যেভাবে তুরস্কের অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে চান এর্দোয়ান
১৯ বছর ধরে ক্ষমতায় এর্দোয়ান৷ তবে আগের ১৮ বছরে এত সংকট দেখেনি তুরস্ক৷ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১১ বছর, তারপর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ৮ বছর পার করা এর্দোয়ান অবশ্য সংকট থেকে উত্তরণের চেষ্টা করছেন৷ ছবিঘরে বিস্তারিত...
যে কারণে সংকট
করোনাকালে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশই সংকটে পড়েছে৷ সেই সংকট কাটিয়ে উঠছে অনেক দেশ৷ তুরস্কও বেশ সামলে নিচ্ছিলো৷ কিন্তু গত বছর ব্যাংকে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেন এর্দোয়ান৷ অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এই সিদ্ধান্ত তুরস্কের অর্থনৈতিক বিপর্যয়কে ত্বরান্বিত করেছে৷ গত দু বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিনজন গভর্নরকে সরিয়েছেন এর্দোয়ান৷ তিনজনই ছিলেন সুদের হার কমানোর বিপক্ষে৷
মুদ্রাস্ফীতি
ইতিমধ্যে তুরস্কে বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতি প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে৷ ডলারের তুলনায় তুর্কি লিরার দাম অতি নিম্নগামী৷ ২০২১-এর শেষ দিকে লিরার দাম ৪৪ শতাংশ কমে যায়৷
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য এবং ওষুধের দাম বাড়ছে দ্রুত৷ মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ৩৭ শতাংশ৷ গত ২০ বছরে আর কখনো মূল্যস্ফীতি এ পর্যায়ে যায়নি৷ বিশ্বের অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সুদের হার বাড়ানো হয়৷ তাতে মানুষের ঋণ নেয়ার প্রবনতা কমে, হাতে টাকা কমে যায় আর টাকা কম থাকলে কেউ কম প্রয়োজনীয় বা অপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে চায় না৷ এর ফলে অনেক পণ্যের দাম কমে যায়৷ এর্দোয়ান সুদের হার কমানোয় উলটো ফল হয়েছে৷
আমদানি-ব্যয় বৃদ্ধি
তুরস্কের অর্থনীতি প্রধানত আমদানিনির্ভর৷ কিন্তু ডলারের বিপরীতে তুর্কি লিরার দাম কমে যাওয়ায় অনেক পণ্যের আমদানি-ব্যয় বেড়ে গেছে৷ তাতে স্থানীয় বাজারেও বেড়েছে পণ্যের দাম৷ অনেক পণ্যের দামই এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে৷
এর্দোয়ানের যুক্তি
ক্ষমতায় আসার পর থেকে এর্দোয়ান বিভিন্ন সময় সুদের হার কমিয়ে মূলত শিল্পপতিদের ঋণ নেয়ায় উৎসাহিত করেছেন৷ এর ফলে অতীতে শিল্পের বিকাশ হয়েছে, প্রবৃদ্ধিও এসেছে৷ এর্দোয়ান মনে করেন, সুদের হার কমালে সাধারণ মানুষও ঋণ নেবে, সেই ঋণের টাকায় তারা খাবার এবং নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনবে, তাতে বাজার চাঙা থাকবে, কর্ম সংস্থান বাড়বে৷ কিন্তু করোনাকালে নানাভাবে ভুগতে থাকা মানুষের জীবনে এমন পরিবর্তন এখনো দেখা যায়নি৷
দানা বাঁধছে ক্ষোভ
অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত মানুষেরা ইতিমধ্যে ছোট ছোট মিছিলে বিক্ষোভ জানাতে শুরু করেছে৷ নার্স, খাবার সরবরাহকারীসহ অনেক পেশার মানুষ শরিক হচ্ছেন সেই মিছিলে৷
এর্দোয়ান সরকারের আশা
তবে প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান এবং অর্থমন্ত্রী নুরেদ্দিন নেবাতি মনে করেন, জনগণ আর কয়েকটা মাস ধৈর্য ধরলেই সংকট কেটে যাবে৷ ধারণা করা হচ্ছে, লিরার দরপতন রুখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিসেম্বরে ২০ বিলিয়ন ডলার এবং জানুয়ারিতে ৩ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে৷ তাছাড়া আগামী মে নাগাদ তুরস্কে পর্যটকদের ভিড় আবার হয়ত বাড়বে৷ এর্দোয়ানের তাই আশা- সংকট কাটিয়ে উঠতে আর বেশি সময় লাগবে না৷
সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ
অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠা-না-ওঠার ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে এর্দোয়ানের ভবিষ্যৎ৷ ২০২৩ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন৷ দেশের অর্থনীতির প্রভাব তো নির্বাচনে পড়তেই পারে!