মৃত্যুর এত বছর পরেও, এলভিস এলভিসই
দুনিয়া জুড়ে মানুষ আজও এলভিস প্রেসলির ফ্যান – জার্মানিও তার কোনো ব্যতিক্রম নয়, বিশেষ করে ‘দ্য কিং অফ রক-’ন’-রোল’ যখন অ্যামেরিকান জিআই হিসেবে জার্মানিতে ছিলেন ও হবু বধূ প্রিসিলার সঙ্গে তাঁর এখানেই প্রথম দেখা হয়৷
মফস্বল থেকে আসা এক তরুণ
মিসিসিপি রাজ্যের টিপেলো-তে জন্মগ্রহণ করলেও, এলভিসের নাম আজ জড়িত টেনেসি রাজ্যের মেমফিস শহরের সঙ্গে৷ ছবিতে মেমফিসের সুবিখ্যাত সান স্টুডিওতে একটি গান রেকর্ড করছেন এলভিস৷ দু’বছর পরে ‘হার্টব্রেক হোটেল’ গানটি তাঁকে তারকার খ্যাতি এনে দেয়৷
জার্মানিতে ‘জিআই’
বাধ্যতামূলক সামরিক সেবায় এলভিসকে জার্মানিতে আসতে হয় ১৯৫৮ সালে; থাকেন ১৯৬০ সাল অবধি৷ সৈন্যশিবিরে না থেকে, এলভিস থাকেন বাড নাউহাইম শহরের একটি হোটেলে – সেখানে তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর দাদি, তাঁর বাবা ও দু’জন বডিগার্ড৷ হোটেলে এলভিসের ঘরটি আগের মতোই রাখা আছে, যদিও অতিথিরা ‘এলভিস রুম’-এ রাত্রিযাপন করতে পারেন৷
মেড ইন জার্মানি
জিআই হিসেবে এলভিসের কনসার্ট দেবার কথা নয়, তবুও তাঁর দু’টি হিট গান, ‘ওয়ান নাইট’ ও ‘এ ফুল সাচ অ্যাজ আই’, জার্মানিতেই লেখা৷ এছাড়া জার্মানির একটি জনপ্রিয় লোকগীতি – ‘মুস ইশ ডেন সুম স্টেটেলে হিনাউস’ – এলভিসের গানে হয়েছে ‘উডেন হার্ট’৷
জার্মানিতে এলভিস মিউজিয়াম
২০১১ সালে তিন জন সংগ্রাহক মিলে ড্যুসেলডর্ফের এলভিস মিউজিয়ামটি উদ্বোধন করেন৷ তাদের মধ্যে আন্ড্রেয়াস শ্র্যোয়ার-কে ছবিতে দেখা যাচ্ছে; মাথার উপর নোটিশে লেখা রয়েছে: ‘যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বৃহত্তম এলভিস স্মৃতিচিহ্নের সংগ্রহ’৷ প্রায় ৬০০টি স্মারক রাখা রয়েছে এখানে, তার মধ্যে বেশ ক’টি এলভিসের জিআই আমলের নিদর্শন৷
প্রিয়সখা, চিরবঁধু?
জার্মানিতে জিআই হিসেবে থাকাকালীন এলভিসের দেখা হয় এক মার্কিন সামরিক অফিসারের চতুর্দশী কন্যা, প্রিসিলা বোলিউ-এর সাথে৷ এর বহু বছর পরে – ১৯৬৭ সালে – উভয়ের বিবাহ হয় লাস ভেগাসের অ্যালাডিন হোটেলে৷ অবশ্য এলভিসের কোনোদিনই বান্ধবীর অভাব ঘটেনি৷
এলভিসের ড্রেস
শোনা যায়, একবার স্টেজে প্যান্টের সেলাই খুলে যাওয়ার পরে নাকি এলভিস তাঁর মার্কামারা ‘জাম্পসুট’ পরতে শুরু করেন৷ ইন্ডিয়ানা রাজ্যের চার্লস্টন শহরের বিঅ্যান্ডকে কোম্পানিরই একমাত্র এলভিস ছাঁটের জাম্পসুট তৈরি করার লাইসেন্স আছে – এলভিসের সাবেক ড্রেস ডিজাইনাররা কোম্পানিটিকে এই লাইসেন্স দিয়েছেন৷ কাজেই ফ্যান বা এলভিস নকলদের এই ড্রেস পাওয়ার জন্য চার মাস অবধি অপেক্ষা করতে হতে পারে৷
সারা দুনিয়ায় এলভিস ইম্পার্সোনেটর
প্রতিবছর জার্মানির বাড নাউহাইমে একটি আন্তঃ-ইউরোপীয় এলভিস ফেস্টিভাল আয়োজিত হয় – এলভিস অনুকরণকারীরা এসে ভিড় করেন এখানে৷ বিশ্বের ৩৮টি দেশে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এলভিস ফ্যান ক্লাব আছে৷ এলভিসের প্রতিকৃতি নিয়ে প্রথম ডাকটিকিট বের হয় স্পেনে, ১৯৭৮ সালে; জার্মানিতে এলভিস ডাকটিকিট বার হয় ১৯৮৮ সালে৷
এলভিস আজও অর্থোপার্জন করে চলেছেন
১৯৭৭ সালের ১৬ই আগস্ট এলভিস পরলোকগমন করেন, তাঁর গ্রেসল্যান্ড বাসভবনে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আজ হোয়াইট হাউসের পরেই যে বাসভবনটি দেখতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসেন, সেটি হল গ্রেসল্যান্ড৷ গ্রেসল্যান্ড চালায় এলভিস প্রেসলি এন্টারপ্রাইজেস নামের একটি মাল্টিমিলিয়ন ডলার কোম্পানি৷ প্রতিবছর ফোর্বস পত্রিকায় পরলোকগত সেলিব্রিটিদের আয় নিয়ে যে তালিকাটি প্রকাশিত হয়, নিয়মিতভাবে তার শীর্ষে থাকেন এলভিস৷
দ্য কিং ইজ ডেড, লং লিভ দ্য কিং
প্রতিবছর এলভিসের মৃত্যুবার্ষিকীতে গ্রেসল্যান্ডের সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে এলভিস ফ্যানরা দ্য কিং অফ রক-’ন’-রোল-কে স্মরণ করেন৷ ২০০৭ সালে এলভিসের ৩০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে সাড়ে সাত হাজার মানুষ এই ‘ক্যান্ডললাইট ভিজিল’-এ অংশগ্রহণ করেন৷