগ পীরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেয়। এরমধ্যে সিআইডির প্রতিবেদনে সাত হাজার একর জমি দখল এবং মিথ্যা মামলার প্রমাণ পাওয়া যায়। দুদকের তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আর কাউন্টার টেররিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ তাদের প্রতিবেদন দাখিল করেছে রবিবার।

রিটকারী আইনজীবীদের একজন এমদাদুল হক বশির জানান," হাইকোর্ট বলেছেন যারা ভুক্তভোগী, তারা এখন রাজার বাগ পীরের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেন। আর তার বিদেশে যাওয়ার ওপরেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে পীর এবং তার সহযোগীদের নজরদারিতে রাখতে বলেছেন। কারণ, তাদের তৎপরতা জঙ্গিদের মতো।”

অন্যদিকে রাজারবাগের পীরের পক্ষের আইনজীবীদের একজন এম কে রহমান বলেন, ‘আদালত একতরফা কোনো আদেশ দেননি। বিভিন্ন সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত করিয়ে তারপর আদেশ দিয়েছেন। এখন ভুক্তভোগী কেউ যদি মামলা করেন, সেটা যদি কগনিজেবল অফেন্স হয়, তাহলে রাজারবাগ পীর গ্রেপ্তার হতে পারেন। এখানে ওয়ারেন্টের কোনো প্রয়োজন হবে না।”

কাউন্টার টেরোরিজম ও ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান এবং ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের ওপর নজদারি করা হচ্ছে। আমরা তাদের সব কিছুর ওপরই নজর রাখছি।”

জঙ্গি তৎপরতার ব্যাপারে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলা বা গ্রেপ্তার করা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বিষয়টি আদালত দেখছেন। তাদের নির্দেশনায় আমরা কাজ করছি। আদালত যে নির্দেশ দেবেন. তা আমরা পালন করবো। মামলা বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দিলে তাই করবো।’’

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান