মাথাব্যথা নিয়ে মাথা না ঘামানোর উপায়
১১ জানুয়ারি ২০২৩বার্লিনের ফ্রানৎসিস্কুস হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক স্টেফান টয়ফেল দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে রোগীদের ব্যথা দূর করার লক্ষ্যে চিকিৎসা করে আসছেন৷ সে কারণে তিনি বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথার মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য করতে পারেন৷ তাঁর মতে, আচমকা তীব্র ক্লাস্টার মাথাব্যথার অ্যাটাক সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়৷ টয়ফেল বলেন, ‘‘ক্লাস্টার মাথাব্যথার ক্ষেত্রে রোগীদের প্রচণ্ড ব্যথা হয় এবং একটি দিকেই হয়৷ অর্থাৎ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাথার একটি দিকে চোখের পেছনে ব্যথা শুরু হয়৷ চোখে পানি ভরে যায়, চোখ লাল হয়ে যায়৷''
ক্লাস্টার মাথাব্যথা বিরল ঘটনা৷ মূলত পুরুষদের ক্ষেত্রেই সেটা ঘটে৷ মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে বিষয়টি একেবারে ভিন্ন৷ স্টেফান টয়ফেল বলেন, ‘‘সবসময় না হলেও মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে মাথার অর্ধেক অংশে ব্যথা হচ্ছে৷ হয় বাম দিকে, অথবা ডান দিকে মাথা বেশিরভাগ সময় দপদপ করে৷ মাইগ্রেনের ক্ষেত্রে অন্য কিছু উপসর্গও দেখা যায়৷ আলোর কারণে চোখে, শব্দের কারণে কানে অথবা গন্ধের কারণে নাকে অস্বস্তি হয়৷''
মাইগ্রেন গোটা জীবন নষ্ট করে দিতে পারে৷ তথাকথিত ‘টেনশন' মাথাব্যথাও প্রচণ্ড কষ্ট দেয়৷ টয়ফেল বলেন, ‘‘টেনশন হেডেক সার্বিকভাবে মাথায় প্রবল চাপ সৃষ্টি করে৷ রোগীরা প্রায়ই বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, তাঁদে মনে হয় যে উপর থেকে চাপ আসছে, তাদের মাথায় যেন অত্যন্ত টাইট হেলমেট বা টুপি পরানো হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রেও বাড়তি উপসর্গ হিসেবে হালকা বমি ভাব আসে বা আলো দেখলে অস্বস্তি হয়৷ তবে মাইগ্রেনের তুলনায় তার মাত্রা কম৷''
মাথায় হাতুড়ির ঘা পড়ছে মনে হলে শরীর শিথিল করে আরাম পাওয়া যায়৷ হাঁটাচলা ও তাজা বাতাসও সাহায্য করে৷ এমনটা করলে টেনশন হেডেক অনেক কমে যায়৷ তবে অ্যাকিউট মাইগ্রেন দেখা দিলে হাঁটাচলায় কাজ হয় না৷ স্টেফান টয়ফেল বলেন, ‘‘মাইগ্রেনের চিকিৎসার দুটি দিক রয়েছে৷ একদিকে অ্যাটাকের চিকিৎসা করতে হয়, যাতে সেই ধাক্কা নিয়ন্ত্রণে আসে৷ এমন ব্যথা এড়িয়ে চলতে দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে ঘনঘন মাইগ্রেন অ্যাটাক কমানো ও তার তীব্রতা কমানোর চেষ্টা করা হয়৷ এমন ব্যথা কমাতে বাজারে অনেক ওষুধ পাওয়া যায়৷ অ্যাস্পিরিন ও ইবুপ্রোফেনের মতো সহজলভ্য ওষুধ রয়েছে৷''
কীভাবে মাথাব্যথা সৃষ্টি হয়, সেটা জানতে পারলেও ব্যথা সামলাতে সুবিধা হয়৷ সেই কারণ কোনো রোগের অশনি সংকেতও হতে পারে৷ স্টেফান টয়ফেল মনে করিয়ে দেন, ‘‘যে সব চিহ্ন বা উপসর্গ কঠিন রোগের ইঙ্গিত দেয়, সেগুলিই বিপজ্জনক সংকেত৷ যেমন সেরিব্রাল হেমারেজ বা মেনিনজাইটিস৷ একমাত্র ডাক্তাররাই সেটা ধরতে পারেন৷ যেমন আচমকা উপসর্গ দেখা দিলে সেটা সেরিব্রাল হেমরেজ হতে পারে৷ মেনিনজাইটিসের ক্ষেত্রে প্রায়ই ভীষণ জ্বরও ধরা পড়ে৷''
এমন রোগের আশঙ্কা অমূলক হলে রোগীদের নিজেদেরই ব্যথা কমানোর উপায় খুঁজতে হয়৷ কিছু মানুষের ক্ষেত্রে শীতল পরশ, অন্যদের গরম সেঁক সাহায্য করে৷ যেমন ঘাড় শক্ত হয়ে ব্যথা হলে হেয়ার ড্রাইয়ার সেই কষ্ট কিছুটা হলেও দূর করতে পারে৷ নিজের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে টয়ফেল বলেন, ‘‘আমি সব সময়ে রোগীদের নিজেদেরই ব্যথা উপশমের উপায় খুঁজতে উৎসাহ দেই৷ মানতেই হবে, যে রোগীরা কিন্তু বেশ সৃজনশীল৷''
মাথাব্যথার রোগীদের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য এড়িয়ে চলা উচিত৷ তার বদলে স্পষ্ট দৈনিক রুটিন এবং নিয়মিত ও সুষম খাবারও সাহায্য করতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে মাথা দৈনন্দিন প্রক্রিয়া থেকে কিছুটা বিরতি পায়৷
কিয়র্স্টিন শুমান/এসবি