1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যৌনরোগ গোপন রাখাই সমস্যা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা২৯ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশে যৌনরোগী কত, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই৷ একমাত্র এইডস বা এইচআইভি আক্রান্তদের ব্যাপারে একটি সরকারি পরিসংখ্যান আছে৷ এই পরিসংখ্যান না থাকার অন্যতম কারণ গোপনীয়তা৷ যৌনরোগকে আমাদের সমাজ যে আজও নিন্দার চোখে দেখে!

https://p.dw.com/p/1IKv3
বাংলাদেশের এক যৌনকর্মী
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages

[No title]

আমাদের সমাজে যৌন রোগে আক্রান্তদের ‘খারাপ চোখে' দেখা হয়৷ তাই যারা এমন রোগে আক্রান্ত হন, তারা নিজেরাও রোগটা প্রকাশ করেন না৷ অনেক সময় চিকিৎসাই করান না৷ আবার কোনো কোনো চিকিৎসকও রোগিদের অপ্রয়োজনীয় নানা বিব্রতকর প্রশ্ন করেন, ফলে বিষয়টি নিয়ে রাখঢাক থেকেই যায়৷

রাজবাড়ি জেলার দৌলতদিয়া এলাকায় রয়েছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লি৷ সেখানে সরকারি হিসেবে এ মুহূর্তে ১,৫০০ জন যৌনকর্মী আছেন৷ তাদের চিবিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবার জন্য সরকারি কোনো উদ্যোগ নেই৷ তবে বেসরকারি উদ্যোগে কয়েকটি এনজিও কাজ করে এদের নিয়ে৷ ‘পিয়াকট' নামের এরকমই একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার শেখ রাজিব ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘যৌনকর্মীদের একটি অংশ সিফিলিস এবং গনোরিয়ার মতো যৌন রোগে আক্রান্ত হন৷ তবে এইডস বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড এখনো নাই৷ এমনকি সরকারি উদ্যোগে এটা পরীক্ষা করার কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি৷ যা কিছু পরীক্ষা হয়েছে, সবই বেসরকারিভাবে৷''

যৌনকর্মীরা তাই শুধুমাত্র এনজিও-র মাধ্যমে যৌনরোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের কিছু চিকিৎসা পেয়ে থাকেন৷ তাদের কিছু অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হয় নিয়মিত৷ অবশ্য তাদের যৌনরোগের বিরুদ্ধে সচেতন করার কাজেই এনজিওগুলো গুরুত্ব দেয়৷ এর মধ্যে অন্যতম হলো ক্লায়েন্টকে আগে চেক করা এবং সে যদি যৌনরোগে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে গ্রহণ না করা৷

শেখ রাজীব জানান, ‘‘এই যৌনপল্লিতে ক্লায়েন্ট আসে সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে৷ তাদের বড় একটা অংশ সিফিলিস বা গনোরিয়ার মতো যৌনরোগে আক্রান্ত৷ এখানে রোগ ধরা পরার পর তারা এখানকার স্থানীয় চিকিৎসকদের কাছেই চিকিৎসা নেন৷''

দৌলতদিয়া এলকার যৌনপল্লির আশেপাশে প্রায় ৭০টির মতো ওষুধের দোকান বা কাম চিকিৎসা কেন্দ্র আছে৷ এইসব দোকান থেকে যৌনকর্মীরা যেমন চিকিৎসা নেন, তার বাইরেও প্রচুর সংখ্যক সাধারণ যৌনরোগীও সেখানে চিকিৎসা নেন৷ ‘পিয়াকট'-এর প্রোগ্রাম অফিসার শাহ আলম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এখানে চিকিৎসা নিতে আসা সাধারণ যৌনরোগীরা দেশের নানা এলাকা থেকে আসেন৷ নিজ এলকায় তারা লজ্জায় চিকিৎসা করান না৷ তবে এ থেকেই বাংলাদেশে যৌনরোগীদের সংখ্যা নিয়ে একটা ধারণা করা যায়৷''

বাংলাদেশে একমাত্র এইডস বা এইচআইভি-তে আক্রান্ত ছাড়া অন্য ধরনের যৌনরোগীর সংখ্যা কত – তা নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘যৌনরোগীরা সাধারণত তাদের রোগের কথা প্রকাশ করতে চান না৷ কেউ কেউ গোপনে চিকিৎসা করান, আবার কেউ কেউ চিকিৎসা করানই না৷ ফলে এই রোগে আক্রান্তদের যেমন সঠিক পরিসংখ্যান নেই, তেমনি অনেকে চিকিৎসা না করিয়ে এই রোগ ছড়াতে ভূমিকা পালন করেন৷''

বাংলাদেশে এইডস রোগী

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে এইচআইভি সংক্রমণের হার এখনও শতকরা ০.১ ভাগের নীচে এবং ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ১ শতাংশেরও কম৷ ২০১৪ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে নতুন করে এইচআইভি-তে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৬৯ জন আর মৃত্যু হয়েছে ৯৫ জনের৷ এছাড়া ১৯৮৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত, মানে ১৪ বছরে, মোট এইচআইভি আক্রান্তের সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৩ জন এবং পরে এইডস রোগ হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৫৬৯ জনের৷

যারা এইচআইভি-তে নতুন সংক্রমিত হয়েছেন, তাদের শতকরা ৭৩ ভাগ পুরুষ, ২৫ ভাগ নারী এবং দু'ভাগ ট্রান্সজেন্ডার৷ অন্যভাবে এইচআইভি আক্রান্ত ৩১ শতাংশ অভিবাসী অথবা অতীতে অভিবাসী ছিলেন এমন মানুষ৷

ঢাকায় ‘আশার আলো' নামে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং পুনর্বাসনের কাজ করে৷ জানা গেছে, তারা এ পর্যন্ত ২৫ জনকে পুনর্বাসন এবং দু'হাজারেরও বেশি আক্রান্তকে চিকিৎসা দিয়েছেন৷ সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক হাবিবা আক্তার ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘এইডস আক্রান্তরা আমাদের সমাজে এখনো নিন্দিত৷ তাই তাদের গোপনেই চিকিৎসা করা হয়৷ যারা আক্রান্ত হন, তারাও গোপন তা রাখেন৷ যদি কোনোভাবে পরিচয় প্রকাশ হয়ে যায়, তাহলে তাদের সমস্যা হয়৷ অনেককে তো বাড়ি এবং এলাকাও ছাড়তে হয়েছে এর ফলে৷''

তিনি আরো জানান, ‘‘বাংলাদেশকে এইডসমুক্ত করতে হলে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাতে হবে৷ তার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্তদের প্রতি আমাদের সহানুভূতিশীল হতে হবে৷ এ জন্য অবশ্য সরকার ইতিমধ্যেই ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার উদ্যোগ নিয়েছে৷''

চিকিৎসা

বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাতটি মেডিক্যাল কলেজসহ মোট ১২টি সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি রোগ শনাক্তকরণ, চিকিৎসা ও এইচআইভি আক্রান্তদের বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণসহ বিভিন্ন সুবিধা দেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়া কয়েকটি এনজিও-র মাধ্যমে এইচআইভি আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবাও দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে৷

২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে এইচআইভিমুক্ত দেশে পরিণত করতে সরকার পরিকল্পনা নিয়েছে৷ এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সিলিং, আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য পজেটিভ লিভিং কাউন্সিলিং, পুষ্টি, চিকিৎসা এবং সাধারণ কাউন্সিলিংয়ের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে৷ স্থাপন করা হয়েছে ন্যাশানাল এইডস কন্ট্রোল সেন্টারও৷''

অন্যদিকে সব সরকারি হাসপাতালেই চর্ম ও যৌনরোগ বিভাগ নামে আলাদা একটি বিভাগ খোলা হয়েছে৷ ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান জানান, ‘‘হাসপাতালের আউটডোরে আমরা যেসব রোগী পাই, তাদের মধ্যে যৌনরোগীর সংখ্যা অনেক কম৷ কিন্তু যৌনকর্মী, তাদের ক্লায়েন্ট এবং কয়েকটি নির্দিষ্ট পেশার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে যৌনরোগে আক্রান্তের হার অনেক বেশি৷''

প্রশ্ন হলো, যৌনরোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. খান বলেন, ‘‘একদিকে সামাজিক লজ্জা, অন্যদিকে কিছু চিকিৎসকের আচরণ৷ অতীতে এমনও হয়েছে যে যৌনরোগের চিকিৎসা করাতে গেলে চিকিৎসকরা রোগীদের কান ধরে উঠ-বস করাতেন৷ নানা ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে রোগীদের বিব্রত করতেন৷ তবে এই প্রবণতা নানা ধরনের প্রচারের কারণে এখন অনেক কম৷''

এইসব কারণেই বাংলাদেশে যৌনরোগের অপচিকিৎসা বেশি৷ মঘা, ইউনানী ও স্বপ্ন চিকিৎসার কথা বলে এবং ‘প্রাইভেট চিকিৎসার' নামে এই অপচিকিৎসা চলছে৷ এমনকি যৌনরোগী নয় এমন রোগীকেও যৌনরোগী বানিয়ে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশে৷''

ডা. রাশেদ মোহাম্মদ খান বলেন, ‘‘যৌনরোগের জন্য রোগী নিজে যে সব সময় সরাসরি দায়ী নয়, তা মানুষকে জানতে হবে জানাতে হবে৷ তাছাড়া এই রোগকে আর দশটা রোগের মতোই বিবেচনা করতে হবে৷ তাহলেই প্রচলিত অন্ধবিশ্বাস ভাঙবে৷''

পিয়াকট-এর প্রোগ্রাম অফিসার শাহ আলম বলেন, ‘‘আমরা সচেতনতার পাশাপাশি কনডম ব্যবহারে উৎসাহিত করছি মানুষকে৷ প্রথমে বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখা হলেও, এখন ধীরে ধীরে অবস্থা বদলাচ্ছে৷''

আপনার প্রতিবেশী কোনো যৌন রোগে আক্রান্ত হলে তাঁর প্রতি আপনার ব্যবহার কী হবে? জানান নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান