1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌‘‌রথযাত্রা’র ভয়ে বাংলা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
২৬ নভেম্বর ২০১৮

২০১৯ লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এবার সর্বশক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঝাঁপাচ্ছে বিজেপি৷ ডিসেম্বরে শুরু হচ্ছে রথযাত্রা৷ সতর্ক রাজ্য প্রশাসন৷

https://p.dw.com/p/38ud7
Bangladesch Manipuri beim Rath Yatra Festival
ছবি: DW/M. Mostafigur Rahman

৭ ডিসেম্বর থেকে পশ্চিমবঙ্গে প্রচার অভিযান শুরু করছে বিজেপি৷ পৌরাণিক রথের সাজে সাজানো তিনটি ভলভো বাস ঘুরবেপশ্চিমবঙ্গের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রে৷ হতমান কংগ্রেস এবং হৃতবল বামপন্থিদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গের ওই ৪২ আসনের অন্তত ২২টি জেতার আশা করছে৷ এবং অসম, ত্রিপুরা হাতে আসার পর বিজেপি নেতৃত্ব যে এবার পশ্চিমবঙ্গ দখলে নেওয়ার জন্য তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করছে, সেটা ওই রথযাত্রার কর্মসূচিতেই স্পষ্ট৷ একটি রথ যাত্রা শুরু করবে সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবঙ্গের সবথেকে রাজনৈতিক সন্ত্রাসপ্রবণ জেলা বীরভূম থেকে৷ এই যাত্রা শুরু করাবেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি এবং এই মুহূর্তে নরেন্দ্র মোদীর পরেই দলের সবথেকে হেভিওয়েট নেতা অমিত শাহ৷ দ্বিতীয় রথযাত্রা শুরু করাবেন উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, রাজ্যের দক্ষিণ প্রান্তের সাগরদ্বীপ থেকে৷ আর তৃতীয় একটি রথযাত্রা শুরু হবে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার থেকে, যেখানে উপস্থিত থাকবেন অসমের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল৷ আর তিনটি রথযাত্রা যেখানে মিলিত হবে, কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৩ জানুয়ারির সেই সমাপ্তি সমাবেশে হাজির থাকবেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী৷

‘এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত বিরোধী কণ্ঠস্বর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত’

তিনটি রথেরই আলাদা বক্তব্য থাকবে৷ বীরভূমের রথ পশ্চিমবঙ্গে শাসকদল র রাজনৈতিক সন্ত্রাসের প্রতিবাদে, সাগরদ্বীপের রথ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংখ্যালঘু তোষণ নীতির প্রতিবাদে এবং কোচবিহারের রথযাত্রা উত্তর-পূর্ব ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশের প্রতিবাদে৷ তিনটি রথেরই যাত্রাপথে ছোট ছোট সমাবেশের পরিকল্পনা আছে, যেখানে এই বিরোধিতার বক্তব্যই আরো নির্দিষ্টভাবে পেশ করবেন স্থানীয় বিজেপি নেতা থেকে শুরু করে অন্য বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা৷ সম্ভবত সেই বক্তব্যের কারণেই এটাকে ‘‌রথযাত্রা'‌ বলে চিহ্নিত করায় আপত্তি জানালেন বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বললেন, এটার রথযাত্রা নাম দিয়েছে সংবাদমাধ্যম৷ কিন্তু ওঁরা এটাকে বলছেন ‘‌গণতন্ত্র বাঁচাও যাত্রা'‌৷ শমীকবাবুর কথায়, ‘‌‘‌এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত বিরোধী কণ্ঠস্বর রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত৷ পশ্চিমবঙ্গে প্রকৃত অর্থে আইনের শাসন প্রশ্নচিহ্নের মুখে৷ সরকার বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে, অসাংবিধানিক বিলও পাস করাচ্ছে৷ পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩৭%‌ আসনে তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করেছে৷ জয়ী প্রার্থীদের বোর্ড গঠন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে৷ সমস্ত স্বায়ত্বশাসিত সংস্থাগুলোকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে বর্তমান এই সরকার৷ স্বাভাবিকভাবেই, যেখানে গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্ত, বিরোধিতার অধিকার যেখানে লঙ্ঘিত হয়েছে, সেখানে আমার মনে হয়, পশ্চিমবঙ্গের মানুষ এই মুহূর্তে প্রতিবাদ করতে চাইছেন৷‌'‌'‌ 

‘কেউ এই যাত্রায় বাধা দেবে না, কারণ দিলে ওদেরই ক্ষতি’

পশ্চিমবঙ্গ সরকার সঙ্গত কারণেই বিজেপির এই কর্মসূচি নিয়ে উদ্বিগ্ন৷ তার একটা বড় কারণ, ২০১৪ সালে সংসদীয় নির্বাচনের পর থেকেই এই রাজ্যে বিজেপির সমর্থন ক্রমশ বাড়ছে৷ পরবর্তীতে অসম এবং ত্রিপুরা বিধানসভা ভোটে বিজেপির জয়ও পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব ফেলেছে৷ কাজেই রাজ্যের তিন দিক থেকে তিনটি রথযাত্রার পিছনে সাধারণ মানুষের একাংশের যে সমর্থন থাকবে, সেটা সরকার আঁচ করছে৷ এ কারণে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা, মন্ত্রীরা পথে নেমে এই রথযাত্রার বিরোধিতা করার কথা বললেও, সরকারের মনোভাব আপাতত এটাকে নির্বিবাদে হতে দেওয়া৷ কিন্তু রাজ্যের অন্য দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং বামফ্রন্ট যে রথের রাস্তা আটকাবার কথা বলছে, তাতে হাঙ্গামা হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে৷বিজেপি সেই সমস্যা সম্পর্কে কতটা সচেতন?‌দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বললেন, তাঁর ধারণা কোনো সমস্যাই হবে না৷ কারণ, এটা একটা রাজনৈতিক তৎপরতা৷ নির্বাচনের আগে জনসংযোগের জন্য এরকম আন্দোলন হয়৷ এবং দিলীপ ঘোষ জানাচ্ছেন, ‘‌‘‌সরকারের সঙ্গে রীতিমতো কথা বলে, অনুমতি নিয়ে (‌এটা)‌ করছি৷ সরকারের দায়িত্ব শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখা, সুরক্ষা দেওয়া৷ সরকার যদি না পারে, তখন আমাদের ভাবতে হবে৷'‌'‌

ফলে, আপাতত ৭ ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির ২৩ পর্যন্ত বিজেপির এই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে একদিকে যেমন উত্তেজনা আছে, তেমনি আশঙ্কাও থেকে যাচ্ছে৷ তবে একটা গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ তিনি বলেছেন, কেউ এই যাত্রায় বাধা দেবে না, কারণ দিলে ওদেরই ক্ষতি৷ মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিওসম্ভবত একই কথা ভাবছেন যে, বাধা দিয়ে খামোকা বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচির গুরুত্ব বাড়িয়ে দেওয়ার মানে হয় না! 

     

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান