1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মিউকরমাইকোসিসে কি সত্যিই ‘আতঙ্ক'?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ জুন ২০২১

কোভিড পরবর্তী আতঙ্কের নাম কি মিউকরমাইকোসিস? কোথাও কোথাও মহামারির আকার ধারণ করেছে এই রোগ। তবে পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি এখনও নাগালের মধ্যে। তবুও সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা।

https://p.dw.com/p/3uOAZ
Indien Patient mit Corona-Infektion und zusätzlicher Pilzinfektion "Black Fungus"
ছবি: Mahesh Kumar A./AP/picture alliance

মিউকরমাইকোসিস কেতাবি নাম হলেও সাধারণ মানুষের কাছে এই রোগ ‘ব্ল্যাক ফাংগাস' নামেই পরিচিত। যদিও এ নামে কোনও রোগের অস্তিত্ব নেই বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। যে নামেই ডাকা হোক, তার মারণক্ষমতা একই থাকে।

কেন সংক্রমণ হচ্ছে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিউকরমাইকোসিস-এর অন্যতম কারণ রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি। কোভিড চিকিৎসার জন্য রোগীর উপর স্টেরয়েড প্রয়োগ করতে হচ্ছে। এই স্টেরয়েড প্রয়োগের ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই সদ্য কোভিড থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীদের ব্লাড সুগারের মাত্রা বেশি থাকছে। যারা আগে ডায়াবেটিক ছিলেন না, তাদের রক্তেও শর্করার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এর ফলে মিউকরমাইকোসিস সংক্রমণের আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।

কলকাতার অন্যতম বেসরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তা ডাঃ কুণাল সরকার বলেন, "কোভিড রোগীদের চিকিৎসায় প্রাথমিক নজর থাকে ফুসফুস, অক্সিজেন স্যাচুরেশনের ওপর। তার ফলে মিউকরমাইকোসিসের সমস্যা চোখে পড়তে কয়েকটা দিন দেরি হয়ে যায়। তাতেই রোগটা দেহে ছড়িয়ে পড়ে।”   

ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ

পশ্চিমবঙ্গে প্রভাব কতটা?

কোভিডের মতো মিউকরমাইকোসিসের ক্ষেত্রে দেশজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা সংক্রান্ত সার্বিক তথ্য মিলছে না। রাজ্যওয়াড়ি তথ্য বিক্ষিপ্ত ভাবে পাওয়া যাচ্ছে। সেই হিসেবে পশ্চিমবঙ্গে পরিস্থিতি ততটা উদ্বেগের নয়। স্বাস্থ্যদপ্তর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মিউকরমাইকোসিসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯। নতুন সন্দেহভাজন তিন রোগীর খোঁজ মিলেছে। তিন জেলায় একজন করে রোগী পাওয়া গিয়েছে যাঁদের উপসর্গ ছত্রাক সংক্রমণের মতো। এছাড়াও ছত্রাক সংক্রমণের আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও ১০ জনের দেহে। পশ্চিমবঙ্গে মোট সন্দেহভাজন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫৪। ছত্রাক সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত চার।

বেলেঘাটা আইডি হাসপাতলের কমিউনিটি মেডিসিনের চিকিৎসক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "পশ্চিমবঙ্গে মিউকরমাইকোসিসের বিরাট প্রভাব আছে বলব না। তবে সংখ্যাটা কম ছিল আগে, এখন বেড়েছে হঠাৎ করে। সেই জন্য একটা প্যানিক তৈরি হয়েছে। আমাদের হাসপাতালে এখনও এই সংক্রমণের রোগী পাইনি।”

ডাঃ সরকার বলেন, "এই সংক্রমণের প্রেক্ষিতে মহামারী শব্দপ্রয়োগ কিছুটা নিরর্থক। অনেক সমস্যার মধ্যে এটাও একটা সমস্যা। তবে সবথেকে বড় সমস্যা হল, এখনও ডাক্তার হিসেবে আমাদের কাছে একটা স্পষ্ট ধারণা নেই যে কী কারণে এই সমস্যাটা হচ্ছে।”  

কী সতর্কতা জরুরি

আপাতত ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সতর্ক থাকতে বলছেন চিকিৎসকেরা। স্টেরয়েড নিয়ে ভাবনা রয়েইছে। এর সঙ্গে অবশ্যই নজর রাখতে হবে রক্তের শর্করায়। ডায়াবেটিস থাক বা না-ই থাক, নিয়মিত পরীক্ষা করতে হবে ব্লাড সুগার‍। সুষম আহারের সঙ্গে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। এদিকে করোনা ঠেকাতে সচেতন নাগরিকরা অনেকেই ঘরোয়া টোটকার ওপর ভরসা রেখেছেন। তাতেই হিতে বিপরীত হয়েছে। এমনটা অনেক চিকিৎসকের বক্তব্য। ডাঃ সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "করোনা প্রতিরোধ করতে যথেচ্ছ স্টেরয়েড ও জিঙ্ক ব্যবহার করছেন মানুষ। এমনকী স্টিম নিচ্ছেন মাত্রাতিরিক্তভাবে। এর ফলে মানুষের শরীরেই ক্ষতি হচ্ছে। সেটা আটকাতে হবে।”

গুজব ছড়াচ্ছে ‘আতঙ্ক'?

মিউকরমাইকোসিস করোনার মতো সংক্রামক নয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ বলছেন, মুরগির মাংস থেকে ছড়াতে পারে ছত্রাক সংক্রমণ। কেউ আবার আঙুল তুলছেন ফলমূল, শাক-সব্জির দিকেও। যদিও এ সবের কোনও ভিত্তি নেই বলে মত চিকিৎসকদের। মুরগি খেলে মানুষের শরীরের সংক্রমণ ছড়ায় না, এ কথা টুইট করে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টরস ফোরামের সদস্য ডাঃ পুণ্যব্রত গুণ অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে এই ছত্রাক সংক্রমণের আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য দায়ী করছেন। তিনি বলেন, "যেভাবে সংবাদমাধ্যমে মিউকরমাইকোসিস নিয়ে সংবাদ পরিবেশন হচ্ছে, তার সবটায় ঠিকঠাক তথ্য নেই। তার থেকে বড় বড় সমস্যা পশ্চিমবঙ্গে আছে। অক্সিজেন বেডের সমস্যা, চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রোটোকলের সমস্যা ইত্যাদি বাদ দিয়ে মিউকরমাইকোসিস নিয়ে তেমন সঙ্কট আসেনি।” 

ওষুধ সঙ্কট

মিউকরমাইকোসিস চিকিৎসার ওষুধ অ্যাম্ফোটেরিসিন-বি। এই ওষুধ সব রাজ্যের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে পৌঁছচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী-সহ অনেক বিরোধী নেতা কেন্দ্রের দিকে আঙুল তুলেছেন। যদিও কেন্দ্রের দাবি, তারা প্রয়োজন অনুসারে সব রাজ্যকেই ওষুধ পাঠাচ্ছে। ইতিমধ্যে কেন্দ্র এই ওষুধের রফতানির উপর বিধিনিষেধ জারি করেছে।