1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেসিডোনিয়ার নাম পালটানোর গণভোটকে প্রধানমন্ত্রীর স্বাগত

১ অক্টোবর ২০১৮

ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম৷ মেসিডোনিয়ার নাম পালটে উত্তর মেসিডোনিয়া হবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আয়েজিত গণভোটে হাজির হন অর্ধেকেরও কম ভোটার৷ তা সত্ত্বেও পরিকল্পনায় অনড় দেশটির প্রধানমন্ত্রী৷

https://p.dw.com/p/35n1O
Reportage Mazedonisches Referendum
ছবি: DW/D. Tosidis

ভোটের গণরায় স্বাভাবিকভাবেই গেছে নাম পালটানোর পক্ষে৷ উপস্থিতি যা-ই হোক, প্রধানমন্ত্রী জোরান জায়েভ এই গণভোটকে ‘গণতন্ত্রের বিজয়' বলে আখ্যা দিয়েছেন৷

আইনগত বাধ্যবাধকতার জন্য গণভোটে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতি থাকা প্রয়োজন৷ কিন্তু রোববারের ভোটে হাজির হন কেবল ৩৫ শতাংশ ভোটার৷ এই ভোটারদের ৯০ শতাংশই অবশ্য নাম পরিবর্তনের পক্ষে মত দিয়েছেন৷

অবশ্য অর্ধেকের বেশি ভোটার উপস্থিতি থাকলেও এই গণভোট মানার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, কারণ, নাম পালটাতে গ্রিসের সাথে সই করা তথাকথিত ‘প্রেসপা' চুক্তিতে গণভোটের কোনো প্রস্তাবের উল্লেখ ছিল না৷

ভোট শেষ হওয়ার পরপরই এক সংবাদ সম্মেলন করেন জায়েভ৷ সেখানে জানান, সংবিধান সংশোধনে তাঁকে সমর্থন দেয়ার জন্য পার্লামেন্টকে আহ্বান জানাবেন তিনি৷ একই সাথে পার্লামেন্টে সংবিধান সংশোধনে প্রয়োজনীয় দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে ব্যর্থ হলে আগাম নির্বাচন দেয়ার কথাও জানান জায়েভ৷

ইইউ ও ন্যাটোর হাতছানি

বার্তাসংস্থা এএফপিকে জায়েভ বলেন, ‘‘সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতকে সমর্থন দেয়াই এখন পার্লামেন্টের দায়িত্ব৷ মেসিডোনিয়াকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোতে নিয়ে যেতে আমি বদ্ধপরিকর৷''

গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী অ্যালেক্সিস সিপ্রাস চুক্তি বাস্তবায়নে জায়েভের এই দৃঢ়তার ‘প্রশংসা' করেছেন৷

জুন মাসে গ্রিসের সাথে এই চুক্তি করেন জায়েভ৷ এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে দুই দেশের মধ্যে চলে আসা বিরোধের অবসান ঘটানোর আশা তাঁর৷

গ্রিস ও মেসিডোনিয়ার মধ্যে বিরোধের শুরু ১৯৯১ সালে৷ ইউগোস্লাভিয়া ভেঙে স্বাধীনতার ঘোষণার সময় দেশটি নাম নেয় মেসিডোনিয়া৷ তখন থেকেই গ্রিস এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে, কারণ, গ্রিসের সবচেয়ে উত্তরের প্রদেশের নামও মেসিডোনিয়া৷

গ্রিসের চাপের মুখে জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির নাম দেয় ‘দি ফর্মার ইউগোস্লাভ রিপাবলিক অফ মেসিডোনিয়া''৷

বর্তমান স্বাধীন মেসিডোনিয়া এবং গ্রিসের প্রদেশ মেসিডোনিয়া একসময় রোমান সাম্রাজ্যের অংশ ছিল৷ তখন থেকে এই অঞ্চলকে মেসিডেনিয়া নামেই ডাকা হতো৷ ফলে এখন উভয় পক্ষই দুইশত বছর আগের সে ঐতিহ্যের দাবিদার৷

দু'পক্ষই অনড় থাকায় এতদিন ধরেও এ বিরোধের মীমাংসা হয়নি৷ তবে বিপত্তি বাঁধে মেসিডোনিয়া ২০০৮ সালে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ চাইতে গেলে৷

নাম পরিবর্তন করে উত্তর মেসিডোনিয়া না করলে সদস্যপদ প্রাপ্তিতে ভেটো দিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় গ্রিস৷ ইইউ'র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, নতুন যে-কোনো সদস্যকে জোটে অন্তর্ভূক্ত করতে প্রয়োজন সব সদস্য দেশের সমর্থন৷

আন্তর্জাতিক সমর্থন

ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলেনবার্গ এই গণভোটকে গ্রিসের সাথে দীর্ঘদিনের বিরোধ মেটানোর সুযোগ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন৷ এক টুইটে তিনি বলেন, ‘‘এই সুযোগ কাজে লাগাতে আমি সব রাজনৈতিক নেতা ও দলকে আহ্বান জানাই৷ ন্যাটোর দরজা খোলাই আছে৷''

ইউরোপীয় ইউনিয়নও গণভোটকে স্বাগত জানিয়ে এই রায়কেশ্রদ্ধা জানাতে সবাইকে আহ্বান জানিয়েছে৷ ইইউ সম্প্রসারণ বিষয়ক কমিশনার ইয়োহানেস হান এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ‘‘সব রাজনৈতিক নেতা এই রায়কে শ্রদ্ধা জানাবেন বলে আশা করি৷ নিশ্চয়ই তাঁরা দায়িত্ব ও একতার সাথে একে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন৷''

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নয়ার্ট মেসিডোনিয়ান আইনপ্রণেতাদের আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘দলীয় বিভেদ ভুলে পশ্চিমা বিশ্বে পূর্ণ যোগদানের ঐতিহাসিক সুযোগকে কাজে লাগানোর৷''

 

তিনি বলেন, ‘‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন সমর্থন করে. এর মাধ্যমে মেসিডোনিয়া ইইউ ও ন্যাটোতে তাঁর ন্যায্য অবস্থান দাবি করতে পারবে৷ এর ফলে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা, নিরাপত্তা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠা হবে৷''

‘গণভোট ব্যর্থ'

বিরোধীরা অবশ্য এই গণভোটকে পুরোপুরি ব্যর্থ বলে দাবি করেছে৷ গণভোটের বিরুদ্ধে থাকা প্রেসিডেন্ট জর্জ ইভানোনভ আগেই গণবোট বর্জনের আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ স্বল্প ভোটার উপস্থিতিকে গণভোট প্রত্যাখ্যানের প্রমাণ দাবি করে রাজধানী স্কোপিয়েতে পার্লামেন্ট ভবনের সামনে তিনি ও তাঁর সমর্থকরা ‘মেসিডোনিয়া' স্লোগান দেন৷

বিরোধী দল ভিএমআরও-এর হ্রিস্টিয়ান মিকোওস্কি গণভোট ‘ব্যর্থ' হয়েছে বলে দাবি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গ্রিসের সাথে চুক্তি যে সবুজ সংকেত পায়নি, সেটাই সত্য৷ এ পরাজয় শুধু গ্রিসের সাথে চুক্তিটিরই নয়, যারা ক্ষমতায় থেকে এর সমর্থন দিচ্ছেন, সেই অপরাধীদেরও৷''

এখন পর্যন্ত জায়েভ ও তাঁর জোট সরকারের সংখ্যালঘু আলবেনিয়ান শরিক দল সংবিধান সংশোধনের পক্ষে ৭০ জন আইনপ্রণেতার সমর্থন আদায় করতে পেরেছে৷ ফলে সংবিধান সংশোধনে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট পেতে পার্লামেন্টেবিরোধী ভিএমআরও দলেরও অন্তত ১০-১২ জনের সমর্থন প্রয়োজন হবে জায়েভের৷

মেসিডোনিয়া সংবিধান সংশোধন করার পরই চুক্তি বাস্তবায়নের কথা গ্রিসের৷

এডিকে/এসিবি (রয়টার্স, ডিপিএ)