যেমন দেখা গেল বাংলাদেশের উড়াল মেট্রোরেল
সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের ওপর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে দেখা হয়েছে৷ ২০২২ সালে মেট্রোরেলে চড়ে যাতায়াত করতে পারবেন ঢাকাবাসী৷ ছবিঘরে থাকছে এই প্রকল্পের তথ্য ও পরীক্ষামূলক যাত্রার চিত্র৷
ঢাকাবাসীর স্বপ্ন
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে যাতায়াতের অন্যতম অনুষঙ্গ মেট্রোরেল৷ অবশেষে বাংলাদেশের রাজধানীর বাসিন্দারাও পাচ্ছেন এই যানে চড়ার সুযোগ৷ পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে প্রায় ৩৮ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এই ট্রেনে যাতায়াত করতে পারবেন নগরবাসী৷
পরীক্ষামূলক যাত্রা
২৯ আগস্ট ছয়টি বগি নিয়ে দিয়াবাড়ি ডিপো থেকে মিরপুর ১২ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে আবার ডিপোতে ফেরে ট্রেনটি৷ সবুজ পতাকা উড়িয়ে ঢাকার উত্তরার দিয়াবাড়ি ডিপোতে মেট্রোরেলের এই পরীক্ষামূলক যাত্রার উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের৷
২৫ কিলোমিটার গতি
ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তরা উত্তর, উত্তর সেন্টার ও উত্তর দক্ষিণ স্টেশন পাড়ি দিয়ে মিরপুরের পল্লবী স্টেশনে গিয়ে থামে ট্রেনটি৷ এরপর ফিরে আসে ডিপো এলাকায়৷
ট্রেনের ভিতরে
ট্রেনের ভিতরে দুইপাশে থাকছে বসার আসন৷ মাঝখানে দাঁড়ানোর পর্যাপ্ত ব্যবস্থা৷ ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড-ডিএমটিসিএল-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, কোচগুলো হবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত৷ ভিতরে থাকবে যাত্রা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শনের ডিসপ্লে-প্যানেল৷ হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী যাত্রীদের জন্য প্রতিটি ট্রেনের কোচগুলোতে থাকবে নির্ধারিত স্থান৷
১৬ টি স্টেশন
পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হলে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার পথে যাতায়াত করবে মেট্রোরেল৷ ১৬ টি স্টেশন থেকে যাত্রীরা উঠানামা করতে পারবেন৷ স্টেশনগুলো হলো: উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয়, মতিঝিল৷
স্টেশন যেমন হবে
ডিএমটিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, ‘‘টিকেট কাউন্টার ও অন্যান্য সুবিধাদি থাকবে দোতলায় এবং ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম থাকবে তিনতলায়৷ প্রত্যেকটি মেট্রোরেল স্টেশনে লিফট, চলন্তসিঁড়ি, সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার পর্যবেক্ষণ, প্রবেশপথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টিকেট সংগ্রহের মেশিনসহ আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন সর্বাধুনিক ব্যবস্থা থাকবে৷’’ ট্রেনে চলার জন্য র্যাপিড পাস ব্যবহার করতে হবে৷
২৪ টি কোচ
২৪ সেট মেট্রোরেল ট্রেন নিয়ে শুরু হবে এমআরটি লাইন-৬ নামের এই মেট্রোরেলের যাত্রা৷ প্রতি সেট ট্রেনে প্রাথমিকভাবে ছয়টি কোচ থাকবে৷ পরবর্তীতে আরো দুইটি কোচ যোগ করা যাবে৷ প্রথম সেটের ছয়টি ২১ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় সেটের আরো ছয়টি কোচ ১ জুন ঢাকায় পৌঁছায়৷
অগ্রগতি
ডিএমটিসিএল-এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই পর্যন্ত মেট্রোরেল নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি ৬৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ৷ উত্তরা তৃতীয় পর্ব থেকে আগারগাঁও অংশের ১২ কিলোমিটার লাইনে পূর্ত কাজ শেষ হয়েছে ৮৮ দশমিক ১৮ শতাংশ৷ আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত হয়েছে ৬৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ৷ এই প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা৷
জাপানের তৈরি
মেট্রোরেল লাইন-৬-এর জন্য গত ২০১৭ সালে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়ামকে ২৪ সেট ট্রেন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়৷ দুই পাশে দুইটি ইঞ্জিন আর চারটি কোচের সমন্বয়ে ট্রেনের সেটগুলো তৈরি হচ্ছে জাপানে৷
২০২২ সালে চালু
২০২৪ সালের মধ্যে পুরো প্রকল্প শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা সরকারের৷ ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজ শেষের সময়সীমা ছিল৷ করোনার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়৷ পরীক্ষামূলক যাত্রার আয়োজনে ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী বছর মেট্রোরেল লাইন-ছয়সহ দেশের তিনটি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হবে৷ বাকি দুটি প্রকল্প পদ্মাসেতু ও কর্ণফুলী ট্যানেল৷