মিয়ানমারের যে স্কুলে সব ধর্মের সমান সুযোগ
মিয়ানমারে এমন এক স্কুল আছে যেখানে শিশুদের শেখানো হয় ধর্মে, বর্ণে যে যা-ই হোক না কেন, পৃথিবী সুন্দর হয় মিলেমিশে থাকলে৷ শেখানো হয়, লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলাও করতে হবে, কারণ, খেলাধুলা সবাইকে এক হয়ে চলতে শেখায়!
শিশুদের আনন্দনিবাস
মিয়ানমারের মান্দালয় শহরের ফাউং ডাও উ স্কুল৷ সেখানে গেলেই দেখবেন, শিশুরা লেখাপড়ার ফাঁকে চুটিয়ে আনন্দ করছে, ফুটবল খেলছে৷ আসল বল না থাকলে, চটের ব্যাগ বা কাপড় গোল করে বেঁধে তা নিয়েই তারা নেমে পড়ে মাঠে৷ ফাউং ডাও উ স্কুল বাচ্চাদের শুধু লেখাপড়াই শেখায়না, শরীর সুস্থ আর মনটাকে আনন্দে রাখতেও শেখায়৷
খেলো নয়তো দেখো
স্কুলে বিরতির সময় শিক্ষার্থীদের সামনে দুটো পথ খোলা থাকে, ১. খেলা ২. খেলা দেখা৷ এর বাইরে অন্য কিছু করার কোনো উপায় নেই৷ তাই খেলোয়াড় বা দর্শকের অভাব হয়না ফাউং ডাও উ স্কুলে৷
পুরো স্কুলই যেন খেলা দেখার গ্যালারি
স্কুলের মূল ভবন দুটি৷ একটিতে শ্রেণিকক্ষ, শিক্ষকদের বিশ্রামাগার, প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় এবং প্রশাসনিক কার্যালয়, অন্যটি শিক্ষার্থীদের আবাস৷ যে কোনো ভবনের ব্যালকনিতে বসে বা দাঁড়িয়ে দিব্যি স্কুল চত্বরের খেলা দেখা যায়৷
খেলার আনন্দ
ফাউং ডাও উ কনভেন্ট স্কুল থেকে চেঁচামেচির শব্দ ভেসে এলেও একটু দূরে থাকা স্থানীয়দের বুঝতে অসুবিধা হয়না যে, বাচ্চারা খেলছে৷ যেখানেই একটু ফাঁকা জায়গা, শিক্ষার্থীরা সেখানেই আসল বা কাপড়ের তৈরি নকল বল নিয়ে খেলা শুরু করতে একটুও দেরি করেনা৷
সাইকেল চালিয়ে স্কুলে
ফাউং ডাও উ স্কুলের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ হাজারের মতো৷ কিন্ডারগার্টেন থেকে হাইস্কুল পর্যন্ত থাকায় সব ক্লাসের ছেলে-মেয়েরাই পড়ে এখানে৷ মাত্র সাড়ে চারশ শিক্ষার্থীর জন্য স্কুলে থাকার ব্যবস্থা আছে৷ বাকিরা বাড়ি থেকে হেঁটে বা সাইকেল এসে ক্লাস করে৷ ছবির এই ছোট শিশুটির মতো অনেক ছোট ছোট ছেলে-মেয়েও সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায়৷
জার্মানির অবদান
মেয়েদের জন্য আলাদা হোস্টেল আছে ফাউং ডাও স্কুলে৷ হোস্টেলটি তৈরি হয়েছে জার্মান অনুদানে৷ মূলত বিদেশি অনুদানেই গড়ে তোলা হয়েছে ফাউং ডাও স্কুল৷ মিয়ানমারের আলোচিত এই স্কুল নির্মাণে জাপান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াও আর্থিক সহায়তা দিয়েছে৷
শিক্ষার অধিকার সবার
দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা একসময় লেখাপড়ার সুযোগই পেতো না৷ ফাউং ডাও উ স্কুল প্রতিষ্ঠার পর মান্দালয়-এ সে অবস্থায় পরিবর্তন এসেছে৷ এই স্কুলে মূলত দরিদ্র পরিবারের সন্তানদেরই সুযোগ দেয়া হয়৷
বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান পাশাপাশি
মিয়ানমারে বৌদ্ধ-মুসলিম দ্বন্দ্ব-সংঘাতের খবর প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে আসে৷ দাঙ্গার কারণে প্রচুর মুসলমান দেশ ছাড়তেও বাধ্য হয়েছেন৷ তবে মান্দালয়-এর এই স্কুলে ধর্মীয় বিদ্বেষের কোনো স্থান নেই৷ বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান ধর্মের শিশুরা শান্তিতে মিলেমিশে লেখাপড়া, খেলাধুলা করে সেখানে৷ তাই দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে মান্দালয়ে চলে আসেন শুধু এই স্কুলটি দেখতে৷