1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশমিশর

মিশরে চিরায়ত পদ্ধতিতেই ঘরে তাপ নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ

২৩ মার্চ ২০২২

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে অস্বাভাবিক বেশি তাপমাত্রা আর বিরল ঘটনা নয়৷ ফলে বাড়িঘর শীতল রাখার তাগিদও বাড়ছে৷ মূল্যবান সম্পদের অপচয় না করেও ঐতিহ্যগত উপায়ে সেই কাজ করে দেখাচ্ছেন মিশরের এক স্থপতি৷

https://p.dw.com/p/48vMu
ছবি: ECOnsult/Reuters

কায়রোর স্থপতি সারাহ এল বাটুতি তাপ নিয়ন্ত্রণে ঐতিহ্যগত জ্ঞান সমসাময়িক স্থাপত্যে প্রয়োগ করতে চান৷ তাঁর টিম এমন ভবন ডিজাইন করে, পরিবেশ ও সমাজের উপর যেগুলির ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে৷ সারাহ বলেন, ‘‘মিশরে চরম উত্তাপের কারণে আমরা চাপের মুখে রয়েছি৷ আমাদের এখানে অনেক জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে৷ মিশরে কেন কোনো ‘গ্রিন বিল্ডিং’ নেই? থাকলেও এত কম কেন? দেশজ জ্ঞান কাজে লাগালে প্রচলিত প্রযুক্তির সুবিধা নেওয়া সম্ভব বলে আমি সত্যি বিশ্বাস করি৷ অনেকে জানেই না, যে এমন প্রযুক্তি হাতের নাগালে রয়েছে৷’’

মিশরে গ্রীষ্মে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁতে পারে৷ কংক্রিটের তৈরি ভবনের ভিড়ে উত্তাপ মারাত্মক হয়ে ওঠে৷ যে সব বাসিন্দাদের সামর্থ্য রয়েছে, তাঁরা এয়ার কন্ডিশনর লাগিয়ে ফ্ল্যাট ঠাণ্ডা রাখেন৷ সারাহ এল-বাটুতি বলেন, ‘‘উপার্জনের প্রায় ৩০ শতাংশই ঘর ঠান্ডা রাখতে চলে যায়৷ তাহলে কেন এমন ভবন থাকবে না, যেখানে প্রচলিত সমাধানসূত্রের বদলে ঠাণ্ডা রাখার সার্বিক ব্যবস্থা থাকে?’’

ঐতিহ্যগত জ্ঞান কাজে লাগান মিশরের স্থপতি

কায়রো থেকে আড়াইশো কিলোমিটার দূরে রয়েল হার্বস ইজিপ্ট কোম্পানি টেকসই সমাধানসূত্র খুঁজছে৷ ১৪০ জন কর্মীর জন্য সারাহ এল বাটুতির কোম্পানিকে নতুন আবাসনের ডিজাইন করতে দিয়েছে, যেখানে প্রাকৃতিক উপায়ে পরিবেশ শীতল রাখার ব্যবস্থা থাকবে৷

স্থপতিরা বাতাস চলাচল ও সূর্যের আলোর দিক পরীক্ষা করে আলো-বাতাস ও ছায়া নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলি লক্ষ্য করেছিলেন৷ আশপাশ থেকে নুড়িপাথর ও চুনাপাথরের ইট সংগ্রহ করে আবাসনের কাঠামো গড়ে তোলেন৷ স্থপতি হিসেবে আহমেদ এল শরিফ বলেন, ‘‘এই এলাকায় বাতাস বইলে প্রাচীরের গাঢ় রং উত্তাপ শুষে নেয়৷ প্রাচীরের মধ্যে ইনসুলেশনও রয়েছে৷ এই দুটি বিষয় বাতাস চলাচল ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে৷ সেইসঙ্গে ঘরের মধ্যে বাড়তি থার্মাল কমফোর্টও পাওয়া যায়৷’’

ঘরের মধ্যে এখন সারা বছর ধরে সর্বদা ১৯ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় থাকে৷ সোলার প্যানেল থেকে পাওয়া বিদ্যুৎ দিয়ে ঘরের ভেতরের পাখা চালানো হয়৷ সৌরশক্তি চালিত ওয়াটার হিটার দিয়ে পানি গরম করা হয়৷

এই প্রকল্প ‘গোল্ডেন পিরামিড' ইকো লেবেল পুরস্কার পেয়েছে৷ সরকার সালাহ এল হাগ্গারকে এক জাতীয় রেটিং প্রণালী চালু করার দায়িত্ব দিয়েছেন৷ বেড়ে চলা জনসংখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে মিশর ঘরবাড়ির জ্বালানি ব্যবহার কমাতে চায়৷ মিশরীয় গ্রিন বিল্ডিং পরিষদের সভাপতি সালাহ এল হাগ্গার বলেন, ‘‘আমার মতে, স্থাপত্যের ডিজাইন পুরোপুরি টেকসই স্থাপত্যে রূপান্তরিত করা উচিত৷ গ্রিন বিল্ডিংয়ের সাহায্যে আমরা ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জ্বালানি সাশ্রয় করতে পারি৷ আমরা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত পানিও সাশ্রয় করতে পারি৷ অনেক উপকরণের ব্যবহার কমাতে পারি৷ সবার উপরে আমরা ভবনের ভিতর ও বাইরের পরিবেশগত মানের উন্নতি করতে পারি৷’’

Grünes Gebäude Ägypten
ছবি: ECOnsult/Reuters

গ্রামাঞ্চলের ঐতিহ্যগত ঘরবাড়ি থেকেই এই প্রেরণা এসেছে৷ প্রকৃতি ও পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেগুলি ডিজাইন করা হয়৷ যারা দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে ভবনগুলি ব্যবহার করবে, তাদের জীবনযাত্রার উপর ইতিবাচক প্রভাব রাখাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য৷

সে ক্ষেত্রে শহরের প্রায় দুই কোটি মানুষেরও উপকার হবে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রাম ছেড়ে শহরাঞ্চলে বাস করার প্রবণতার কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে কায়রোর জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে৷ সারাহ এল-বাটুতি জানান, ‘‘আমাদের কিছু প্রকল্পে কোনো যান্ত্রিক কাঠামো ছাড়াই আমরা তাপমাত্রা দশ ডিগ্রি কমাতে পেরেছি৷ সে কারণে আমরা গ্রামাঞ্চলেও আরও ভালো সমাধানসূত্রের জন্য চেষ্টা করতে পারি৷ বিশেষ করে স্বল্প আয়ের আবাসনের ক্ষেত্রে এমনটা করা প্রয়োজন, যাতে মানুষ এমন কিছু সংশোধনের চেষ্টা না করে, শুরুতে আমরা যার বিহিত করতে পারি নি৷’’

সারাহ এল বাটুতি সম্প্রতি মিশরের প্রেসিডেন্টের ‘ডিসেন্ট লাইফ’ নামের উদ্যোগের দূত নিযুক্ত হয়েছেন৷ পরিবেশ সংক্রান্ত নির্দেশিকা রচনা করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতনতার লক্ষ্যে প্রচার চালানোই হবে তার ভূমিকা৷

আরও উষ্ণ হয়ে চলা পৃথিবীর অবকাঠামোর বড় অংশকে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেবার প্রচেষ্টায় মিশর একা নয়৷ গোটা বিশ্বে এই সমস্যার সমাধানে গ্রিন আর্কিটেকচার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে৷

মুরাদ এল-তুনি/এসবি