মিশরের রাজধানীতে শিশুদের ‘আবর্জনার শহর’
মিশরের রাজধানী যে কায়রো তা তো সবাই জানেন, সেই কায়রোয় যে ‘আবর্জনার শহর’ নামে অসাধারণ এক এলাকা আছে, তা কি জানেন? ১৫০ থেকে ২০০ শিশুর আন্তরিক শ্রমে বিখ্যাত হয়ে ওঠা সেই শহর দেখুন ছবিঘরে...
তেরেসা যখন শিশু
তেরেসা সাঈদের বয়স এখন ৩৪ বছর৷ শৈশবে যেমন কায়রোর আবর্জনায় কাগজ, রং, পেন্সিল খুঁজতেন শিল্পী মনের চাহিদা মেটাতে, এখনো মনের চাহিদা মেটান আবর্জনাকেই শিল্পে রূপান্তরিত করে৷ তবে এখন আর একা নন তেরেসা, ১৫০ থেকে ২০০ শিশু কাজ করে তার সঙ্গে৷
কী কাজ?
কাজটা নতুন নয়৷ শৈশবে তেরেসা কাগজ, তুলি, রং, পেন্সিল খুঁজে বের করে ছবি আঁকতেন তেরেসা৷ কায়রোর কেন্দ্রের বস্তি এলাকা জেবেলিনের জায়গায় জায়গায় আবর্জনা দেখে খুব খারাপ লাগতো তার৷ মনে হতো, এই আবর্জনাকে কি কাজে লাগানো যায় না? কাজে লাগালে আবর্জনা কমতো, শহরটাও সুন্দর থাকতো! স্বাবলম্বী হওয়ার পর থেকে স্থানীয় শিশুদের নিয়ে সেই কাজটাই করছেন তেরেসা সাঈদ৷
তেরেসার মেসাহা
জেবেলিনের এখানে ওখানে ছড়িয়ে থাকা আবর্জনা পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে পরিবেশ বাঁচাতে মেসাহা নামের একটা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন তেরেসা৷ আরবি শব্দ মেসাহা অর্থ স্পেস, অর্থাৎ জায়গা৷ মেসাহার হয়ে কাজ করে ৬ থেকে ১৫ বছর বয়সি শিশুরা৷ আবর্জনা থেকে প্লাস্টিকের বোতল, কার্ডবোর্ড, কাগজ, ক্যান ইত্যাদি সংগ্রহ করে সেগুলো দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস তৈরি করে তারা৷ ছবিতে আবর্জনা থেকে নানা ধরনের জিনিস সংগ্রহ করছে এক শিশু৷
দুই দিনের কর্মযজ্ঞ
তেরেসা সাঈদের সঙ্গে সপ্তাহে দুদিন জেবেলিনের আবর্জনা ঘেঁটে, গুছিয়ে প্লাস্টিকের বোতল, কাগজ, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি সংগ্রহ করে ১৫০ থেকে ২০০ শিশু-কিশোর৷ ফেলে দেয়া জিনিস থেকে পিগি ব্যাংক, বাদ্যযন্ত্র, পাজলসহ নানা ধরনের জিনিস বানায় তারা৷ এছাড়া সংগ্রহ করা কাগজে রং, তুলি দিয়ে ছবিও আঁকে খুদে শিল্পীরা৷সসসসওপরের ছবিতে নিজের তৈরি শিল্পকর্ম দেখাচ্ছে এক শিশু৷
শিশুদের ভবিষ্যৎ
মেসাহার স্বেচ্ছাসেবী শিশুরা বড় হয়ে কী করবে? এ বিষয়ে তেরেসা সাঈদের একটাই কথা, ‘‘ আমি চাই এখানে কাজ করতে করতে শিশুরা পরিবেশকে বুঝতে শিখুক, পরিবেশকে ভালো রাখতে শিখুক এবং তা শিখে গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে কিছু করুক৷’’
আগামীর নেতা-নেত্রী
তেরেসার বড় একটা স্বপ্নও আছে শিশুদের নিয়ে৷ সেই কথা জানাতে গিয়ে রয়টার্সকে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি স্বপ্ন দেখি এই শিশুরা বড় হয়ে যে কাজই করবে, যেখানেই যাবে, সেখানে বড় বড় ইতিবাচক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেবে৷’’