1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মৃত্যু উপত্যকা নিউ ইয়র্ক

২ এপ্রিল ২০২০

করোনার অভিঘাতে এক দিনে সব চেয়ে বেশি মৃত্যু দেখলো অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং স্পেন।

https://p.dw.com/p/3aKXz
ছবি: picture-alliance/AP/J. Minchillo

ভয়াবহ বললেও কম বলা হয়। বুধবার দিনটিকে এই সময়ের অন্যতম 'অভিশপ্ত' দিন হিসেবে চিহ্নিত করলেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। একই দিনে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং স্পেনে করোনার দাপটে সব চেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটল। অ্যামেরিকায় মোট আক্রান্ত ছাড়িয়ে গেল দুই লাখ। বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেল নয় লাখ। ফের আশঙ্কা প্রকাশ করল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনায় আক্রান্ত রোগীর অনুভূতি

কার্যত হাসপাতালে পরিণত হয়েছে অ্যামেরিকার নিউ ইয়র্ক শহর। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন প্রায় এক হাজার ৩০০ জন। শুধু নিউ ইয়র্কেই মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়ে গিয়েছে ৮৩ হাজার। মার্কিন প্রশাসন জানিয়েছে, শুধু বুধবারেই অ্যামেরিকায় করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৮৮৪ জনের। যা এখনও পর্যন্ত এক দিনে সব চেয়ে বেশি। গোটা দেশে এখনও পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৬০০ জনের। এর মধ্যে কেবল নিউ ইয়র্কেই মৃত্যু হয়েছে প্রায় এক হাজার ৪০০ মানুষের। বস্তুত নিউ ইয়র্কই এখন মহামারির ভরকেন্দ্র। নিউ ইয়র্ক প্রশাসন জানিয়েছে, সাধারণ মানুষ তো বটেই, ভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে রাজ্যের পুলিশ এবং আপৎকালীন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের মধ্যেও। নিউ ইয়র্ক প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শুধুমাত্র পুলিশেই ১৬ শতাংশ কর্মী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে এক হাজার কর্মীর শরীরে করোনা ভাইরাস মিলেছে। দমকলের দুই হাজার ৮০০ কর্মীকে অসুস্থতার কারণে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের ২৫ শতাংশ অসুস্থ। তাঁদের অনেকের শরীরেই সংক্রমণ ছড়িয়েছে। বস্তুত, এই অসুস্থ হয়ে পড়া স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই লাগাতার সমাজ মাধ্যমে তাঁদের ক্ষোভ জানিয়ে যাচ্ছেন।

অভিযোগ, চিকিৎসাকেন্দ্র গুলিতে মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার ইত্যাদি প্রয়োজনের চেয়ে অনেক কম। ফলে বাধ্য হয়েই তাঁদের ঝুকি নিতে হচ্ছে। এরই মধ্যে বুধবার বিল গেটসের অনুদানে চলা একটি সংগঠন অ্যামেরিকায় সম্ভাব্য মৃত্যুর একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে ৯৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে। যার মধ্যে কেবলমাত্র নিউ ইয়র্কেই মারা যেতে পারেন ১৬ হাজার লোক। তবে হোয়াইট হাউসের তথ্য পরিসংখ্যান আরও বেশি। মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্য, সামাজিক দূরত্বের বিধি না মানলে অ্যামেরিকায় সব মিলিয়ে এক লাখ থেকে দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।

বুধবার যুক্তরাজ্যও সব চেয়ে বেশি করোনা মৃত্যু দেখলো। এক দিনে সেখানে মৃত্যু হয়েছে ৫৬৩ জনের। সব মিলিয়ে সেখানে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন দুই হাজার ৩৫২ জন। আর স্পেনে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ৮৬৪ জন। যার জেরে সেখানে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল প্রায় সাড়ে নয় হাজার।

যুক্তরাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার ফের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, 'এ এক অভিশপ্ত দিন'। তবে একই সঙ্গে দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, সকলে নিয়ম মেনে চললে এই মহামারির হাত থেকেও মুক্তি মিলবে। যুক্তরাজ্য দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।

ইটালির জন্য অবশ্য বুধবার ততটা ভয়াবহ ছিল না। সেখানকার প্রশাসনের বয়ান, এ দিন অপেক্ষাকৃত ভাবে কম মৃত্যু ঘটেছে সে দেশে। আক্রান্তের হারও ধীরে ধীরে কমছে। এর মধ্যেই ইটালিতে মৃত্যু হয়েছে ১৩ হাজার ১৫৫ জনের। এখনও আক্রান্ত বহু। ভয়াবহ অবস্থা ফ্রান্সেও। এক দিনে সেখানে মৃত্যু হয়ছে ৫০৯ জনের। মোট মৃতের সংখ্যা চার হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে।

ইউরোপ এবং অ্যামেরিকা যখন নাজেহাল, একই পরিস্থিতি তখন মধ্যপ্রাচ্যেও। কাতার, কুয়েতে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে ইরানে। বুধবার পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ইরানে মৃত্যু হয়েছে তিন হাজারেরও বেশি। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা।

ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে আপাতত স্থগিত হয়েছে পরিবেশ সম্মেলন। এ বছর সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল স্কটল্যান্ডে। এ বছরের মতো বাতিল হয়েছে টেনিসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহ্যবাহী টুর্নামেন্ট উইম্বেলডন। বাতিল, ফুটবলের গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়নশিপও।

এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)