1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মেরু অঞ্চলের শীতল পরিবেশে চাষবাস!

২২ মে ২০১৯

মেরু অঞ্চলের চরম শীতল পরিবেশে চাষবাসের কথা ভাবা যায় কি? নরওয়ের উত্তরে এক দ্বীপে এমনই দুরূহ কাজ করে দেখাচ্ছেন এক ব্যক্তি৷ লতাগুল্মের পর শাকসবজিও উৎপাদন করতে চান তিনি৷

https://p.dw.com/p/3Io4V
DW Sendung Euromaxx Inselgärtner
ছবি: NDR

অন্ধকার জগত

 নরওয়ের উত্তরে স্পিৎসব্যার্গেন দ্বীপে  শীতকালে মাসের পর মাস ধরে অন্ধকার থাকে৷ মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাটিও জমে যায়৷ সেখানে মানুষের তুলনায় তুষার ভালুকের সংখ্যা বেশি৷

বিশ্বের উত্তরতম বসতিতে বেঞ্জামিন ভিডমার লতাগুল্ম ও শাকসবজি চাষ করছেন৷ সহকর্মী হেগে গিসকে-র সঙ্গে তিনি এখানে এক পরীক্ষা চালাচ্ছেন৷ জায়গাটির নামও রেখেছেন ‘ল্যাব'৷ প্রায় ক্রান্তীয় এই পরিবেশে বীজ প্রস্ফুটিত হয়৷ বেসিল বা তুলসীর মতো অনেক লতাগুল্ম গজিয়ে ওঠে৷ হেগে বলেন, ‘‘টাওয়ার ঢোকানোর পর আর্দ্রতা যে বেড়ে গেছে, সেটা লক্ষ্য করেছেন তো? কারণ আমরা তার মাত্রা ২০ থেকে প্রায় ৪৫ বা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছি৷''

শাকসবজি চাষের ‘ধৃষ্টতা'

মেরু অঞ্চলের মালিদের আরও অনেক পরীক্ষা চালাতে হবে৷ বিষয়টি নিয়ে আগের কোনো অভিজ্ঞতা নেই৷ ভিডমার শুধু তাজা শাকসবজি খেতে চেয়েছিলেন৷ তখনই তাঁর মাথায় এই আইডিয়া আসে৷ কোনো একদিন সেখানে টমেটোও গজাবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ পৃথিবীর এত উত্তর প্রান্তে যা কখনো ঘটে নি৷

দুপুর তিনটা নাগাদ অন্ধকার ঘনিয়ে আসে৷ বেঞ্জামিন এমন পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছেন৷ আসলে তিনি ফ্লোরিডার মানুষ৷ প্রায় ১০ বছর আগে জাহাজের পাচক হিসেবে তিনি বরফের এই দ্বীপে এসে পৌঁছান৷ বেঞ্জামিন বলেন, ‘‘আসলে আমি অন্ধকার এই মরসুম বেশ উপভোগ করি৷ আলোর মরসুমের মতোই তার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হয়৷ সেটাই হলো চ্যালেঞ্জ৷ অন্ধকার মরসুমে বেশ নিরুদ্বেগ থাকা যায়, বেশি কিছু করার প্রয়োজন নেই৷ আলো ফিরে এলেই আমাদের ব্যস্ততা খুব বেড়ে যায়, সারাক্ষণ ছুটোছুটি করতে হয়৷ কাজ থামানোই বড় চ্যালেঞ্জ৷ আমার কাছে অন্ধকার মরসুম অনেক আরামের৷'' 

বিপুল চাহিদা

অন্ধকার হোক বা আলো, বেঞ্জামিন ভিডমার-এর বাগান ফুলেফেঁপে উঠছে৷ উৎপাদনক্ষমতা খুব সীমিত হওয়ায় এমনকি বেশ কিছু খদ্দেরকে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে৷ স্পিৎসব্যার্গেন নরওয়ের উত্তর কেপ থেকেও প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত৷ ফলে সব খাদ্যই বিমানযোগে সেখানে পাঠাতে হয়৷ ফলে গোটা প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর৷ তাই বেঞ্জামিন এর বিকল্প দেখাতে চান৷ রাঁধুনী হিসেবে আন্ডার্স হর্ন জানান, ‘‘আমি অন্য রাঁধুনীদের সঙ্গেও কথা বলেছি৷ আমরা তাঁর পার্মাকালচার ফার্ম দেখতে গিয়েছি৷ স্ভালবার্ডে তাজা লতাগুল্ম দেখে বিস্মিত হয়েছি৷''

এই ফার্ম কিন্তু শুধু ব্যয়বহুল নয়৷ এমনকি যে মাটিতে লতাগুল্ম বেড়ে উঠছে, সেটি পুনর্ব্যবহার করা হয় ও সার হিসেবে পচানো হয়৷

অজানা মহাকাশযানের মতো দেখতে হলেও এই গ্রিনহাউস আসলে মেরু এলাকার এক নার্সারি৷ এই গম্বুজের নীচে অন্ধকার মরসুমে তাপমাত্রা মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে যায়৷ তবে আলোর মরসুম শুরু হলেই লতাগুল্ম গজিয়ে উঠে সবকিছু সবুজ করে দেয়৷ বেঞ্জামিন ভিডমার বলেন, ‘‘মিডনাইট সান পর্যায়ে কয়েকদিন ধরে প্রায় ২৪ ঘণ্টাই সূর্যের আলো থাকে৷ সূর্য আকাশের চারিপাশে ঘুরে চলে এবং ভেতরে তাপমাত্রা ২৫, ৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যায়৷ আমি গাজর বা আলুর মতো শিকড়ভিত্তিক সবজি চাষ করতে চাই৷''

জনপ্রিয় উদ্যোগ

গম্বুজ ও তার নির্মাতা এরই মধ্যে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছেন৷ প্রায় প্রতিদিনই মানুষজন তাঁর কাছে এসে সে সব জানতে চান৷ মানুষ সেই সব লতাগুল্ম দেখতে ও চেখে দেখতে চান৷ বলগাহরিণের মাংসের সঙ্গে তারা শাকসবজি ও মাখা আলু রান্না করেন৷ এবার তার সঙ্গে যোগ হচ্ছে বেসিল বা তুলসী পাতা, যা নিজের বাগানেই গজিয়ে উঠেছে৷

রান্নার সময় বেঞ্জামিন তাঁর নতুন বাসস্থানের সুখ্যাতি করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি সপরিবারে এখানে থাকি৷ আমরা সত্যি জায়গাটিকে ভালবাসি৷ সব সময়ে চলে যেতে ইচ্ছা করলেও দূরে গেলেই দ্রুত আবার ফিরে আসতে মন চায়৷''

নার্সারিতে বীজ বপনের সময় জার্মান ছাত্রী আনা কেক্সেল সাহায্য করেন৷ তবে তাঁর কাছে স্পিৎসব্যার্গেন-এর জীবনযাত্রা মোটেই আদর্শ নয়৷ আনা বলেন, ‘‘আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, স্পিৎসব্যার্গেন-এর মতো জায়গায় মানুষের বসবাস করা উচিত নয়৷ একদিকে চরম আবহাওয়া, অন্যদিকে টেকসই জীবনযাত্রা এখানে সম্ভব নয়৷ কিন্তু মানুষ এখানে থাকবে না, এমনটা কখনোই হবে না৷ তাই এখানে গাছপালা লাগানোর স্বাধীন প্রচেষ্টাকে খুব ভালো পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি৷''

বেঞ্জামিনের জন্য বিষয়টি শুধু তাজা শাকসবজির মধ্যে  সীমাবদ্ধ নেই৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে যে সব প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছি, তা কাজে লাগিয়ে শহরের মাঝে অথবা বিভিন্ন দ্বীপেও খাদ্য উৎপাদন সম্ভব৷ অর্থাৎ আমরা এখানে যা করেছি, যে কোনো জায়গায় তা করা সম্ভব৷ এখানকার মতো চ্যালেঞ্জিং জায়গা কোথাও নেই৷''

বেঞ্জামিন ভিডমার-এর বিশ্বাস, চক্রাকার এক অর্থনৈতিক কাঠামো কার্যকর হতে পারে৷ স্পিৎসব্যার্গেন দ্বীপে তিনি এর প্রমাণ দিতে চান৷

আক্সেল রোভোল্ট/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান