1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মূক-বধির শিল্পীর সাফল্য

২৫ মে ২০১৮

মানুষ তার প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে কী করতে পারে, তার অনেক দৃষ্টান্ত আমাদের মুগ্ধ করে৷ ফিনল্যান্ডের এক সংগীতশিল্পী মূক-বধির হওয়া সত্ত্বেও সব বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে খ্যাতির শিখরে উঠেছেন৷

https://p.dw.com/p/2yIDL
ছবি: signmark.biz

ফিনল্যান্ডের ব়্যাপার সাইনমার্ক কিন্তু নিজে মূক-বধির৷ গোটা বিশ্বে অন্য কোনো সংগীতশিল্পী এমন প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বড় রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন নি৷ তারপর থেকে তিনি অনেক দেশে কনসার্ট করে চলেছেন৷ তবে শুরুতেই এমন নাম-যশ-অর্থ আসেনি৷ অনেক বছর ধরে তাঁকে সংগ্রাম চালাতে হয়েছে৷ সাইনমার্ক বলেন, ‘‘সে সময়ে আমি প্রথম সিডি তৈরি করেছিলাম৷ সিডি তৈরির কাজ শেষ হতেই ১০-১২টি মিউজিক কোম্পানিতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম৷ কিন্তু আমি মূক-বধির হওয়ায় কেউই সেই সিডি প্রকাশ করতে চায় নি৷ তখন ভাবলাম, আমি নিজেই ১০,০০০ সিডি অর্ডার দেই৷ তারপর রাকসাকে সিডি ভরে হেলসিংকি শহরের কেন্দ্রস্থলে হাঁটতে হাঁটতে সেগুলি মানুষের হাতে তুলে দিলাম৷’’

২০০৯ সালে সাইনমার্ক ইউরোভিশন সংগীত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে চেয়েছিলেন৷ কিন্তু সে যাত্রায় ভাগ্য সদয় হয় নি৷ প্রাথমিক বাছাই পর্বে তিনি দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন৷ কিন্তু ওয়ার্নার মিউজিক তাঁকে পেতে আগ্রহ দেখায়৷ বাস্ অনুভব করেই তিনি সংগীত সৃষ্টি করেন৷ গানের কথায় তাঁরই অভিজ্ঞতার প্রতিফলন পাওয়া যায়৷ তিনি যে নিজে গাইছেন না, তা প্রায় খেয়ালই থাকে না৷

সাইনমার্কের অনেক স্বপ্ন রয়েছে৷ তিনি গোটা বিশ্ব, বিশেষ করে মূক-বধিরদের জগতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে চান৷ এই উদ্যোগের আওতায় তিনি ‘চাবলা’ নামের এক অ্যাপ সৃষ্টি করেছেন৷ এর মাধ্যমে মূক-বধিররা গোটা বিশ্বে টেলিফোন করতে পারেন৷ এক অনলাইন দোভাষীর মাধ্যমে সেটি সম্ভব হচ্ছে৷

নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তিনি একটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘একবার বাড়িতে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ আমি অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে তখন এসএমএস বার্তা পাঠালাম৷ কিন্তু কেউ জবাব দিলো না৷ বিরক্ত হয়ে ভাবলাম, আমাকে কি সেখানে গিয়ে খোঁজ নিতে হবে? সমস্যা কোথায়? এমন কত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়৷ তাই ‘চাবলা’ থাকলে অনেক সুবিধা হয়৷ সেটি দিয়ে সহজে ফোনে কথা বলা যায়, যেমন ডাক্তারের সঙ্গে৷’’

তিনি নিজে এক কোম্পানি খুলে মানবাধিকারের জন্য কাজ করছেন৷ তাঁর কাজ সবার পছন্দ হয় না৷ ইমেলের মাধ্যমে হত্যার হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘৃণার বার্তা তাঁর কাছে গা-সওয়া হয়ে গেছে৷ তিনি মোটেই দমে যাবার পাত্র নন৷ তিনি হিমালয় পর্বতে সংগীত পরিবেশন করে এক জনহীতকর প্রকল্পের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন৷ সাইনমার্ক বলেন, ‘‘স্বপ্ন যে বাস্তবে পরিণত করা যায়, তা আমি দেখিয়ে দিতে চাই৷ চাইলে পাহাড়ে উঠে সংগীত সৃষ্টি করা যায়৷ কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এগোলে সফল হওয়া যায়৷ লোকে বলে, তুমি সংগীত সৃষ্টি করতে পারো না, তুমি মূক-বধির৷ কিন্তু সেটা ঠিক নয়, আমি অবশ্যই পারি৷’’

কয়েক বছর আগে ফিনল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সেটা টের পেয়েছেন৷ ফিনল্যান্ডের সমাজে প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের মানুষকে সম্পৃক্ত করার উদ্যোগে সাইনমার্ক-এর চেয়ে ভালো দূত খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়৷ সাইনমার্ক এই সম্মান পেয়ে অভিভূত৷

হানে কাইসিক/এসবি