মাসিকের সময় ছুটি: ভালো প্রস্তাব, নাকি অভিশাপ?
১৬ মে ২০২২আইনের খসড়ায় দেখা গেছে মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হলে মাসে সর্বোচ্চ তিনদিন ছুটি দেয়া যেতে পারে৷ এই ছুটি পেতে চিকিৎসকের সার্টিফিকেট জমা দিতে হতে পারে৷
স্পেনে প্রতি দুই নারীর একজন পিরিয়ডের সময় তীব্র ব্যথা অনুভব করেন বলে গবেষণায় দেখা গেছে৷
পিরিয়ডের সময় অনেক বেশি রক্তপাত, তীব্র ব্যথা ও ক্লান্তি, বমি ও ডায়রিয়ার লক্ষণকে ডিসমেনোরিয়া বলা হয়৷ অ্যামেরিকান অ্যাকাডেমি অফ ফ্যামিলি ফিজিশিয়ানস বলছে, ডিসমেনোরিয়ার কারণে সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ নারীর নিত্যদিনের কাজ করতে সমস্যা হতে পারে৷ আরেক গবেষণায় দেখা গেছে প্রজনন বয়সের সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ নারী ডিসমেনোরিয়ায় ভোগেন৷
স্পেনের আইনি প্রস্তাবের মতো এমন একটি প্রস্তাব ২০১৭ সালে ইটালিতে দেয়া হয়েছিল৷ এরপর এটা নিয়ে অনেক আলোচনা হয়৷ এই আইন হলে নারীরা কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করেছিলেন৷ অবশেষে আইনটি পাস হয়নি৷
তবে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, ইন্দোনেশিয়া ও জাম্বিয়াতে মাসিকের সময় মেয়েদের বেতনসহ ছুটি দেয়া হয়৷
জাপানে ১৯৪৭ সাল থেকে এই আইন আছে৷ কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে ১০ শতাংশেরও কম সংখ্যক নারী এই ছুটি নিয়ে থাকেন৷ তবে জরিপে অংশ নেয়া ৪৮ শতাংশ নারী জানিয়েছেন তারা কখনও কখনও এই ছুটি নেয়ার কথা ভেবেছেন, কিন্তু নেননি৷ এর কারণ হিসেবে কেউ বলেছেন তারা পুরুষ বসের কাছে এই ছুটির আবেদন করতে চাননি, আবার কেউ জানিয়েছেন তারা আশেপাশের খুব অল্প সংখ্যক নারীকে এই ছুটি নিতে দেখেছেন৷
নেদারল্যান্ডসের মতো দেশেও ছুটি নেয়ার কারণ হিসেবে মাসিকের কথা উল্লেখ করা থেকে নারীদের বিরত থাকতে দেখা গেছে৷ ২০১৯ সালে প্রায় ৩০ হাজার ডাচ নারীর উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ নারী মাসিকের সময় ছুটি নিলেও তাদের মাত্র ২০ শতাংশ ছুটির কারণ হিসেবে আসল কারণটি উল্লেখ করেছেন৷
ইন্দোনেশিয়ার কিরোয়ান পার্টনার্স নামের এক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ভেভে হিতিপেউ একসময় কর্মী হিসেবে মাসিকের ছুটি নিয়েছেন৷ এখন কোম্পানির প্রধান হিসেবে অন্যদের এমন ছুটি মঞ্জুর করে থাকেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাসিকের ছুটির সঙ্গে একধরনের লজ্জা কিংবা বৈষম্য জড়িয়ে আছে৷ কারণ অনেকে মনে করেন নারীরা অলস৷ তারা কাজ করতে চান না৷’’
ভারতের উদাহরণ
ভারতের ফুড ডেলিভারি কোম্পানি জমেটোতে ২০২০ সালের আগস্ট থেকে মেয়ে কর্মীরা বার্ষিক ছুটি ছাড়াও বছরে ১০দিন মাসিকের ছুটি নিতে পারেন৷ কোম্পানির মুখপাত্র বৈদিকা পরাশার জানান, এমন ছুটি নেয়ার জন্য বেশি কিছু করতে হয় না৷ শুধু টিম চ্যাটের স্ট্যাটাসে ক্যালেন্ডারের ভেতর তিনটি লাল ফোঁটা থাকার ইমোটিকন দিলেই বাকিরা তার অর্থ বুঝে যান৷ ফলে মেয়েদের অস্বস্তিতে পড়তে হয় না৷ ছুটি দেয়ার এই নীতির কারণ কর্মক্ষমতা বেড়ে বলেছে জানান ঐ কোম্পানির মুখপাত্র৷
সোনিয়া আঙ্গেলিকা ডিন/জেডএইচ