যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে বিচ্ছিন্ন সন্তানদের সঙ্গে পুনর্মিলন
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির জেরে অনেক বাবা-মা সন্তানদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন৷ চার বছর সন্তানদের থেকে দূরে থাকতে বাধ্য হন হন্ডুরাসের নাগরিক মারিয়া এরনান্দেজ৷ ফের সন্তানদের কাছে পেয়েছেন মারিয়া৷ দেখুন ছবিঘরে..
মা-মেয়ের পুনর্মিলন
লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাত বছরের নিকোল মায়ের হাতে গোলাপ তুলে দিয়েছিল৷ একতোড়া গোলাপ এবং সূর্যমুখী এনেছিল অন্য মেয়ে মিশেল৷ মাকে জড়িয়ে ধরেছিল তারা৷ এ আলিঙ্গনের যে বিকল্প নেই৷মারিয়া অস্ফুট স্বরে বলেছিলেন, ‘‘দূরে থাকলেও রোজ তোমাদের কথা মনে পড়ত৷’’
বিচ্ছিন্ন মা-সন্তান
মারিয়া যখন সন্তানদের নিয়ে চার বছর আগে আশ্রয়ের খোঁজে অ্যামেরিকায় এসেছিলেন৷ তাকে বলা হয়েছিল, সন্তানদের নিয়ে দেশে ফিরতে হবে বা সন্তানদের এখানে রেখে ফিরে যেতে হবে৷ অ্যামেরিকায় দুই মেয়ে সুরক্ষিত৷ মেয়েদের ক্যালিফোর্নিয়ার চিলড্রেন্স শেল্টারে রেখে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মারিয়া৷
দাদার সঙ্গে থাকা
পরবর্তীতে দাদা মেইনরের সঙ্গে থাকতে শুরু করে দুই বোন৷ লস অ্যাঞ্জেলেসে কমলালেবু বিক্রি করেন মেইনর৷ মাইনরের চার বছরের ছেলে অ্যারন দাদীর সঙ্গে থাকত৷ সেও এখন অ্যামেরিকায়৷ (গোপনীয়তার কারণে মারিয়ার মেয়েদের ‘মিডল নেম’ ব্যবহার করেছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স)
ট্রাম্পের ‘জিরো টলারেন্স’
সেই সময়ে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি চালু করেছিল ট্রাম্প প্রশাসন৷ সীমান্ত পেরিয়ে কোনও পরিবার অ্যামেরিকায় প্রবেশ করলে সাবালক সদস্যর বিরুদ্ধে আইনিপ্রক্রিয়া চালুর কথা বলা হয়েছিল নীতিতে৷নাবালক সদস্য, শিশুদের পালক বাবা-মায়ের বাড়ি অথবা সরকারি তত্ত্বাবধানে থাকা সংস্থার হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল নীতিতে৷ মেয়েদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন মারিয়া৷
মায়ের থেকে দূরে..
মারিয়া ও তার দুই মেয়ের মধ্যে তখন দূরত্ব ছিল সাড়ে চার হাজার কিমি৷ ভিডিও কলে দেখতেন মেয়েদের৷ কতটা বড় হল তারা, মোবাইলের স্ক্রিন ছুঁয়ে অনুভব করতে চাইতেন৷ কেউ বলত দাঁত পড়েছে, কেউ বলত প্রথম ‘ক্রাশ’-এর কথা৷ ‘‘মেয়েরা কত বড় হয়ে গিয়েছে’’–রয়টার্সকে এ কথা বলতে গিয়ে কান্নায় গলা কেঁপে উঠেছিল মারিয়ার৷
‘আনঅ্যাকমপানিড মাইনরস’
ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি ছিল, আশ্রয়ের দাবিদার এতগুলি পরিবারকে মুক্ত করে দিলে অবৈধ অভিবাসনে উত্সাহ দেওয়া হবে৷ ‘আনঅ্যাকমপানিড মাইনরস’ হিসেবে মারিয়ার সন্তানদের মতো অন্য নাবালকদের নিজেদের হেফাজতে রাখতে চেয়েছিল তারা৷ সেই প্রশাসনের এক অ্যাটর্নির যুক্তি ছিল, শিশুদের নিয়ে বেআইনি পথে সীমান্ত পেরোনো কাউকে ছাড় দেওয়া যায় না৷
বাইডেনের সিদ্ধান্ত
২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসনের টাস্ক ফোর্স ১২৬ জন শিশুকে তাদের বাবা-মা অথবা আইনি অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডিএইচএস জানিয়েছে, আরও ৩৭৭ জন শিশুকে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷
ওয়েবসাইট তৈরি
বাইডেন প্রশাসন দুটি ওয়েবসাইট তৈরি করেছে৷ সেখানে গিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া পরিবারগুলি ‘রিইউনিফিকেশন’-এর জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারবে৷ প্রতিটি পরিবারকে খুঁজে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ প্রশাসন, দাবি টাস্ক ফোর্সের প্রধান মাইকেল ব্রানের৷
‘ফ্যামিলি রিইউনিফিকেশন প্রজেক্ট’
মারিয়ার আইনজীবী ক্যারল অ্যানে ডোনোহে জানান, যারা তিন-চার বছর নিজেদের সন্তানকে দেখেননি, সেই বাবা-মায়েদের হয়ে কথা বলেন তারা৷ সন্তানকে আর ফিরে পাবেন না–একথা ভেবে দুশ্চিন্তায় দিন কাটান বাবা-মায়েরা৷ অন্যদিকে হন্ডুরাসের অ্যাটর্নি ডোরা মেলারা সপ্তাহে তিন বার মারিয়ার খোঁজে বেরোতেন৷ অসম্পূর্ণ একটা নাম আর ঠিকানা ছিল তার কাছে৷
ট্যাক্সিচালকদের সাহায্যে..
২০২০ সালের মার্চে সান পেদ্রো সুলা শহরে ট্যাক্সিচালকদের সাহায্যে মারিয়ার খোঁজ পান ডোরা৷ সন্তানদের কাছে না পেয়ে ক্যারাভানে চেপে আবারও সীমান্ত পেরোনোর কথা ভেবেছিলেন মারিয়া৷ তবে বাইডেন ক্ষমতায় আসার ফলে সন্তানদের কাছে পেতে আবেদন করতে পারবেন জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছিলেন৷
দাদীর সঙ্গে
নাতি অ্যারন থাকত মারিয়ার সঙ্গে৷ হন্ডুরাস থেকে বেরোতে অ্যারনেরও পাসপোর্ট প্রয়োজন ছিল৷ মানবিকতার কারণ দেখিয়ে আবেদন করেন মারিয়া৷ অনুমতি মিললেও নাতির ডেঙ্গু হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছনোর তারিখ পিছিয়ে যায়৷ অবশেষে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নাতিকে নিয়ে অ্যামেরিকায় পা রাখেন মারিয়া৷
স্থায়ী আইনি তকমা কবে?
মানবিকতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রে কাজের অনুমতি মিলেছে মারিয়ার৷ তিন বছরের জন্য নির্বাসন থেকে সুরক্ষিত তিনি৷ কিন্তু স্থায়ী আইনি তকমা মেলেনি এখনও৷ ‘নন-প্রফিট ফিজিশিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটস’-এর ২০২১ সালের স্টাডি বলছে, মানসিক অবসাদে ভোগেন এইসব বাবা-মা এবং সন্তানেরা৷
মায়ের কাছে মেয়েরা
মিশেল কাউকে নিজের সমস্যার কথা বলতে পারত না৷ তবে বোন নিকোলের কথা ভেবে মন শক্ত রাখত সে৷ অন্য বাচ্চাদের মায়ের সঙ্গে দেখলে নিকোলের কষ্ট হত৷ মিশেলের বক্তব্য, ‘‘মা চলে এসেছে৷ এখন নতুন মুহূর্ত, নতুন স্মৃতি তৈরির পালা৷’’