মিউনিখের ‘পাগল’ আইসক্রিম প্রস্তুতকারী
১৯ অক্টোবর ২০১৮মিউনিখের মাটিয়াস ম্যুনৎস তাঁর নিজের তৈরি আইসক্রিমের মতোই এক কথায় উজ্জ্বল, রঙিন ও কিছুটা অদ্ভুত৷ তাঁর আইসক্রিমের ফ্লেভারও বেশ অপ্রত্যাশিত৷ যেমন, বিয়ার আইসক্রিমের স্বাদ কাপুচিনো কফির মতো৷
এমন উদ্ভট সৃষ্টিই তাঁর বিশেষত্ব৷ তাঁর খ্যাতি মিউনিখের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ মানুষ তাঁকে বেশ ভালোবাসে৷ তিনিও সবার সঙ্গে ছবি তোলার অনুরোধ খুশিমনে মেনে নেন৷ যেমন, শহরের কেন্দ্রস্থলে নিজের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে৷ মাটিয়াস ম্যুনৎস বলেন, ‘‘মানুষ আগের তুলনায় বেশি আনন্দ নিয়ে দোকান ছেড়ে যাবেন, এটাই আমার মূলমন্ত্র৷ তাঁদের মনোরঞ্জন করতে আমরা কিছু কৌতুকেরও আশ্রয় নেই৷ সে কারণেই আমাদের এমন সব উদ্ভট ফ্লেভার রয়েছে৷ শুধু স্বাদেই ভিন্ন নয়, সেগুলি দেখে মানুষের মুখে হাসি ফোটে৷’’
আইসক্রিম খেলে মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে৷ বিষয়টি এতটাই সহজ৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘কেউ কেউ আইসক্রিম চেখে দেখে বলে, এমা, এ তো বিয়ারের মতো খেতে! কারো ভালো লাগে৷ বাকিরা মুখ থেকে বের করে দেয়৷ এক নারী নিজের জন্য ২ চামচ ও পোষা কুকুরের জন্য ৩ চামচ সসেজ ফ্লেভার আইসক্রিম কেনেন৷ তারা খুশি হয়ে বেরিয়ে যান৷ তাতে আমিও খুশি হই৷’’
মিউনিখ শহরে ম্যুনৎস-এর প্রথম দোকানের নাম ছিল ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড’৷ ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ কাহিনি থেকে প্রেরণা নিয়ে দোকানটি সাজানো হয়েছিল৷ আইসক্রিমের মতো দোকানের মধ্যেও জাদুময়, কল্পনার জগত সৃষ্টি করা ছিল এর উদ্দেশ্য৷
৩১ বছর বয়সি এই আইসক্রিম প্রস্তুতকারক এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫০০ ফ্লেভার সৃষ্টি করেছেন৷ তার মধ্যে রয়েছে স্পিট রোস্টেড চিকেন, এক ধরনের কীট, মাছ, এমনকি স্নিৎসেল বা মাংসের কাটলেট৷ কেউ ওরেও আইসক্রিম খেয়ে খুশি৷ আরেকজন বিয়ার ফ্লেভার আইসক্রিম খেয়ে আসল বিয়ারের স্বাদ পান৷ একজন একবার মিটলোফ ফ্লেভার খেয়ে খুশি হননি৷
মাটিয়াস ম্যুনৎস-এর মুখে সবসময়ে হাসি লেগেই রয়েছে৷ নতুন ফ্লেভারের জন্য তাঁর চোখকান খোলা থাকে৷ যেমন মাকারোঁ বিস্কুট আইসক্রিম, সঙ্গে শ্যাম্পেন, মারাকুইয়া ও রাস্পবেরি৷ সবকিছুই আইসক্রিমে পরিণত করা যায় বলে তাঁর বিশ্বাস৷ শুধু ‘বোরিং' বা ক্লান্তিকর হলে চলবে না৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘আমার মনে হয় মাকারোঁ আইসক্রিম উদ্ভাবনী শক্তির ভালো দৃষ্টান্ত, কারণ সব ধরনের জমাট মাকারোঁ তৈরি করা যায়, মাঝে আইসক্রিম রাখা যায়৷ অথবা একটি বড় মাকারোঁ তৈরি করে মাঝের অংশটি উপরে রেখে চকমকে করে তোলা যায়৷ দারুণ হবে, শ্যাম্পেন আইসক্রিমও অসাধারণ হবে বলে মনে হয়৷’’
সবচেয়ে বেশি ফ্লেভার পেতে ম্যুনৎস সেরা মানের উপকরণ ব্যবহার করেন৷ ইটালির পেরুজিয়া শহরে এক আইসক্রিম শিক্ষাকেন্দ্রে তিনি এই কাজ শেখেন৷ সঠিক মিশ্রণই সাফল্যের চাবিকাঠি৷ কিন্তু ম্যুনৎস অবশ্যই তা গোপন রাখেন৷ এক স্কুপ বা চামচের দাম ১ ইউরো ৬০ সেন্ট থেকে শুরু হয়৷ সঙ্গে শ্যাম্পেন বা সোনার স্তর থাকলে দাম আরো বেড়ে যায়৷ মাটিয়াস ম্যুনৎস বলেন, ‘‘চিনি তো থাকেই৷ তবে অন্য উপকরণে ফারাক থাকতে পারে৷ কখনো অনেক লবণ থাকে, কখনো পিৎসা৷ প্রায় অর্ধেক ফ্লেভার দুধ থেকে আসে৷ কয়েকটির মধ্যে অ্যালকোহল বা ফলমূল থাকে৷ চিনিই একমাত্র স্থায়ী উপকরণ, যদিও চিনিরও নানারকম বৈচিত্র্য রয়েছে৷’’
মাটিয়াস ম্যুনৎস পর্যটন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ তাঁর চূড়ান্ত থিসিসের বিষয় ছিল উদ্ভাবনী এক আইসক্রিম দোকানের কনসেপ্ট৷ ২০১২ সালেই তিনি নিজেই সেই আইডিয়া কার্যকর করেন৷ তারপর তিনি আরো দুটি দোকান খোলেন৷ তিনি ক্যাটারিং ও পার্টির জন্যও আইসক্রিম সরবরাহ করেন৷ তাঁর ট্রেডমার্ক হলো টুপি৷ সেটি ছাড়া বাসা থেকে বের হন না তিনি৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘এই টুপি আমার জন্য মুক্তির প্রতীক৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই আমি এমন টুপি পরতে শুরু করেছিলাম৷ তারপর সেটা পরে থাকার জন্য একটা কনসেপ্টও পেলাম৷ অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড কাহিনিতে ‘ম্যাড হ্যাটার’ চরিত্র তো আছেই৷ পাগল আইসক্রিম প্রস্তুতকারীর জন্য এর চেয়ে আদর্শ কী থাকতে পারে?’’
কাজের জায়গা হোক অথবা উঁচু সাইকেলে চেপে হোক – মিউনিখের এই ‘পাগল’ আইসক্রিম প্রস্তুতকারী মজার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ কোথাও গেলে মাটিয়াস ম্যুনৎস-কে চোখে পড়বেই৷
স্টেফানি ড্রেশার/এসবি