1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রাজশাহীতে সুবিধাজনক অবস্থায় আওয়ামী লীগ

সমীর কুমার দে২৩ ডিসেম্বর ২০০৮

বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে কোন্দলের কারণে এবার বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে রাজশাহীর আসনগুলো৷ রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে এখন পর্যন্ত অন্তত দু'টি আসনে বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বেশ খানিকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে৷

https://p.dw.com/p/GLyR
ছবি: AP

তবে একটি আসনে এগিয়ে আছে বিএনপির প্রার্থী৷ অপর আসন তিনটিতে তুমুল লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে৷

২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে রাজশাহীতে আসন ছিল ৫টি৷ এর সব ক'টিতেই জিতেছিল বিএনপির প্রার্থীরা৷ এবার রাজশাহীতে জামায়াত একটি আসন চেয়েছিল বিএনপির কাছে৷ কিন্তু তাদের কোন আসন না দেওয়ায় রজশাহী মহানগর জামায়াতের আমীর আতাউর রহমান একটি আসনে প্রার্থী হয়েছেন৷ ওই আসনে বিএনপি জামায়াতের উন্মুক্ত লড়াই হচ্ছে৷ এতে ক্ষুব্ধ জামায়াত পুরো রাজশাহীতেই বিএনপির পক্ষে কাজ না করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে ঘোষনা করেছে৷ সম্পর্কেও দেখা দিয়েছে অবনতি৷ ফলে বিএনপি জামায়াতের বিরোধের সুবিধা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ৷

রাজশাহী-১ তানোর-গোদাগাড়ী

আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী এগিয়ে আছেন প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাই সাবেক আইজিপি এম এনামুল হকের চেয়ে৷ জামায়াত ব্যারিস্টার আমিনুল হকের কাছে গোদাগাড়ী পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে তাদের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মজিবর রহমানের জন্য সমর্থন চেয়েছিলো৷ কিন্তু ব্যারিস্টার আমিনুল হক তা দেননি৷ আমিনুল হকের ঘনিষ্ঠ আনারুল হক বিএনপি থেকে নির্বাচন করে জিতেছেন৷ সেই ক্ষোভ প্রশমিত করতে এবারের নির্বাচনে জামায়াত ওই আসনটি চেয়েছিলো৷ সেটা তারা পায়নি৷
ফলে জামায়াত আন্তরিকভাবে চাইছে না আমিনুল হকের ভাই এনামুল হক নির্বাচনে জিতুক৷ কারণ এই আসন থেকে যদি এবার এনামুল নির্বাচিত হন তাহলে পরবর্তীতে জামায়াতের এখানে রাজনীতি করার কিছু থাকবে না৷ এছাড়া আমিনুল হকের নানা কৃতকর্ম ও বিতর্কিত ভুমিকা তার ভাইকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে৷ এই পরিবারটির বলয় থেকে এবার ভোটাররা বেরিয়ে আসতে চান৷ এই পরিস্থিতি আরো উসকে দিয়েছে এনামুল হক দলের নেতা-কর্মীদের বাইরে রেখে ব্যারিস্টার আমিনুলের বিশ্বস্ত বিতর্কিত গোদাগাড়ী থানার সাবেক ওসি সালাহউদ্দিনকে সঙ্গে রাখায়৷ এছাড়া এই আসনে ভোটার বাড়ায়, এবার বেড়েছে আওয়ামী লীগের ভোটও৷ তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থীই হয়ত বেরিয়ে আসবে, মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷

রাজশাহী-২ মহানগরীর ৪ থানা

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের খায়রুজ্জামান লিটনের বিজয় এখানে মহাজোট প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশার পক্ষে ভুমিকা রাখবে৷ বিএনপির মিজানুর রহমান মিনু বিরোধী একটি সেন্টিমেন্ট গড়ে ওঠে ২০০২ সালের সিটি নির্বাচনে বাদশার নেতৃত্বেই৷ আওয়ামী লীগের ভোট এই আসনে উত্তরোত্তর বেড়েছে৷ এই বৃদ্ধির সর্বশেষ নজির গত সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতার বিজয়৷

মিনু এবার বেকায়দায় রয়েছে বেশ কয়েকটি কারণে৷ প্রথমত এখানে নগর বিএনপির কমিটি নেই৷ মিনুর পক্ষে যারা কাজ করতেন তাদের নেতৃত্ব দিতেন মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল৷ কিন্তু গত সিটি নির্বাচনে বুলবুলকে মিনু জেল থেকে সমর্থন দেননি৷ ফলে শতভাগ সমর্থন মিনু পাচ্ছেন না৷ দ্বিতীয়তঃ কবীর হোসেনের অনুসারীরা মনে করেন, মিনুর জন্যই কবীর হোসেন সদর আসনে প্রার্থী হতে পারেননি এবং তার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই নবগঠিত রাজশাহী-৩ আসনে কবীর বিএনপির প্রার্থী হবার পরেও মিনুর ইন্ধনে জামায়াত দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে৷ ফলে কবীরের অনুসারী এবং তাদের কব্জায় থাকা মাইগ্রেটেড পরিবারের ভোটগুলো এবার মিনু নাও পেতে পারেন৷ তৃতীয়তঃ বিভিন্ন এলাকায় বিএনপির তৃণমূল কর্মীরা ৫ বছরে লুটপাটের মাধ্যমে যে সম্পদের পাহাড় গড়েছে তা সাধারণ ভোটাররা ভালোভাবে মেনে নেননি৷ এ অবস্থায় তারাই যখন আবার মিনুর পক্ষে ভোট চাইছেন তখন তা হিতে বিপরীতই হচ্ছে৷ চতুর্থতঃ রাজশাহী-৩ আসনে জামায়াত নগর আমীর আতাউর রহমান নিজে প্রার্থী হওয়ায় জামায়াত পুরোপুরি ওই আসনে কাজ করছে৷ রাজশাহী-২ আসনে মিনু জামায়াতকেও পাশে পাচ্ছেন না৷ ফলে শেষ পর্যন্ত এখানে লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি৷

রাজশাহী-৩ পবা-মোহনপুর

নবগঠিত এই আসনে বিএনপি প্রার্থী কবীর হোসেনের বিরুদ্ধে রাজশাহী মহানগর জামায়াতের আমীর আতাউর রহমান প্রার্থী হয়েছেন৷ কবীর হোসেন লড়ছেন ধানের শীষ আর আতাউর রহমান লড়ছেন দাড়ি পাল্লা নিয়ে৷ এই আসনটি নিয়েই মুলত বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দ্বন্দের সৃষ্টি হয়েছে৷ বিএনপির প্রার্থীকে জামায়াত কোন ভাবেই ছাড় দিতে নারাজ৷ আর জামায়াত বিরোধী সেন্টিমেন্ট নিয়েই রাজনীতি করেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী কবির হোসেন৷ দুই প্রার্থীর ঠেলাঠেলির ফলে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেরাজউদ্দিন মোল্লা৷ ত্যাগী নেতা হিসেবে এলাকাতে তার অবস্থান ভালো৷

রাজশাহী-৪ বাগমারা

শীর্ষ জঙ্গি নেতা বাংলাভাইয়ের উত্থান রাজশাহীর এই বাগমারা থেকেই৷ এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও জামায়াতেরও ভোটব্যাংক রয়েছে৷ কিছুদিন আগে জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী সরদার আমজাদ হোসেন আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন৷ কিন্তু তাকে মহাঐক্যজোট থেকে মনোনয়ন না দিয়ে আওয়ামী লীগ থেকে এনা গ্রুপের পরিচালক এনামুল হককে মনোনয়ন দিয়েছে৷ আর সতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন সরদার আমজাদ৷ জামায়াত বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করলেও আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থীর ভোট কাটাকাটিতে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী আবদুল গফুর৷ এছাড়া এই আসনে বিএনপির সাবেক এমপি আবু হেনাকে মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি৷ ত্যাগী নেতা হিসেবে গফুরেরও এলাকায় অবস্থান রয়েছে৷

রাজশাহী-৫ পুঠিয়া-দুর্গাপুর

বিএনপি প্রার্থী নজরুল ইসলাম মন্ডলের পরিবারের বিরুদ্ধে এলাকাকে আশির দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত জিম্মি করে রাখার অভিযোগ আছে৷ সেই সঙ্গে সাবেক এমপি নাদিম মোস্তফার বাহিনীও এখন নজরুলের সঙ্গে যোগ দেয়ায় বিএনপির মধ্যেই তাকে নিয়ে বিতর্ক উঠেছে৷ ফলে এ অঞ্চলে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন নেতা আওয়াল কাজীর ছেলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কাজী আবদুল ওয়াদুদ দারা রয়েছেন সুবিধাজনক অবস্থায়৷ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি তাজুল ইসলাম ফারুকের মনোনয়ন না পাওয়া নিয়ে দলের একাংশে যে ক্ষোভ ছিলো তাও অনেকটা প্রশমিত হওয়ায় এখন স্বস্তিতে রয়েছেন তিনি৷ ফলে এই আসনে তুমুল লড়াই হবে বলে ভোটাররা মনে করছেন৷

রাজশাহী-৬ চারঘাট-বাঘা

এই আসনে জেলা বিএনপি সভাপতি আজিজুর রহমানের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন শিল্পপতি শাহরিয়ার আলম৷ বিএনপির অতীত কর্মকাণ্ডে এই এলাকার ভোটাররা পরিবর্তন চাইছেন৷ সে কারণে শাহরিয়ার কিছুটা এগিয়ে থাকলেও এই আসনে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে৷