যুদ্ধ পরবর্তী জার্মানির সোভিয়েত শিবিরগুলোতে যা ঘটেছিলো
পূর্ব জার্মানি অধিগ্রহণের পর নাৎসিদের বিচারের জন্য ‘বিশেষ শিবির’ স্থাপন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ অনেক নিরপরাধ মানুষ ছিলেন, যাদের বিরুদ্ধে যুক্তিহীন অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল এবং অনেকেই এই বন্দি শিবিরে প্রাণ হারিয়েছিলেন৷
সোভিয়েতবিরোধী প্রচারণা
১৮ বছরের কার্ল ভিলহেম ভিশমান গ্রাইসভাল্ডে পড়ালেখা করছিলেন শিক্ষক হওয়ার জন্য৷ একবার এক বক্তৃতায় তিনি সোভিয়েত ভূমি সংস্কারের বিরোধিতা করেছিলেন৷ এই অপরাধে সোভিয়েত সেনা ট্রাইব্যুনালে সোভিয়েতবিরোধী প্রচারণা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে৷ শাস্তি ১০ বছরের কারাদণ্ড৷ কার্লের বয়স এখন ৯২৷
সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি ‘বিশেষ শিবির’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব জার্মানি অধিগ্রহণের পর ১৯৪৫ থেকে ৫০ সাল পর্যন্ত সাক্সনির টোরগাওতে ‘বিশেষ ক্যাম্প’ স্থাপন করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন৷ সোভিয়েতের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিমা অন্য শক্তিধর দেশগুলোও নাৎসিদের বিচারের জন্য বেশ কয়েকটি ক্যাম্প স্থাপন করেছিল সেখানে৷
ক্যাম্পের জীবন
কার্ল ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, একটি কক্ষে তিনজন থাকতেন, খেতে পেতেন খুবই সামান্য, সারাদিনই ওই ঘরে বন্দি থাকতে হত৷
জার্মানির মাটিতে স্বৈরাচারী শাসন চেয়েছিল স্টালিন
সোভিয়েত স্বৈরশাসক জোসেফ স্টালিন শুরু থেকেই চেয়েছিলেন সোভিয়েতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমন করতে৷ আর এ কারণেই সোভিয়েতের বিশেষ বন্দি শিবিরে নাৎসিদের নাম করে হাজারো নিরাপরাধ মানুষকে নির্যাতন করা হয়েছিল৷
বন্দিদের এক তৃতীয়াংশের মৃত্যু
এক লাখ ৭৬ হাজার বন্দির এক তৃতীয়াংশ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ অনেককে একসাথে হত্যা করা হয়েছিল৷ না খেতে পেয়ে, রোগে ভুগে প্রাণ হারিয়েছিলেন অনেকে৷
এক পঞ্চমাংশ নিরপরাধ
১৯৫৪ সালে মুক্তি পাওয়ার পরও জনসমক্ষে নিজের বিচার নিয়ে কথা বলা নিষেধ ছিল কার্লের৷ তিনি কেবল স্ত্রী এবং আপনজনদের সঙ্গে এই ঘটনা শেয়ার করেছিলেন৷ সেসময় নাৎসি পরিচয়ে যাদের বিভিন্ন বন্দি শিবিরে আটকে রাখা হয়েছিল, যাদের এক পঞ্চমাংশ ছিলেন নিরপরাধ৷ কয়েকজন বন্দি তাদের সাথে কি ঘটেছিল পরবর্তীতে তা নথিবদ্ধ করে এবং স্কেচের মাধ্যমে ধরে রেখেছিলেন৷
সাকসেনহাউসেন ক্যাম্প
ইহুদিদের নির্যাতনের জন্য বার্লিনের উত্তরে সাকসেনহাউসেনে ক্যাম্প বানিয়েছিলো নাৎসিরা৷ যুদ্ধ শেষে এখানেও সোভিয়েত তাদের বন্দিদের রেখে নির্যাতন করত৷ পূর্ব জার্মানির পতনের পর ওই শিবির থেকে সাত হাজার মানুষের গণ কবর উদ্ধার হয়েছিল৷
পরবর্তী প্রজন্মের সাথে যাতে না ঘটে
৩০ আগস্ট সাকসেনহাউসেনে সোভিয়েত ক্যাম্পে একটি বিশেষ অনুষ্ঠান হয়, সেখানে বন্দি নিরাপরাধ মানুষদের স্মরণে৷ কার্ল সেখানে উপস্থিত ছিলেন৷ ৯০ এর দশকের শুরুতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন৷ অনুষ্ঠানে তিনি একটাই ইচ্ছা প্রকাশ করেন: তার নাতি-নাতনী এবং তাদের সন্তানদের সঙ্গে যেনো এমন আর না ঘটে৷