1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মোকার প্রভাবে আরো বিপর্যস্ত বিদ্যুৎ খাত

হারুন উর রশীদ স্বপন (ঢাকা)
১৭ মে ২০২৩

বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সংকট আরো প্রবল হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোকায়' গভীর সমুদ্রে দুইটি এলএনজি টার্মিনাল ভেসে যাওয়ায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন কমে গেছে।

https://p.dw.com/p/4RVTR
ঘূর্ণিঝড় মোকার কারণে বিপর্যস্ত এলএনজি টার্মিনাল এখনো ঠিক না হওয়ায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না।
ঘূর্ণিঝড় মোকার কারণে বিপর্যস্ত এলএনজি টার্মিনাল এখনো ঠিক না হওয়ায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না।ছবি: Mohibullah Mohib/DW

রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ তিনিটি কেন্দ্র কয়লার অভাবে বন্ধ। কয়লার অভাবে বন্ধ হতে যাচ্ছে মাতারবাড়ি ও পায়রা।

এর সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বন্ধ আছে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখন বিদ্যুৎ অনেকটাই নির্ভর করছে গ্যাসের ওপর। বিদ্যুতের সাথে রান্নার গ্যাস সংকটও বাড়ছে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এখন প্রতিদিন গড়ে চার-পাঁচ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ঢাকার বাইরে , বিশেষ করে গ্রামের দিকে  ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত হচ্ছে। মোকার আগেও বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সংকট ছিল। মোকার পর সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। সেন্টমার্টিন এখনো বিদ্যুৎহীন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অবস্থাও খারাপ।

ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা জেসমিন লিপি বলেন, "আমাদের এলাকায় মোকার পর প্রতি এক ঘণ্টা পর পর লোডশেডিং করা হচ্ছে। দুপুর ১২ টার পর গ্যাস চলে যায় আসে গভীর রাতে। তাই  কেরোসিনের চুলায় রান্না সারতে হচ্ছে।”

বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে: শামিম হাসান

একই ধরনের তথ্য দেন মোহাম্মদপুরের পিংকি ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, "আমি একজন কর্মজীবী নারী। আমার একটি শিশু সন্তান আছে। বিদ্যুৎ আর গ্যাস সংকটের কারণে আমার প্রাত্যহিক জীবনের রুটিন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।” তিনি বলেন, " গত দুই-একদিন বৃষ্টি হওয়ায় গরম কিছুটা কম। নয়তো সিদ্ধ হয়ে যেতাম।”

রাজধানীর বংশাল, মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, মুগদা, পল্টন, মালিবাগ, কাঁঠালবাগান, জিগাতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এলাকাভেদে ইদানীং দিনে চার-পাঁচ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না। রান্নার গ্যাসও ঠিকমতো পাওয়া যায় না। গেলেও চাপ খুব কম। এদিকে লাইনে গ্যাসের চাপ কম থাকায় সিএনজি স্টেশনগুলোতে গাড়ির দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাবের আগ পর্যন্ত ১৬ হাজার - সাড়ে ১৬ হাজার মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে ১৩-১৪ হাজার মেগাওয়াট বিদুৎ উৎপাদন হচ্ছিল। তখন রাজধানীর বাইরে লোডশেডিং করা হতো। এখন ১০ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন হয়। ফলে সারাদেশেই চলছে লোডশেডিং।

পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, দুটি এলএনজি টার্মিনাল পরিচালনা করে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি এবং সামিট গ্রুপ। এক্সিলারেটের টার্মিনালটি পুনরায় চালু করতে দুই সপ্তাহ লাগতে পারে। আর সামিটের টার্মিনাল সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আগের জায়গাতেই আছে। সংযোগ ফিরিয়ে গ্যাস সরবরাহ শুরুর চেষ্টা চলছে।

কয়লা সংকটে গত ২৩ এপ্রিল রাত থেকে উৎপাদন বন্ধ আছে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চলমান একটি  ৬৬০ মেগাওয়াটের ইউনিট। কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাগেরহাট ও খুলনা এলাকায় লোডশেডিং বেড়েছে। ২৫ এপ্রিল থেকে বন্ধ আছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ইস্ট ইউনিটের উৎপাদন। এরপর ২৯ এপ্রিল উত্তরাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহের বৃহৎ কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ার ২৭৫ মেগাওয়াট সক্ষমতার তৃতীয় ইউনিটটিও হয়ে যায়। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত কয়লা মজুত আছে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের। পায়রা বন্ধ হয়ে গেলে আরো সংকটে পড়বে বিদ্যুৎ খাত। এমনিতেই বন্ধের পথে রয়েছে মাতারবাড়ি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মুখপাত্র শামিম হাসান জানান, " আজকে (বুধবার) বিদ্যুতের চাহিদা আছে ১২ হাজার মেগাওয়াট। আমরা দিতে পারবো ১১ হাজার মেগওয়াটের মতো। ফলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। গ্রামে লোডশেডিং একটু বেশি। সেটা আমরা শহরে দেই।”

এই সংকট আরো বাড়বে, এর পেছনে আছে ডলার সংকট: শামসুল আলম

তিনি আরো জানান, "এলএনজি টার্মিনাল এখনো ঠিক না হওয়ায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পর্যাপ্ত গ্যাস দেয়া যাচ্ছে না। কয়লা সংকটের কারণে রামপাল বন্ধ আছে। মাতারবাড়িও বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা কয়লা আমদানি করতে পারছি না।”

তিনি জানান, এলনজি টার্মিনাল ঠিক করার কাজ চলছে, তবে কতদিন  লাগবে বলা যাচ্ছে না। তবে মোকার পর বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ  জানিয়েছেন, কমপক্ষে ২০ দিন সময় লাগবে। এই সময়টায় বিদ্যুৎ সংকট থাকবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শামসুল আলম বলেন, "আসলে এলএনজির কারণেই বিদ্যুৎ সংকট, তা নয়। সংকট এখন নানা দিক থেকে। দুই হাজার ৯০০ সিএফটি গ্যাস প্রতিদিন আসে । তার মধ্যে ৭০০ সিএফটি আসে এলএনজি থেকে। ফলে এটা বড় কোনো কারণ নয়। আমাদের কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো বন্ধ হচ্ছে একটার পর একটা। কয়লা আনতে পারছি না। ৩৬ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে। আমরা তেল আনতে পারছি না। ফলে সব মিলিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকট আরো বাড়বে। এর পেছনে আছে ডলার সংকট।”

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ প্রতিদিন ২৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।