1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যে কারণে বাধা পায় উন্নয়ন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ অক্টোবর ২০২০

বাংলাদেশে উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও বরাদ্দ বাড়ানোর পিছনে রয়েছে একটি চক্রের দুর্নীতি৷ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান ডয়চে ভেলেকে এ কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা ঠিকাদাররা৷''

https://p.dw.com/p/3k31F
Bangladesch Verkehrschaos in Dhaka
ছবি: DW/M. Mamun

বাংলাদেশে উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় ও বরাদ্দ বাড়ানোর পিছনে রয়েছে একটি চক্রের দুর্নীতি৷ পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান নিজেই ডয়চে ভেলেকে এই কথা বলেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা ঠিকাদাররা৷''

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন-প্রকল্প পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের সময় এবং খরচ দুটিই বেড়েছে৷ এই প্রকল্পটি পুরোপুরি দেশীয় অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে৷ ২০০৭ সালে একনেকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় ধরা ছিল ১০ হাজার ১৬২ কোটি টাকা৷ ২০১১ সালে এই ব্যয় বেড়ে হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা৷ ২০১৬ সালে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি৷ ২০১৮ সালের জুনে ব্যয় আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা৷

প্রথমে নকশা প্রণয়নের পর ২০১৩ সালে সেতু চালুর কথা ছিল৷ ঠিকাদার নিয়োগের পর ২০১৮ সালের মধ্যে এই সেতু চালুর সিদ্ধান্ত হয়৷ এখন ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতু চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য ছয় দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটার৷ এখন পর্যন্ত চার হাজার ৮০০ কি.মি. দৃশ্যমান হয়েছে৷

তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সময় ও খরচ বাড়ার যৌক্তিক কারণ আছে বলে মনে করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী৷ সেতুর পরিকল্পনার সঙ্গে রেল-সংযোগ যুক্ত হয়েছে৷ বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে টানাপোড়েনের পর নিজস্ব অর্থায়নে এই সেতু নির্মাণ হচ্ছে৷ আর করোনার কারণে ছয় মাস কাজই হয়নি বলে জানান তিনি৷ তবে তিনি বলেন, অন্যান্য অনেক প্রকল্প আছে যেখানে কোনো কারণ ছাড়াই প্রকল্পের সময় ও খরচ বেড়েছে৷

কিছু উদাহরণ

চট্টগ্রামের ভান্ডাল জুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে৷ কিন্ত গত জানুয়ারি মাসে প্রকল্প ব্যয় ৯২ দশমিক ৫২ শতাংশ বা ৯৫৯ কোটি টাকা বাড়ানো হয়৷ মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে দুই বছর নয় মাস৷ ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে একনেকে এই প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়৷ তখন ব্যয় ধরা হয় এক হাজার ৩৬ কোটি টাকা৷

‘উন্নয়নের অন্যতম বাধা ঠিকাদাররা’

বরিশাল টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটকে শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে উন্নীতকরণ প্রকল্প শুরু হয় ২০১০ সালে৷ ৫৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি ২০১২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু দুইবার মেয়াদ বাড়িয়ে দুই গুণের বেশি ১২২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে এখনো কাজ শেষ হয়নি৷

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও টাঙ্গাইলের এলেঙ্গায় কম্প্রেসর স্টেশন স্থাপনের দুই বছর ছয় মাস মেয়াদী প্রকল্প ১২ বছরেও শেষ হয়নি৷ শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৩০৪ কোটি টাকা৷ এখন তার খরচ গিয়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪৩১ কোটি টাকায়৷

কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পে সময় বেড়েছে ছয়বার আর খরচ বেড়েছে সাড়ে ছয়গুণ৷ ২০০৯ সালে অনুমোদিত দুই বছর ৯ মাসের প্রকল্পে ১০ বছর ৬ মাসে অগ্রগতি ৭১ দশমিক ৬৪ শতাংশ৷ প্রকল্প-ব্যয় ৩০২ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ১৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা৷

কেন সময় বাড়ে

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এটা একটা সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে৷ পদ্মা সেতুর বিষয়টি হয়তো আলাদা৷ কিন্তু প্রায় সব প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়ন হয় না এবং প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়৷ আর এই বোঝা দেশের মানুষকে বইতে হয়৷ এটা নিয়ে শুধু দেশে নয় বিদেশে দাতা সংস্থাগুলোও উদ্বিগ্ন৷ তিনি বলেন, ‘‘প্রকল্পের ঠিকাদার এবং এর সঙ্গে জড়িত বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের এক শ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে এটা হয়৷ আর এটা করা হয় দুর্নীতির জন্য৷''

সিপিডির অর্থনীতিবিদ ড. খন্দকার গোলাম মেয়াজ্জেমও মনে করেন, ‘‘প্রকল্পের সময় এবং ব্যয় বৃদ্ধির পিছনে ভিতরের একটা একই স্বার্থের গ্রুপ আছে, যারা প্রকল্প শুরুর পর নক্সায় পরিবর্তন এনে ব্যয় বাড়িয়ে দেয়৷ সময় ক্ষেপণের ব্যবস্থা করে৷ আবার বড় প্রকল্পকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে ব্যয় কম দেখায়৷ এর পিছনে অবৈধ অর্থ আয়ের উদ্দেশ্য থাকে৷''

‘এর পিছনে অবৈধ অর্থ আয়ের উদ্দেশ্য থাকে’

ঠিকাদাররা বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রধান বাধা?

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান এর জন্য দাতাদের দায়ী করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘তারা বারবার মিশন পাঠানোর নামে সময় নষ্ট করে৷ তিনি এর পিছনে আরো কিছু কারণ চিহ্নিত করেন৷ তিনি বলেন ,‘‘আমরা দায়িত্বশীল নই৷ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রকল্প পাশ করানো ও কাজ শুরুতে অনেক সময় লাগে, বিদেশি ঋণের টাকায় ভয়ঙ্কর সব শর্ত দেয়৷ যন্ত্রপাতি, টেকেনোলজি ম্যাটারিয়ালে আমরা এখনো বিদেশ নির্ভর৷ প্ল্যানিং ও এক্সিকিউশনে যারা জড়িত, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব আছে৷ আছে পাওয়ার গেম, যারযার এলাকার জন্য সে কাজ করে৷''

তিনি বলেন, ‘‘বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান বাধা ঠিকাদাররা৷ তারা নানা প্যাঁচ মেরে আমাদের ঘাড়ে উঠে বসে থাকে৷ কাজ নিয়ে কোয়ালিশন করে দেরি করে রেট বাড়িয়ে দেয়৷ আমরা তখন কিছু করতেও পারি না৷ কাজ তখন ৩০-৪০ ভাগ হয়ে যায়৷ বন্ধ করে দেয়া যায় না৷ এটার সঙ্গে দুর্নীতির সম্পর্ক আছে৷ দুর্নীতির একটি চক্র আছে৷''

তবে তার দাবি ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে৷ ই-টেন্ডার ও সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা আনা হচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য