1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুশফিকের সেঞ্চুরিতে সবার উপরে বাংলাদেশ

নোমান মোহাম্মদ ঢাকা
২৫ মে ২০২১

মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি হবে তো? ম্যাচটি শেষ হতে পারবে তো? বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ওয়ানডের সবচেয়ে বেশি রোমাঞ্চ ছিল এই দুটি প্রশ্ন ঘিরে। কারণ বৃষ্টি। মুশফিক সেঞ্চুরি পেয়েছেন। বাংলাদেশও পেয়েছে জয়।

https://p.dw.com/p/3twYM
Kricket Bangladesh und Sri Lanka in Mirpur, Dhaka
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP

যে জয়ের গুরুত্ব বেড়ে যাচ্ছে দুটো কারণে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইতিহাসের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয়ের জন্য। এবং ২০২৩ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশের শীর্ষে উঠে যাবার কারণে।

বাংলাদেশের জন্য এই ম্যাচের প্রতিপক্ষ শুধু শ্রীলঙ্কা ছিল না, ছিল বৃষ্টিও। মিরপুরের সকালের আকাশে মেঘের আনাগোনা সেভাবে ছিল না, তবে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বৃষ্টির গুনগুন ছিল ঠিকই। আর বাংলাদেশের ইনিংসেও যেভাবে খেলা বন্ধ হয় দুবার, তাতে হামাগুড়ি দিয়ে আসা আশঙ্কা তীব্রতাই পাচ্ছিল কেবল। দলের পূর্ণ ১০ পয়েন্ট না পাবার এবং মুশফিকের সেঞ্চুরি হাতছাড়া হবার!

আর শেষ পর্যন্ত ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে বাংলাদেশের ১০৩ রানে জেতা ম্যাচের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর অংশটি যে ছিল মুশফিকের সেঞ্চুরির আগের পর্বটি, সেটি বলা যায় নিঃসন্দেহে।

হবে না কেন? প্রথমবার বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হবার সময় ৪১.১ ওভারে ৭ উইকেটে ১৯৬ রান বাংলাদেশের। ১০৬ বলে ৮৫ রানে অপরাজিত মুশফিক। কিছুক্ষণ পর খেলা শুরু হয় ঠিকই, বৃষ্টির লুকোচুরি ফুরোয় না। ১৪ বল পর তাই আবার কাভারে ঢাকা ক্রিজ। আঁধারে ঢাকা মুশফিকের মুখ। নিজের রান যে বাড়িয়ে নিয়েছেন ৯৬-তে! ‘ট্র্যাজিক হিরো' হওয়াটাই যেন তখন ভবিতব্য। বৃষ্টির কারণে যদি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের আর সময় না থাকে!

Kricket Bangladesh und Sri Lanka in Mirpur, Dhaka
মুশফিকুর রহিম: শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে খেলেন ১২৭ বলে ১২৫ রানের ঝকঝকে ইনিংসছবি: Munir Uz Zaman/AFP

সেটি হয়নি। তবে রোমাঞ্চ-উত্তেজনা শেষ হয়নি তাতেও। আবার খেলা শুরু হয়ে প্রথম বলে দুই, পরের বলে এক রান নিয়ে মুশফিক পৌঁছে যান ৯৯-তে। নাছোড়বান্দা বৃষ্টি অনাহূত অতিথির মতো ফেরে আবারও। এ অবস্থায় ওভারের শেষ বলে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন সিঙ্গেল নিয়ে স্ট্রাইক নিজের কাছে রাখলে আবার টেনশন। যা প্রকট দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে যেমনি, তেমনি ডাগআউটে বাংলাদেশ দলের টিম লিডার খালেদ মাহমুদ সুজনের বিরক্তির অভিব্যক্তিতে।

কিন্তু বৃষ্টি এতটা নির্দয় হয়নি। ঝুমঝুমিয়ে নামেনি তাই। পরের ওভারে বাউন্ডারি মেরেই নিজের অষ্টম ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নেন মুশফিক। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে খেলেন ১২৭ বলে ১২৫ রানের ঝকঝকে ইনিংস। তাতেই ২৪৬ রানের পুঁজি পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। বাকি কাজটুকুন বোলারদের। এবং অতি অবশ্যই বৃষ্টির খামখেয়ালের।

খেয়ালী বৃষ্টি আরেক দফা ঝরেছে ঠিক। কিন্তু  তা আর বাংলাদেশের স্নায়ুর পরীক্ষা নেয়নি। কারণ, ততক্ষণে শ্রীলঙ্কার রান ৩৮ ওভারে ৯ উইকেটে ১২৬। খেলা হলে শেষ উইকেট তুলে নেবে; না হলে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জিতবে। এই তো সমীকরণ।

বৃষ্টি যখন আবার খেলা শুরুর অনুমোদন দেয়, তখন শ্রীলঙ্কার ইনিংসের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪০ ওভারে। টার্গেট ২৪৫ রান। অর্থাৎ, শেষ ১২ বলে করতে হবে ১১৯ রান। ম্যাচজুড়ে টেনশনে রাখা বৃষ্টি তখন বাংলাদেশের কাছে রীতিমতো হাসির খোরাক। শ্রীলঙ্কা ৯ উইকেটে ১৪১ রানে থেমে গিয়ে ম্যাচ হেরে যায় ১০৩ রানে। বিধ্বংসী জয়ে বাংলাদেশ উঠে যায় ২০২৩ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।

৮ ম্যাচে ৫ জয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট এখন ৫০। ইংল্যান্ড, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার ৪০ পয়েন্ট পেরিয়ে টেবিলে সবার উপরে তাই। ১৩টি দেশের বাছাইপর্বে স্বাগতিক ভারতের বাইরে পয়েন্ট টেবিলের অন্য সাত দলের মধ্যে থেকে ২০২৩ বিশ^কাপ সরাসরি খেলার চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের। ৮০ পয়েন্টের মধ্যেই ৫০ পয়েন্ট পেয়ে সে পথে অনেকটা এগিয়ে গেল তামিমের দল।

সেজন্য সবচেয়ে বড় ধন্যবাদটা অধিনায়ক অবশ্যই দেবেন বন্ধু মুশফিককে।

সিরিজে দ্বিতীয় ওয়ানডের শুরুটা বাংলাদেশের জন্য প্রথম ওয়ানডের মতোই। টস জিতে আবারও ব্যাটিং। প্রথম খেলায় ৪৩ রানে দুই উইকেট পড়েছিল। এদিন ১৫ রানেই। তিন বাউন্ডারিতে দারুণ শুরু করা তামিম ৬ বলে ১৩ রান করে এলবিডাব্লু। রানের খাতা খোলার আগে তৃতীয় বলেই আউট সাকিব। আরেকবার তাই দলের বিপর্যয়ের মুখে ক্রিজে যান মুশফিক।

আগের ম্যাচে ৯৯ রানে চতুর্থ উইকেট পড়ে যেতে দেখেছেন। এবার ৭৪ রানে। অনেক সমালোচনা সত্ত্বেও একাদশে টিকে যাওয়া লিটন দাস (৪২ বলে ২৫) থিতু হয়ে উইকেট বিলিয়ে আসার দোষে দুষ্ট। মোঃ মিঠুনের জায়গায় খেলা মোসাদ্দেক হোসেন (১২ বলে ১০) আরো বাজে শট খেলে আউট; লেগ সাইডের যে বল ছেড়ে দিলে হতো ওয়াইড।

তবে সতীর্থদের এ ব্যর্থতার মিছিল স্পর্শ করতে পারে না মুশফিককে। ঋষির মগ্নতায় ব্যাটিং করে গেছেন। আগের ম্যাচের মতোই মাহমুদ উল্লাহর সঙ্গে জুটিতে বিপর্যয় সামলান। ফিফটিতে পৌঁছান ৭০ বলে। তাতে বাউন্ডারি মাত্র একটি। এরপর মাহমুদ উল্লাহ (৫৮ বলে ৪১), আফিফ হোসেন (৯ বলে ১০) ও মেহেদী হাসান মিরাজরা (২ বলে ০) আউট হলেও চিড় ধরে না মুশফিকের মনোসংযোগে।

এরপর তো এলো বৃষ্টি। তাতে এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে। সেঞ্চুরির হাতছানিতে হাত খুলেছে মুশফিকের। আগের ম্যাচে ৮৭ বলে ৮৪ রান করে রিভার্স সুইপে আত্মাহুতি দিয়ে এসেছেন। এদিন তা হয়নি। ১১৪ বলে পৌঁছে যান জাদুকরী তিন অংকে। মুখোমুখি হওয়া শেষ ২১ বলে ৪০ রান তুলে দলের স্কোর নিয়ে যান ২৪৬-এ। এর অর্ধেকের বেশি রানই আসে মুশফিকের ব্যাট থেকে।

মিরপুরের ধীরগতির উইকেটে লঙ্কানদের বিপক্ষে সেটাই জয়ের জন্য যথেষ্ট হবার কথা। ভয় ছিল তবু দুটি জায়গায়। বৃষ্টির কারণে ওভার কমে এলে সমীকরণ কী দাঁড়ায়। এবং বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বলে কতটা কার্যকর হতে পারেন মুস্তাফিজ ও স্পিনাররা। মিরাজ-মুস্তাফিজের তিনটি করে এবং সাকিবের দুই উইকেটে সব জয় করেই শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিস্ফোরক জয়।

এ ম্যাচের চিত্রনাট্য তাই বাংলাদেশের জন্য লেখা হয়নি বিষাদমাখা আকাশের মেঘের কালিতে। লেখা হয়েছে মুশফিকুর রহিম নামের এক ক্রিকেট-শিল্পীর ব্যাটের তুলিতে।