মানবিক সম্রাটের বিদায়
রাজপরিবারের ঐতিহ্য ভেঙে সাধারণ মানুষের কাতারে দাঁড়াতেন জাপানের সম্রাট আকিহিতো৷তাই তাঁর জায়গা হয়েছিল মানুষের হৃদয়পটে৷ ৩০ বছর পর স্বেচ্ছায় রাজমুকুট ছেড়েছেন ‘মানবিক সম্রাট’ অভিধা পাওয়া আকিহিতো৷
চন্দ্রমল্লিকা সিংহাসনে
বাবা সম্রাট হিরোহিতোর মৃত্যুর পর ১৯৮৯ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন রাজতন্ত্রের মুকুট পরেন সম্রাট আকিহিতো৷ ২০১৬ সালে এক টেলিভিশন ভাষণে ‘চন্দ্রমল্লিকা সিংহাসন’ ছাড়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করে জাপানিদের স্তম্ভিত করে দেন তিনি৷ সে সময় বয়স ও শারীরিক অসুস্থতাকে এর কারণ হিসাবে দেখান বর্তমানে ৮৫ বছর বয়সি সম্রাট৷ এরপর তাঁর স্বেচ্ছা পদত্যাগের আইন পাস করে জাপানের সংসদ৷
২০০ বছর পর...
২০০ বছর সময়ে প্রথম জাপানি সম্রাট হিসাবে স্বেচ্ছায় সিংহাসন ছাড়ছেন আকিহিতো৷ এর আগে ১৮১৭ সালে সম্রাট কোকাকু এভাবে স্বেচ্ছায় পদ ছেড়েছিলেন৷ পদত্যাগের পর আকিহিতোকে জাপানি ভাষায় ‘জোকো’ (এম্পেরর ইমেরিটাস) এবং সম্রাজ্ঞী মিচিকোকে ‘জোকোগো’ (এম্প্রেস ইমেরিটাস) নামে ডাকা হবে৷
সিংহাসন ছাড়ার প্রক্রিয়া
সরকারি ও রাজ পরিবারের কর্তাব্যক্তিদের সামনে বক্তব্যের মাধ্যমে সিংহাসন ছাড়লেন আকিহিতো৷ এর আগে ইম্পেরিয়াল প্রাসাদে ব্যক্তিগত কয়েকটি ধর্মানুষ্ঠানে যোগ দিতে হয় তাঁকে৷ আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করলেও মঙ্গলবার স্থানীয় সময় মধ্যরাত পর্যন্ত দায়িত্বে থাকছেন তিনি৷ বুধবার নানা আনুষ্ঠানিকতায় নতুন সম্রাট দায়িত্ব আসবেন৷
সাধারণ নারীর সঙ্গে সংসার
মানবিক সম্রাট হিসাবে খ্যাতি পাওয়া আকিহিতো রাজ পরিবারের আধুনিকায়নের উপর জোর দেন৷ তিনিই প্রথম রাজ পরিবারের সদস্য, যিনি ঐতিহ্য ভেঙে সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া মিচিকোকে বিয়ে করেছিলেন৷
দুর্যোগে মানুষের পাশে
বিভিন্ন সময়ের দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে উদাহরণ সৃষ্টি করেছিলেন আকিহিতো৷ ২০১১ সালে ভূমিকম্প ও সুনামির পর তিনি টেলিভিশনে এসে জাপানিদের উদ্দেশ্যে সরাসরি বক্তব্য দেন৷ দুই সপ্তাহ পরে টোকিওতে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে যান সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী৷ হাঁটু গেড়ে সেখানে থাকা লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের খোঁজখবর নেন৷
ঐতিহাসিক দায় লাঘব
১৯৩০ ও ৪০ এর দশকে জাপানিরা যখন পুরো এশিয়ায় হত্যাযজ্ঞ চালায়, তখন জাপানের সম্রাট ছিলেন আকিহিতোর বাবা হিরোহিতো৷ পরবর্তীতে আইন পরিবর্তনের ফলে সম্রাট রূপান্তরিত হয় আলঙ্কারিক পদে, রাজনৈতিক কোনো মত দেওয়া নিষিদ্ধ হয় সম্রাটের জন্য৷ রাজনৈতিক বক্তব্য এড়িয়ে চললেও চীন সফরে গিয়ে বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসযজ্ঞের জন্য ‘অনুশোচনা’ প্রকাশ করেন আকিহিতো৷ যদিও জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এখনো ‘অনুশোচনা’ প্রকাশের বিপক্ষে৷
পরবর্তী সম্রাট নারুহিতো
আকিহিতোর সিংহাসন ত্যাগের পর তাঁর ছেলে যুবরাজ নারুহিতো হতে যাচ্ছেন জাপানের পরবর্তী সম্রাট৷ ৫৯ বয়সি নারুহিতো অক্সফোর্ডে পড়াশোনা করেছেন৷ বাবা আকিহিতোর মতো তিনিও জাপানের ‘অতীত অপরাধের’ সমালোচনা করে থাকেন৷ রাজ পরিবারের ঐতিহ্যে আরো সংস্কার তাঁর মাধ্যমে আসবে বলে মনে করছেন অনেকে৷ নারুহিতো বিয়ে করেছেন অক্সফোর্ড ও হার্ভার্ড পড়ুয়া মাসাকো ওয়াদাকে৷ তাঁদের একমাত্র মেয়ে প্রিন্সেস আইকো৷
সিংহাসনের উত্তরাধিকারী আর কারা?
জাপানের সিংহাসনে বসতে পারেন কেবল পুরুষরাই৷ নতুন সম্রাট হতে চলা নারুহিতোর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকার হিসাবে রয়েছেন তাঁর ছোটভাই আকিশোনো (ছবিতে বামে)৷ নারুহিতো ও মাসাকো দম্পতির কোনো ছেলে নেই৷ এ কারণে আকিশিনোর পর সিংহাসনের উত্তরাধিকার তাঁর ছেলে যুবরাজ হিশাহিতো (ছবিতে মাঝে)৷ বর্তমানে হিশাহিতোর বয়স ১২ বছর৷