1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তি মিললেও মিলছে না মুক্তির পথ!

১২ অক্টোবর ২০১৯

সঙ্গীত শিল্পী হিসেবে চাকরি দেয়ার কথা বলে ১৫ বছর বয়সে প্রিয়াকে ভারতে পাচার করে দেন তার এক আত্মীয়৷ এরপর সেখানে যৌন ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করা তাকে৷

https://p.dw.com/p/3RB0e
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages

পশ্চিমবঙ্গের একটি পতিতালয় থেকে কয়েক দফা পালানোর চেষ্টা করেও পালাতে পারেননি প্রিয়া৷ ভাগ্যের জেরে এক পুলিশি অভিযানে অনেকের সঙ্গে পতিতালয় থেকে উদ্ধার পেয়েছেন তিনি৷ কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিল প্রক্রিয়ার কারণে তিন বছরেও দেশে ফেরার প্রহর শেষ হচ্ছে না তার৷

বর্তমানে ২৪ বছর বয়সি প্রিয়া পশ্চিমবঙ্গের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন৷ তার সঙ্গে আরো ১৮০ জন বাংলাদেশি নারীকে উদ্ধার করা হয়েছিল৷ তবে ভারত ও বাংলাদেশের জটিল ও দীর্ঘ আমলাতান্ত্রিত প্রক্রিয়ার কারণে প্রিয়ার মত অনেকে এখনো দেশে ফেরার ছাড়পত্র পাননি৷ যারা দেশে ফিরেছেন তাদেরও লেগে গেছে কয়েক বছর৷

‘‘আমি আর কত দিন অপেক্ষা করব?'' নিজের প্রকৃত নাম, পরিচয় গোপন করে পতিতালয়ে পাওয়া নাম জানিয়ে বলেন প্রিয়া৷ আশ্রয়কেন্দ্রে নিজের কক্ষে বসে তিনি বলেন, ‘‘তারা আমার কাছে ফেরার দিন জানতে চাইলে আমি বলবো, আমি আর যাব না৷''

থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশনের এক বিশ্লেষণ বলছে, দেশে ফিরতে ইচ্ছুক এমন ভুক্তভোগীবাকর্মী, বিচারক, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, উভয় দেশের আমলাদের অনুমোদন নেওয়াসহ প্রায় ১৫টি ধাপ পার করতে হয়৷৷ এস প্রক্রিয়া শেষে মেলে দেশে ফেরার অনুমতিপত্র৷

ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশই পাচার হওয়াদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া তরান্বিত করার চেষ্টা করলেও এখনও তাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়৷

থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন বলছে, এর ফলে বাড়ি ফিরে নতুন করে জীবন শুরুর প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে পারে এবং তারা আবারো পাচারের ঝুঁকিতে পড়তে পারেন৷

বাংলাদেশে থেকে যারা পাচার হয়ে যান তাদের নিয়ে কাজ করে জাস্টিস অ্যান্ড কেয়ার৷ এই সংস্থাটির তরিকুল ইসলাম বলেন, "আশ্রয়কেন্দ্রে বাস করা ... বেদনাদায়ক হতে পারে৷ যখন তারা দুই বছর বা তারও বেশি সময় পর ফিরে আসে, তখন পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য করা তাদের জন্য কষ্ট হয়ে যায়৷'' 

‘‘কেউ বাড়ি ফেরার পরেও পাচারকারীরা তাদের খোঁজ রাখে৷ যখন দেখে যে, দেশে ফিরেও সে কোনো কাজ পাচ্ছে না বা মানিয়ে নিতে পারছে না তখন সে আবার তাকে পাচারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে৷''

প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া নারীদের বেশিরভাগই পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত হয়৷ তবে এ নিয়ে সরকারি তথ্য নেই৷

গত আট বছরে ভারত থেকে এক হাজার ৭৫০ জন পাচার হওয়া নারীকে ফিরিয়ে এনেছে বাংলাদেশ৷ এদের বেশিরভাগই পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রে পাচার হয়েছিল

প্রত্যাবাসনের গতি বাড়াতে ২০১৫ সালে ভারত ও বাংলাদেশ একটি সমঝোতায় আসে৷ এটি কার্যকর করতে উভয় দেশ শিগগিরই একটি চুক্তি করবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন৷

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ফেরদৌসী আক্তার বলেন, প্রত্যাবাসান প্রক্রিয়া শেষ করতে ১৮ থেকে ২২ মাস সময় লাগে৷ তবে বিভিন্ন সংস্থাগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়া শেষ করতে ছয় পর্যন্ত লেগে যায়৷

ফেরদৌসী বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীকে ভারত থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য অনেক স্তরের মধ্য দিয়ে যেতে হয়৷ আমরা এই স্তরগুলো কমিয়ে আনতে আলোচনা করছি৷ ...ক্ষতিগ্রস্থরা অবশ্যই দ্রুততম সময়ে ফিরতে পারবেন৷''

ঢাকার উপকণ্ঠে বসবাসকারী বাসিরন জানান, তার দুই মেয়ে নিখোঁজ হওয়ার এক বছর পর ভারতের একটি পতিতালয়ে তাদের সন্ধান মেলে৷

৪৭ বছর বয়সি এই নারী বলেন, "আমি যখন এই সংবাদটি শুনলাম তখন আমি আর্তনাদ করেছিলাম, আমার মনে হয়েছিল আমার বুক ফেটে যাচ্ছে৷''

তার মেয়েদের বয়স এখন ১৬ ও ১৭ বছর জানিয়ে বাসিরন বলেন, ২০১৭ সালে তাদের পশ্চিমবঙ্গের একটি পতিতালয় থেকে উদ্ধার করা হয়৷ সেখানে তাদের একটি ঘরে রাখা হত, মারধর করা হত, জোর করে নেশা করিয়ে ধর্ষণ করা হত৷

দুই বছর পরেও এই দুই নারী বাড়ি ফেরার অপেক্ষা করছে৷ কবে তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হবে নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছে না৷

রোলি শ্রীভাস্তাভা ও নাইমুল করিম/এসআই/কেএম (থমসন রয়টার্স ফাউন্ডেশন) 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য