1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিউনিখের ‘পাগল’ আইসক্রিম প্রস্তুতকারী

১৯ অক্টোবর ২০১৮

আইসক্রিম খেতে কে না ভালবাসে! তবে তাতে ইলিশ মাছ, কাচ্চি বিরিয়ানি অথবা বোরহানির ফ্লেভারের কথা ভাবতে পারেন? মিউনিখের এক দোকানি তাঁর আইসক্রিমে স্থানীয় ও ইউরোপীয় নানা পদের স্বাদ তুলে ধরছেন৷

https://p.dw.com/p/36o7q
আইসক্রিম প্রস্তুতকারী মাটিয়াস ম্যুনৎসছবি: picture-alliance/dpa/F. Hörhager

মিউনিখের মাটিয়াস ম্যুনৎস তাঁর নিজের তৈরি আইসক্রিমের মতোই এক কথায় উজ্জ্বল, রঙিন ও কিছুটা অদ্ভুত৷ তাঁর আইসক্রিমের ফ্লেভারও বেশ অপ্রত্যাশিত৷ যেমন, বিয়ার আইসক্রিমের স্বাদ কাপুচিনো কফির মতো৷

এমন উদ্ভট সৃষ্টিই তাঁর বিশেষত্ব৷ তাঁর খ্যাতি মিউনিখের বাইরেও ছড়িয়ে পড়েছে৷ মানুষ তাঁকে বেশ ভালোবাসে৷ তিনিও সবার সঙ্গে ছবি তোলার অনুরোধ খুশিমনে মেনে নেন৷ যেমন, শহরের কেন্দ্রস্থলে নিজের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে৷ মাটিয়াস ম্যুনৎস বলেন, ‘‘মানুষ আগের তুলনায় বেশি আনন্দ নিয়ে দোকান ছেড়ে যাবেন, এটাই আমার মূলমন্ত্র৷ তাঁদের মনোরঞ্জন করতে আমরা কিছু কৌতুকেরও আশ্রয় নেই৷ সে কারণেই আমাদের এমন সব উদ্ভট ফ্লেভার রয়েছে৷ শুধু স্বাদেই ভিন্ন নয়, সেগুলি দেখে মানুষের মুখে হাসি ফোটে৷’’

আইসক্রিম খেলে মন উৎফুল্ল হয়ে ওঠে৷ বিষয়টি এতটাই সহজ৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘কেউ কেউ আইসক্রিম চেখে দেখে বলে, এমা, এ তো বিয়ারের মতো খেতে! কারো ভালো লাগে৷ বাকিরা মুখ থেকে বের করে দেয়৷ এক নারী নিজের জন্য ২ চামচ ও পোষা কুকুরের জন্য ৩ চামচ সসেজ ফ্লেভার আইসক্রিম কেনেন৷ তারা খুশি হয়ে বেরিয়ে যান৷ তাতে আমিও খুশি হই৷’’

মিউনিখ শহরে ম্যুনৎস-এর প্রথম দোকানের নাম ছিল ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড’৷ ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’ কাহিনি থেকে প্রেরণা নিয়ে দোকানটি সাজানো হয়েছিল৷ আইসক্রিমের মতো দোকানের মধ্যেও জাদুময়, কল্পনার জগত সৃষ্টি করা ছিল এর উদ্দেশ্য৷

৩১ বছর বয়সি এই আইসক্রিম প্রস্তুতকারক এখনো পর্যন্ত প্রায় ৫০০ ফ্লেভার সৃষ্টি করেছেন৷ তার মধ্যে রয়েছে স্পিট রোস্টেড চিকেন, এক ধরনের কীট, মাছ, এমনকি স্নিৎসেল বা মাংসের কাটলেট৷ কেউ ওরেও আইসক্রিম খেয়ে খুশি৷ আরেকজন বিয়ার ফ্লেভার আইসক্রিম খেয়ে আসল বিয়ারের স্বাদ পান৷ একজন একবার মিটলোফ ফ্লেভার খেয়ে খুশি হননি৷

মাটিয়াস ম্যুনৎস-এর মুখে সবসময়ে হাসি লেগেই রয়েছে৷ নতুন ফ্লেভারের জন্য তাঁর চোখকান খোলা থাকে৷ যেমন মাকারোঁ বিস্কুট আইসক্রিম, সঙ্গে শ্যাম্পেন, মারাকুইয়া ও রাস্পবেরি৷ সবকিছুই আইসক্রিমে পরিণত করা যায় বলে তাঁর বিশ্বাস৷ শুধু ‘বোরিং' বা ক্লান্তিকর হলে চলবে না৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘আমার মনে হয় মাকারোঁ আইসক্রিম উদ্ভাবনী শক্তির ভালো দৃষ্টান্ত, কারণ সব ধরনের জমাট মাকারোঁ তৈরি করা যায়, মাঝে আইসক্রিম রাখা যায়৷ অথবা একটি বড় মাকারোঁ তৈরি করে মাঝের অংশটি উপরে রেখে চকমকে করে তোলা যায়৷ দারুণ হবে, শ্যাম্পেন আইসক্রিমও অসাধারণ হবে বলে মনে হয়৷’’

সবচেয়ে বেশি ফ্লেভার পেতে ম্যুনৎস সেরা মানের উপকরণ ব্যবহার করেন৷ ইটালির পেরুজিয়া শহরে এক আইসক্রিম শিক্ষাকেন্দ্রে তিনি এই কাজ শেখেন৷ সঠিক মিশ্রণই সাফল্যের চাবিকাঠি৷ কিন্তু ম্যুনৎস অবশ্যই তা গোপন রাখেন৷ এক স্কুপ বা চামচের দাম ১ ইউরো ৬০ সেন্ট থেকে শুরু হয়৷ সঙ্গে শ্যাম্পেন বা সোনার স্তর থাকলে দাম আরো বেড়ে যায়৷ মাটিয়াস ম্যুনৎস বলেন, ‘‘চিনি তো থাকেই৷ তবে অন্য উপকরণে ফারাক থাকতে পারে৷ কখনো অনেক লবণ থাকে, কখনো পিৎসা৷ প্রায় অর্ধেক ফ্লেভার দুধ থেকে আসে৷ কয়েকটির মধ্যে অ্যালকোহল বা ফলমূল থাকে৷ চিনিই একমাত্র স্থায়ী উপকরণ, যদিও চিনিরও নানারকম বৈচিত্র্য রয়েছে৷’’

মাটিয়াস ম্যুনৎস পর্যটন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেছেন৷ তাঁর চূড়ান্ত থিসিসের বিষয় ছিল উদ্ভাবনী এক আইসক্রিম দোকানের কনসেপ্ট৷ ২০১২ সালেই তিনি নিজেই সেই আইডিয়া কার্যকর করেন৷ তারপর তিনি আরো দুটি দোকান খোলেন৷ তিনি ক্যাটারিং ও পার্টির জন্যও আইসক্রিম সরবরাহ করেন৷ তাঁর ট্রেডমার্ক হলো টুপি৷ সেটি ছাড়া বাসা থেকে বের হন না তিনি৷ মাটিয়াস বলেন, ‘‘এই টুপি আমার জন্য মুক্তির প্রতীক৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতেই আমি এমন টুপি পরতে শুরু করেছিলাম৷ তারপর সেটা পরে থাকার জন্য একটা কনসেপ্টও পেলাম৷ অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড কাহিনিতে ‘ম্যাড হ্যাটার’ চরিত্র তো আছেই৷ পাগল আইসক্রিম প্রস্তুতকারীর জন্য এর চেয়ে আদর্শ কী থাকতে পারে?’’

কাজের জায়গা হোক অথবা উঁচু সাইকেলে চেপে হোক – মিউনিখের এই ‘পাগল’ আইসক্রিম প্রস্তুতকারী মজার জন্য সর্বদা প্রস্তুত৷ কোথাও গেলে মাটিয়াস ম্যুনৎস-কে চোখে পড়বেই৷

স্টেফানি ড্রেশার/এসবি