1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মানুষগুলো অসহায়, পাশে থাকুন

আশীষ চক্রবর্ত্তী৩ নভেম্বর ২০১৫

ওদের ‘পাগল' বলে বাচ্চারা ঢিল ছুড়ছে আর বড়রা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাসছেন – এমন দৃশ্য কয়েক বছর আগেও দেখেছি৷ শহরে-গ্রামে এখনও নিশ্চয়ই এমন হয়৷ আপনার কোনো প্রিয়জনও কিন্তু এমন ঢিল এবং হাসির আঘাতে বিপন্ন হতে পারেন!

https://p.dw.com/p/1GySH
Bangladesch Mental Hospital, Pabna
ছবি: imago/UIG

মানসিক ভারসাম্য বেশি মাত্রায় নষ্ট হলে, অর্থাৎ মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রায় হারিয়ে ফেললে যে কারোরই এমন অবস্থা হতে পারে৷ এক উচ্চ শিক্ষিত ভদ্রলোকের কথা জানি৷ অবসর জীবনে তিনি হঠাৎই সমাজের চোখে ‘পাগল' হয়ে যান৷ প্রথম প্রথম ঘরের বাইরে কোথাও একা বসে থাকতেন৷ একা একাই কী সব ভাবতেন৷ ষাটোর্ধ্ব ওই ভদ্রলোক বাইরে বাইরে থাকেন বলে নিজের বাড়িতেই শুরু হলো তাঁর ব্যাপক সমালোচনা৷ ছোট-বড় সকলেই তীর্যক কথার বাণে ঘায়েল করলেন তাঁকে৷ ঘায়েল হয়ে তিনি ঘরকে আরো ‘পর' করলেন৷ রাস্তায় রাস্তায়ই থাকতেন৷ ‘পাগল' বললে বাচ্চাদের তাড়া করতেন, কোনো বড় মানুষের হাসিমুখ নাগালে পেলে কষে চড় মেরে মনের ঝাল মেটাতেন৷

Deutsche Welle DW Ashish Chakraborty
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

ছিলেন সরকারি অফিসের বড় কর্মকর্তা৷ অথচ তখন যেন তিনি এক বখাটে কিশোর৷ যে কেউ তাঁকে যেভাবে খুশি ‘শাসন', ‘শায়েস্তা' করে৷ নালিশ আসতে থাকে বাড়িতে৷ অল্প দিনেই বাড়ির সবাই অতিষ্ট৷ সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়, সর্বজনশ্রদ্ধেয় মানুষটিকে বেঁধে গৃহবন্দি করে পরিবারের ‘মান-সম্মান' বাঁচাতে হবে৷ পরিবারের ‘মান-সম্মান'-এর কথা সবাই ভেবেছিলেন কিন্তু ওই ভদ্রলোককে সত্যিকার অর্থে বাঁচানোর চেষ্টা কেউ করেননি৷ মানসিক রোগের চিকিৎসা করালে হয়তো আবার সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতেন৷ সামান্য জ্বর হলেও ডাক্তার ডাকা হতো, কিন্তু মনে যে তাঁর ‘ক্যানসার', সেই ব্যাধির চিকিৎসার কথা কেউ ভাবেইনি! ‘সুদিনের স্বজনদের' বেশিদিন তিনি কষ্ট দেননি৷ সবার ‘সম্মান' অটুট রেখে, সবার জীবনে ‘শান্তি' ফিরিয়ে দিয়ে একদিন অতি নীরবে চিরপ্রস্থান হয় তাঁর৷

মনের অসুখে পর্যুদস্ত মানুষগুলো বড় একা৷ শৈশবে, কৈশোরে, যৌবনে, তারুণ্যে কি বার্ধক্যে- যে যখন মনোজগতে ঝড়ের মুখোমুখি সে-ই একা৷ ঘরে একা, বাইরেও একা৷

কার হয়না মনের অসুখ? ছেলে-বুড়ো সবার হয়৷ তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণেও হয়৷ প্রথমে হয়তো একটু বিষন্নতায় পেলো, আদর-যত্ন-চিকিৎসার অভাবে তা-ই হয়তো একসময় সবার চোখে ধরা দিল ‘পাগলামি' হিসেবে৷

সহানুভূতিশীল সচেতন স্বজনের বড় অভাব তাঁদের৷ বন্ধুর অভাব, চিকিৎসকের অভাব, হাসপাতালেরও অভাব৷ এসব আমরা দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা থেকে তো জানিই, সংবাদমাধ্যমের বদৌলতে আরো ভালো করে জানি৷

অনেকেই জানি, মনরোগে ভালোবাসা আর চিকিৎসাটা জরুরি৷ বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের ১৮ শতাংশই মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত৷

যে দেশে শিশুদেরই এমন অবস্থা, সে দেশে প্রাপ্তবয়স্ক মনরোগী যে অনেক বেশি হবে তা বলাই বাহুল্য৷ দেশে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র আছে মাত্র ১১টি১৬ কোটি মানুষের দেশে মনরোগ বিশেষজ্ঞ মাত্র ২০০ জন! প্রয়োজনের তুলনায় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক খুব কম৷ রোগী এবং রোগীর আত্মীয়দের সচেতনতার অভাবে এ রোগের চিকিৎসা করানোর প্রবণতা তার আরো কম৷

আত্মকেন্দ্রিকতার এ যুগে সমস্যাসংকুল কোনো দেশের মানুষ এমনিতেই অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক নানাবিধ চাপের বিপরীতে সদা অসহায়৷ মনরোগে আক্রান্তদের অসহায়ত্ব স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি প্রকট, অনেক বেশি অসহনীয়৷ শিশুদের মতো মনরোগীদেরও সচেতন সহানুভূতিশীল আন্তরিক স্বজন বড় বেশি প্রয়োজন!

যে কোনো মানুষই মানসিক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন৷ আপনার চেনা মানুষদের মধ্যে কেউ কি কখনও মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন? জানেন সেই গল্প, নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান