1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিশরে হয়ে গেল ‘প্রথম বিশ্ব ওয়েব যুদ্ধ’

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১১

‘প্রথম বিশ্ব ওয়েব যুদ্ধ’ দেখে ফেলল বিশ্ববাসী৷ চলেছে ১৮ দিন ধরে৷ বলছিলাম মিশরের সরকার-বিরোধী আন্দোলনের কথা৷ জনগণের বিক্ষোভের কারণেই হোসনি মুবারক ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, কিন্তু এর পেছনে ছিল ইন্টারনেট প্রযুক্তির হাত৷

https://p.dw.com/p/10HET
ছবি: picture-alliance/ dpa

যুদ্ধের দুই পক্ষ

যুদ্ধ বলতে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত বোঝায়৷ সে হিসেবে ‘প্রথম বিশ্ব ওয়েব যুদ্ধ'র এক পক্ষে ছিলেন মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক৷ আর অন্য পক্ষে বিভিন্ন জনপ্রিয় ওয়েবসাইট৷

মিশরে সরকার-বিরোধী আন্দোলনের শুরুটা হয় ফেসবুক থেকে৷ কয়েকজন তরুণ প্রথমে ফেসবুকে একটি গ্রুপ তৈরি করে৷ সেটা ২০০৮ সালের কথা৷ একটা কোম্পানির শ্রমিকদের দাবি আদায়ের আন্দোলন সমর্থন জানাতে তৈরি হয় গ্রুপটি৷ কিন্তু পরবর্তীতে ঘটনাচক্রে এটি সরকার-বিরোধী একটি গ্রুপে পরিণত হয়৷ আর দিন দিন বাড়তে থাকে এর সদস্য সংখ্যা৷ তারপর এক সময় একটি নির্দিষ্ট দিন ও স্থান ঠিক করে সবাইকে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে থাকতে অনুরোধ করা হয়৷

দিনটা ছিল ২৫ জানুয়ারি৷ শুরু হয় আন্দোলন৷ প্রথমে তরুণরা যোগ দেয় তাতে৷ পরে সাধারণ জনগণও এগিয়ে আসে৷ ফলে বাড়তে থাকে বিক্ষোভকারীর সংখ্যা৷ গতি পেতে থাকে আন্দোলন৷ যেটা পরে শেষ হয় মুবারকের ক্ষমতা ছাড়ার মধ্য দিয়ে৷

অ্যাকশন-পাল্টা অ্যাকশন

Ägypten Blogger Prozess gegen Abdel Kareem Nabil
আন্দোলনের সময় আটক এক ব্লগারছবি: AP

তবে শুরু থেকেই সরকার চেয়েছে বিক্ষোভকারীদের থামাতে৷ ইন্টারনেটের মাধ্যেমে বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে বুঝতে পেরে ইন্টারনেট যোগাযোগ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয় মুবারকের সরকার৷ কিন্তু ততোদিনে সারা বিশ্বের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে মিশরের বিক্ষোভ৷ তাই খবর পেতে উদগ্রীব হয়ে উঠে বিশ্ববাসী৷

ঠিক এই অবস্থায় আগমন ঘটে যুদ্ধের বিরোধী পক্ষ মানে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের৷ সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র নিয়ে আসে গুগল আর ট্যুইটার৷ ব্যাপারটা এরকম, কেউ একজন একটা নির্দিষ্ট নাম্বারে ফোন করে ভয়েসমেল রাখতে পারবে৷ আর সঙ্গে সঙ্গে সেটা টেক্সটে পরিণত হয়ে ট্যুইট হয়ে যাবে৷ ফলে বিশ্বের যে কেউ ঐ নাম্বারে ফোন করলে ভয়েসমেলটা শুনতে পারবে৷ অর্থাৎ এজন্য ইন্টারনেটের প্রয়োজন হবে না৷ শুধু ল্যান্ডফোন হলেই চলবে, যেটার নেটওয়ার্ক সবসময় চালু ছিল৷ বন্ধ ছিল শুধু মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক৷

আবার ল্যান্ডফোন চালু থাকার এই বিষয়টিকে কাজে লাগিয়েছে ইউরোপের কয়েকটি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার৷ তারা আগ্রহী মিশরীয়দের বিনামূল্যে ‘এক্সেস কোড' আর টেলিফোন নাম্বার দিয়েছে৷ যেটা দিয়ে ডায়াল-আপ ইন্টারনেট কানেকশন পাওয়া গিয়েছিল৷

এসব ঘটনা এটাই প্রমাণ করে যে, মুবারক সরকারের ছোঁড়া অস্ত্র ভোতা করতে মাঠে নেমেছিলেন প্রযুক্তিবিদরা৷ আর তাঁরা জয়ী হয়েছেন বলেই মিশরে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে৷

বিখ্যাত ‘টাইম' ম্যাগাজিনের সাংবাদিক বার্টন গেলম্যান মুবারকের সঙ্গে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের এই যুদ্ধের নাম দিয়েছেন ‘প্রথম বিশ্ব ওয়েব যুদ্ধ'৷

তবে আশঙ্কা...

মিশরের ঘটনা একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের ভাবিয়ে তুলছে৷ সেটি হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সরকার এখন থেকে ইন্টারনেটে তাদের নজরদারি বাড়িয়ে দেবে৷ আগে যেমন মনে করা হতো, ইন্টারনেট হচ্ছে স্বাধীন মত প্রকাশের জায়গা৷ কিন্তু এখন দেখা যাবে, কেউ সরকার-বিরোধী মন্তব্য করলে সেটা সহজেই সরকারের নজরে চলে আসবে৷ ফলে স্বাধীনভাবে লেখার বিষয়টি আর থাকবে না৷ ইতোমধ্যে মিশরে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে গোয়েন্দারা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নজরদারি শুরু করেছিলেন৷ সেখান থেকে পরিচয় পেয়ে তারা বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে৷

ইন্টারনেট নিয়ে লেখালেখি করেন এমন একজন, এভগেনি মরোজোভ৷ তিনি বলেন, সন্দেহ নেই, এখন থেকে অনলাইনে আরও বেশি নজর রাখা শুরু করবে বিভিন্ন দেশের সরকার৷ এছাড়া বিভিন্ন উপায়ে ইন্টারনেটের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোরও চেষ্টা থাকবে তাদের৷ আর এই বিষয়টির দিকে নজর দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট আল গোর৷ তিনি বলেন, গণতন্ত্র চর্চার জন্য বেশ সহায়ক একটি ব্যবস্থা হলো ইন্টারনেট৷ তাই সরকার বা অন্য কেউ যেন এর উপর খবরদারি করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: ফাহমিদা সুলতানা

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য