1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মূল্যবৃদ্ধি এবং মধ্যবিত্তের মগজধোলাই

১১ মার্চ ২০২২

যুদ্ধ হলে জিনিসের দাম বাড়ে, ভোট হলে জিনিসের দাম বাড়ে, প্রকৃতি বিরূপ হলেও বাড়ে। তাতে বেশি বিপাকে পড়ে মধ্যবিত্ত।

https://p.dw.com/p/48Me4
ছবি: DW/S. Ghosh

আপাতত কয়েকদিন বাটা মাছ খেতে হবে। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের মুখে এ কথা শোনা মানেই ছিল পরদিন সকালে খবরের কাগজের হেডলাইন হবে-- 'মূল্যবৃদ্ধির জের, মধ্যবিত্তের পকেটে টান'।

সে দিন গেছে। ইদানীং মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে খবরের কাগজের হেডলাইন করার ইচ্ছা বা প্রবণতা কোনোটাই আর তেমন নেই। ভারতে পেট্রোল-ডিজেলের দাম লিটার প্রতি ১০০ টাকা পেরনোর পর দিনকয়েক সংবাদমাধ্যম খানিক লাফালাফি করেছিল। তারপর আবার যে কে সেই। খবরের ভিড়ে হারিয়ে গেছে মূল্যবৃদ্ধি। কেবল বাজারের থলেই জানে গ্রাহকের পকেটের হাল।

একটা ছোট্ট হিসেব দেওয়া যাক। মাসছয়েক আগেও ভোজ্য তেলের দাম প্রতি লিটার ১০০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে ছিল। গত কয়েকমাসে তা বেড়ে লিটার প্রতি ২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। গতবছরের তুলনায় শীতকালীন তরিতরকারির দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। চাল-ডালের দাম মাঝে বেড়ে গেছিল অনেকটাই, এখন খানিকটা নিয়ন্ত্রণে। আর জ্বালানি? বাড়তে বাড়তে পেট্রোল-ডিজেল এখন লিটার প্রতি একশ টাকার কাছাকাছি। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনের আগে খানিকটা কমেছিল বলে এখন একশ-র নীচে। এবার ফের তা হু হু করে বাড়বে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গ্যাসের দাম সিলিন্ডার প্রতি এক হাজার টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

কিন্তু এসবের প্রভাব অতি দরিদ্রের উপর সেভাবে পড়ে না। ভারতে তারা বিনা পয়সায় রেশন পান। বিনামূল্যে গ্যাসের লাইনও দেওয়া হয়। বড়লোকদেরও চিন্তা নেই। তাদের অন্নচিন্তা করতে হয় না। চিন্তা কেবল মধ্যবিত্তের। সময় সময় তাদের রুই থেকে বাটা মাছে চলে যেতে হয়। বন্ধ হয় মাংস।

প্রশ্ন হলো, এই সব কিছুর উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ ঠিক কতটা?

এই প্রশ্নের দুইতিন রকম ব্যাখ্যা হতে পারে। পণ্ডিতরা বলতে পারেন, বাজার অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল দেশে মূল্যবৃদ্ধির উপর সরকারের সেই অর্থে নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কোনো কোনো পণ্যের ক্ষেত্রে সরকার খানিকটা রেগুলেট করতে পারে হয়তো। বস্তুত, সেই রেগুলেট করার সুযোগটাও বন্ধ করে দিতে চেয়েছিল বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার। বিতর্কিত কৃষি আইনে সেই ইঙ্গিত ছিল। চাপের মুখে শেষপর্যন্ত যা বাতিল করতে হয়। কিন্তু তাতেও কি সমস্যার সমাধান হচ্ছে? না, হচ্ছে না। মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ করা যাচ্ছে না।

Syamantak Ghosh
ছবি: privat

যতদিন যাচ্ছে, ভারতের বাজার কেন্দ্রীভূত হচ্ছে কিছু নির্দিষ্ট শিল্পপতির হাতে। জ্বালানি তেল থেকে নুন এবং পান্তা-- প্রায় পুরো পাইকারি বাজারই এখন তাদের হাতে। মজার বিষয় হলো, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমও এখন নিয়ন্ত্রণ করছে বিগ কর্পোরেট। আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, নির্দিষ্ট কয়েকটি কর্পোরেটের হাতেই এখন ভারতের অধিকাংশ মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যম। ফলে, শুধু বাজার নয়, বাজার নিয়ে কথা বলবে যে সংবাদমাধ্যম, তাদেরকেও নিয়ন্ত্রণ করছে কয়েকটি কর্পোরেট সংস্থা। ফলে বাজার হু হু করে চড়লেও, মধ্যবিত্তের নুন আনতে পান্তা ফুরোলেও সংবাদমাধ্যমে সেই অর্থে তার কোনো প্রতিফলন নেই।

মূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হলো। মজার কথা, একটি রাজ্যেও নির্বাচনী আলোচনায় মূল্যবৃদ্ধির প্রসঙ্গটি জায়গা করে নিতে পারেনি। সাধারণ মানুষও কেমন ধরে নিয়েছে, মূল্যবৃদ্ধির এই নিয়মই বাস্তব। এ নিয়ে বেশি কথা বলে লাভ নেই। ভারতে এখন বাৎসরিক মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ প্রায় সাত শতাংশ। মুদ্রাস্ফীতি চলতে থাকলে মূল্যবৃদ্ধি হবেই, এটা অর্থনীতির সহজপাঠ। সংবাদমাধ্যমের কলম সে কথা প্রতিদিন পাখিপড়ার মতো শিখিয়ে দিচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর রাজনীতিকরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষকে ধর্ম নিয়ে ভাবতে হবে, মন্দির-মসজিদ নিয়ে ভাবতে হবে। জাতপাত নিয়ে ভাবতে হবে। অন্য দেশে হওয়া যুদ্ধ নিয়ে ভাবতে হবে।

মানুষ ভাবছেও তা-ই।