মার্কিন নেভি সিলের মতোই শক্তিশালী তাইওয়ানের যে বাহিনী
তাইওয়ানের নৌবাহিনীর বিশেষ ইউনিট এআরপিতে সুযোগ পাওয়া মার্কিন নেভি সিলে সুযোগ পাওয়ার মতোই অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার৷ সেই বাহিনীর প্রশিক্ষণের কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক
কঠিন প্রশিক্ষণ
তাইওয়ানের নৌবাহিনীর অভিজাত ইউনিট এআরপিতে যোগ দিতে দশ সপ্তাহের একটি প্রাথমিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে হয়৷ এই প্রশিক্ষণ উতরে যেতে পারেন কম মানুষই৷ ২০২২ সালে এই ইউনিটে ৩১ জন অংশ নিতে এলেও মাত্র ১৫ জন চূড়ান্তভাবে সুযোগ পাবেন৷ তাইওয়ানের দক্ষিণে জুয়োইং নৌ ঘাঁটিতে এই প্রশিক্ষণ চলছে৷ শারীরিক ও মানসিকভাবে তারা কতটা প্রস্তুত, তা দেখা হয়েছে প্রশিক্ষণে৷ এর মধ্যে একটি ছিল শীতল কংক্রিটের উপর ঘুমানো৷
চরম ঠান্ডা পানিতে স্নান
সারাদিন সমুদ্রে কাটান প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারীরা৷ এপর বরফশীতল ঠান্ডা পানি দিয়ে স্নান করানো হয় তাদের৷ তবুও ক্লান্ত শরীরে কাঁপতে কাঁপতে তারা দাঁড়িয়েছিলেন৷ বুট ক্যাম্পের লক্ষ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের মনকে ইস্পাত কঠিন করে গড়ে তোলা৷ অভিযান যতই কঠিন হোক না কেন, সহযোদ্ধা এবং নৌবাহিনীর প্রতি আনুগত্য অটুট রাখতে হবে, এভাবেই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷
জীবন যেন সমুদ্রসৈকত
সমুদ্রসৈকতে একটি প্রশিক্ষণ অনুশীলনে অংশ নিয়েছিলেন ইউ গুয়াং-ক্যাং নামে এক ব্যক্তি৷ আপাতদৃষ্টিতে ছবি দেখে এটিকে সাধারণ শরীরচর্চা মনে হতে পারে৷ তবে লং মার্চ থেকে শুরু করে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পানিতে থাকা-সবটাই সহ্য করতে হয়েছিল তাদের৷ এই প্রশিক্ষকরা অত্যন্ত কঠোর৷ প্রশিক্ষণের মাঝে বিরতি খুব কম৷ বিরতির সময় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত৷ এক ঢোক পানি গলায় ঢালা কিংবা শৌচাগারে যাওয়ার সময়ের জন্য বিরতি দেয়া হয় তাদের৷
যুদ্ধসজ্জা
একজন প্রশিক্ষণার্থীকে ক্লান্তির সঙ্গেও লড়াই করতে হয়৷ ছবিতে দেখা যাচ্ছে, তাকে আঠালো ক্যামোফ্লেজ পেইন্ট মাখানো হয়েছিল৷ শেষ সীমা পর্যন্ত লড়াই করেন অনেকেই৷ এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য যুদ্ধের কঠিন চ্যালেঞ্জকে সইয়ে নেওয়া৷ নৌবাহিনীর নেতৃত্ব চান, মারাত্মক কঠিন পরিস্থিতিতেও যাতে কর্মক্ষম থাকেন প্রশিক্ষণ নিতে আসা ব্যক্তিরা৷
দড়ির চ্যালেঞ্জ
প্রশিক্ষণের দীর্ঘসময় তারা সমুদ্রে বা জলাশয়ে কাটান৷ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শ্বাস ধরে রাখা, সম্পূর্ণ যোদ্ধার বেশে সাঁতার কাটা এবং সমুদ্র থেকে শত্রুপক্ষকে আক্রমণ করা–এই সবই প্রশিক্ষণের অংশ৷ তাদের হাত এবং পা অনেক সময় দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকে৷ অনুগ্রহ করে বাড়িতে এই চেষ্টা করবেন না!
ব্রেকিং পয়েন্টের কাছাকাছি
শুধু শক্তি এবং সহনশীলতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় তা কিন্তু নয়৷ অত্যন্ত কঠিন স্ট্রেচিং ব্যায়ামও করতে হয়৷ আলোকচিত্রীর ছবিতে ধরা পড়েছে গত সপ্তাহের ছবি৷ ব্রেকিং পয়েন্টের কাছাকাছি এসে পঁচিশ বছর বয়সি ওউ ঝি-জুয়ান ব্যথার কারণে কেঁদে ফেলেছিলেন৷ চাপের কারণে কেউ যদি প্রশিক্ষকদের কাছে ফিরে আসেন, তবে তাদের এআরপি প্রশিক্ষণ থেকে বিতাড়িত করা হয়৷
চরম কঠিন প্রশিক্ষণ
যোদ্ধার বেশে প্রশিক্ষণ নিতে হয় তাদের৷ প্রশিক্ষকরা চরম অত্যাচার, হেনস্তাও করে তাদের৷ ছবিতে যে যুবককে দেখা যাচ্ছে, তিনি প্রতি ছয় ঘণ্টায় এক ঘণ্টা বিরতি পেয়েছিলেন৷ এটা তাদের খাওয়ার সময়—রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য রসুনের কোয়ার মতো জিনিস খেতে হয়৷ চিকিৎসকের সহায়তা পান তারা৷ এই সময় ঘুমিয়ে নেওয়া যায়৷
স্বর্গের পাথুরে রাস্তা
চূড়ান্ত পর্যায়ের অনুশীলনকে ‘স্বর্গের রাস্তা’ বলা হয়৷ প্রশিক্ষণার্থীদের একাধিক বাধার মোকাবেলা করতে হয় এই পর্যায়ে৷ পাথুরে পথ ধরে কার্যত নগ্ন হয়ে তারা হামাগুড়ি দিতে বাধ্য হন৷ পাশাপাশি পুশ-আপ করতেও হয় তাদের৷ এর আগে একাধিক পরীক্ষার ফলে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তারা৷ কারণ তার আগের সপ্তাহগুলিতে প্রায় একটুও ঘুম হয়না তাদের৷ এরপরও ৩০ বছর বয়সি প্রশিক্ষণার্থী ফু ইউ বলেছিলেন, ‘‘আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না৷’’
অবশেষে
সু-ডে-ইউ ঘণ্টা বাজিয়ে এআরপি বুট ক্যাম্পের সমাপ্তি চিহ্নিত করেছিলেন৷ তিনি সেই ‘ভাগ্যবান’দের একজন৷ তিনি ওই কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন৷ ২৬ বছর বয়সি প্রশিক্ষক চেন শো-লিহ বলেছিলেন, ‘‘আমরা কাউকে কোনও জোর করিনি, সবাই এখানে স্বেচ্ছায় এসেছিলেন৷ তাই আমরা এত কঠোর আচরণ করি৷ শিবির থেকে নির্মমভাবে বাদও দিতে হয়৷ ’’