মিনি স্কার্ট যেভাবে দুনিয়া বদলে দিয়েছে
মেরি কোয়ান্টকে বলা হয় মিনি স্কার্টের জননী৷ ষাটের দশকের দিকে এই পোশাক উদ্ভাবনের মাধ্যমে নারীত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিয়েছেন৷ মিনি স্কার্টকে তিনি তরুণ, আধুনিক এবং আত্মসচেতন নারীর পোশাকে পরিণত করেছেন৷
দাদির পোশাক ছোট করার মাধ্যমে শুরু
ষাটের দশকে ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে যাত্রা শুরু করেন মেরি কোয়ান্ট৷ একেবারে শুরুটা ছিল দাদির লম্বা স্কার্ট ছোট করার মাধ্যমে৷ এরপর তিনি লন্ডনের চেলসিয়া শহরতলীতে এক বুটিকে নিজের তৈরি স্কার্ট বিক্রি শুরু করেন৷ সেসব স্কার্ট তাঁর মা এবং দাদিরা যে পরিমিত মাপের স্কার্ট পরতেন সেগুলোর চেয়ে অনেক ছোট ছিল৷ হাঁটু থেকে দশ সেন্টিমিটার উপরেই সেগুলো শেষ হয়ে যেত!
তরুণ, আধুনিক নারীদের জন্য তৈরি ছোট এবং মিষ্টি পোশাক
‘‘আমি আমার ছোট স্কার্ট পছন্দ করতাম কেননা আমি দৌঁড়াতে চেয়েছিলাম এবং দ্রুত বাস ধরে কাজে যেতাম,’’ একসময় বলেছিলেন কোয়ান্ট৷ তিনি তাঁর বুটিকে শুধু ‘হিপ ডিজাইনই’ তৈরি করেননি, তিনি তরুণ, আধুনিক নারীর যে চিত্র সেসময় প্রতিষ্ঠিত ছিল, তাতেও পরিবর্তন এনেছেন৷ আর শুধু মিনি স্কার্ট তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি কোয়ান্ট, পিভিসির মতো নতুন উপকরণ দিয়েও পোশাক তৈরি করেছেন৷
‘সুইঙ্গিং সিক্সটিজ’
লন্ডনের ‘সুইঙ্গিং সিক্সটিজ’ এর প্রতীক হয়ে উঠেছিল এই মিনি স্কার্ট৷ খড়কুটোর মতো পাতলা হাত-পা-ওয়ালা মডেল টুইগি এই পোশাক পরে বিশ্বের বিভিন্ন ক্যাটওয়াকে গিয়েছেন৷ বিটলস ব্যান্ডের সদস্যরাও তাঁদের বান্ধবীদের জন্য নতুন ধরনের পোশাক কিনতে মেরি কোয়ান্টের বুটিকে যেতেন৷ তখন বুটিকটি লন্ডনের কিংস রোডে ছিল৷
আরো ছোট পোশাক চান ক্রেতারা
মিনি স্কার্ট তৈরির মাধ্যমে রাতারাতি তারকা ডিজাইনার বনে যান মেরি কোয়ান্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘দ্য কিংস রোড-এর মেয়েরা মিনি স্কার্ট আবিষ্কার করেছে৷ আমি স্কার্ট যথেষ্ট ছোট বানিয়েছিলাম, কিন্তু তারপরও ক্রেতারা সবসময় সেটি আরো ছোট করার পক্ষে ছিল৷’’ কোয়ান্ট তাঁর মিনি ফ্যাশনকে গাড়ির জগতেও প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছেন৷ একই নামে বাজারে এসেছে গাড়ির একটি মডেল৷
মিশ্র বার্তা: ভ্যাটিকেনের নিন্দা, রানির সম্মতি
প্রথম যে তরুণীরা মিনি স্কার্ট পরে রাস্তায় নেমেছিল, পুলিশ তাদেরকে সতর্ক করেছিল৷ খোদ ভ্যাটিকানও এই পোশাককে ‘অশ্লীল’ আখ্যা দিয়েছিল৷ তবে, ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথ মিনি স্কার্ট আবিষ্কারের পরের বছর মেরি কোয়ান্টকে ফ্যাশন শিল্পে তাঁর অবদানের জন্য বিশেষ সম্মাননা দিয়েছিলেন৷
গোটা বিশ্বে আলোড়ন
মিনি স্কার্ট গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে বেশি সময় লাগেনি৷ ১৯৬২ সালে ‘ভোগ’ ম্যাগাজিন কোয়ান্টের ডিজাইন নিয়ে প্রতিবেদন করে৷ ১৯৬৪ সাল নাগাদ জার্মানিতে পৌঁছে যায় মিনি স্কার্ট৷ তবে, ফ্রান্সে এই ফ্যাশন পৌঁছাতে ষাটের দশকের শেষ অবধি লেগেছিল৷
মিনি থেকে অন্তর্বাস
মিনি স্কার্ট পরার ট্রেন্ড এখনো শেষ হয়ে যায়নি, যদিও মেরি কোয়ান্ট সেই ১৯৬৯ সালেই ফ্যাশনেবল স্কার্ট তৈরি বন্ধ করে দিয়েছিলেন৷ তিনি তখন মনোযোগ দেন বিভিন্ন প্রসাধন সামগ্রী এবং অন্তর্বাস তৈরির দিকে৷ সেক্ষেত্রেও সফল কোয়ান্ট৷ ২০০০ সালে অবসর গ্রহণ করেন এই ডিজাইনার৷ বর্তমানে লন্ডনের ভিএন্ডএতে তাঁর নানা কাজ প্রদর্শিত হচ্ছে৷