মুরমস্তেভা : যুদ্ধে হার না মানা এক ব্যালেরিনা
২০২২ সালে ইউক্রেন ছাড়ার সময় গানা মুরমস্তেভার মনে হয়েছিল চাইকভস্কির সোয়ান লেক ব্যালেতে হয়ত আর কখনো পারফর্ম করা হবে না৷ কিন্তু একেবারে আলাদা এক দর্শন নিয়ে সগর্বে আবার মঞ্চে ঝড় তুলছেন তিনি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
কিয়েভের ব্যালেরিনা
গানা মুরমস্তেভার জীবনও ইউক্রেন যুদ্ধে দেশছাড়া, ঘরছাড়া হয়ে সব হারানোর আরেক গল্প৷ ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি কিয়েভে তার ব্যালে নাচের শেষ প্রদর্শনীর দিনও মনে আশা ছিল হঠাৎ শুরু হওয়া রাশিয়ার হামলা শিগগিরই বন্ধ হবে, যুদ্ধ থামবে, কিয়েভবাসীর মন আবার মাতাবেন নেচে নেচে৷
আশাভঙ্গ
কিন্তু রাশিয়ার বোমাবর্ষনের তোড়ে ২০২২ সালের ৩ মার্চ সব আশা মুছে গেল মুরমস্তেভার মন থেকে৷ ২৯ বছর বয়সি ব্যালেরিনা বুঝতে পারলেন প্রিয় স্বদেশে জীবন আর নিরাপদ নয়৷ সেই রাতেই ভিড়ে ঠাসা এক ট্রেনে উঠে ইউক্রেনের দক্ষিণ প্রান্তে যাত্রা শুরু করলেন প্রাণ বাঁচাতে৷
মা-মেয়ের পুনর্মিলন
মুরমস্তেভা কিয়েভ ছাড়লেও তার মা আর দাদীর পক্ষে ট্রেনের এত ভিড় সামলানো সম্ভব ছিল না৷ তাই মা আর দাদীকে দ্রুত কিয়েভ থেকে সরানোর একটা তাগিদ ছিল৷ অনেক চেষ্টার পর মুরমস্তেভা এমন এক ড্রাইভার খুঁজে পেলেন যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই নারীকে লভিভ শহরে নিয়ে আসতে রাজী৷ ব্যস, লভিভে মা-মেয়ে, দাদী-নাতনীর দেখা হলো আবার৷
শরণার্থীর জীবন
মা আর দাদীকে নিয়ে লভিভ থেকে বেলজিয়ামে চলে যান মুরমস্তেভা৷ অস্তিত্ব রক্ষাই তখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ৷ ব্যালে নিয়ে ভাবনা-চিন্তার সময় সেটা নয়, তেমন কোনো সুযোগও আসলে ছিল না৷ সেরকম সুযোগ এলো বেলজিয়াম থেকে জার্মানিতে পাড়ি জমানোর পর৷ শরণার্থী হিসেবে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাকে নতুন করে ব্যালেরিনার জীবন শুরু করার সুযোগও দেয় জার্মান সরকার৷
পায়ে আবার ব্যালের জুতো
গত বছর জার্মানিতে থাকার সময় মুরমস্তেভার হাতে আবার ব্যালের বিশেষ ধরনের জুতো তুলে দেয়া হয়৷ এর পাশাপাশি তাকে ব্যালে-চর্চার জায়গাও দেয় জার্মান সরকার৷
‘রাজহাঁস’ মুরমস্তেভা
ব্যালেরিনা হিসেবে ক্যারিয়ার এগিয়ে নেয়ার ভালো সুযোগ পাওয়ায় জার্মানি থেকে হাঙ্গেরিতে চলে যান মুরমস্তেভা৷ বুদাপেস্টের অপেরা হাউজে পারফর্ম করার আজন্মলালিত স্বপ্নটা তার জন্য এখন বাস্তব! আবার তিনি বিশাল হলরুমে দর্শকদের মুগ্ধ করার সুযোগ পেয়েছেন৷ অপেরা হাউসে চাইকোভস্কির সেই সোয়ান লেক ব্যালের দুই কেন্দ্রীয় চরিত্র, অর্থাৎ সাদা রাজহাঁস ওডেটে আর কালো রাজহাঁস ওডিলেও হতে পারছেন মুরমস্তেভা৷
যুদ্ধ-জীবনে অভ্যস্ত মুরমস্তেভা
হাঙ্গেরি স্টেট অপেরা এক বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ করেছে তাকে৷ ফলে বুদাপেস্টে বাসা ভাড়া নিয়েছেন৷ প্রবাসজীবনে অভ্যস্ত হতে কষ্ট হয়েছে কিনা জানতে চাওয়ায় ব্যালেরিনা বললেন,‘‘ একসময় আমরা বলতাম ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স করতে হয়, এখন আমরা ওয়ার-লাইফ ব্যালেন্স করি৷’’ ইউক্রন যুদ্ধ গত এক বছরে যুদ্ধের ভয়াবহতা মেনে জীবনযাপন শিখিয়ে দিয়েছে গানা মুরমস্তেভাদের৷