মহাশূন্য থেকে দেখা প্রাকৃতিক বিপর্যয়
স্যাটেলাইট থেকে পৃথিবীটা কেমন দেখায়? ভূপৃষ্ঠে কী ঘটছে, তার কতটুকু জানতে পারে তারা? স্যাটেলাইট থেকে তোলা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি দেখলে তার একটা আন্দাজ পাওয়া যায়৷
আগ্নেয়গিরির যখন ঘুম ভাঙে
আগ্নেয়গিরিরা যতদিনই নিদ্রমগ্ন থাকুক না কেন, তাদের ঘুম ভাঙলে আর রক্ষা নেই! ২০০৯ সালে রাশিয়ার কুরিল দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত সারিকেভ আগ্নেয়গিরিটি যখন বিস্ফোরিত হয়, তখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস ঠিক তার উপর দিয়ে যাচ্ছিল৷ মহাকাশচারীরা মেঘের ফাঁক দিয়ে আগ্নেয়গিরি বিস্ফোরণের ছবি তোলার সুযোগ পান৷ আগ্নেয়গিরির ছাই থেকে শুরু করে বাষ্প, প্রায় সব কিছুই মহাকাশ থেকে দেখা যায়৷
পড়ে থাকে বালুচর
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা এসা-র প্রোবা-৫ পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইটটি ভূপৃষ্ঠে কোনো বিশেষ এলাকার ছবি তোলে দিনের পর দিন, যা থেকে পরিবেশগত পরিবর্তনের একটা চিত্র ধরা পড়ে৷ ওপরের ছবিগুলো তোলা হয়েছিল (বাম থেকে ডান) ২০১৪ সালের এপ্রিল, ২০১৫ সালের জুলাই ও ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে৷ ছবিগুলি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বলিভিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ পুপো কিভাবে ধীরে ধীরে উধাও হচ্ছে৷
আগুন নিয়ে খেলা
প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অরণ্যে দাবানল মানুষ ও পরিবেশের বিপুল ক্ষতি করে৷ মানুষই অধিকাংশ সময়ে এই অগ্নিকাণ্ডের জন্য দায়ী৷ ইন্দোনেশিয়াতে চাষিরা ক্রান্তিমণ্ডলীয় ‘পিট’ রেইনফরেস্টে আগুন লাগানোর ফলে বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়৷ বোর্নিও আর সুমাত্রা দ্বীপের আগুন স্যাটেলাইটের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে৷ সেই আগুনের ধোঁয়ার কারণে ইন্দোনেশিয়ার বহু মানুষ বায়ুদূষণ সম্পর্কে সচেতন হন৷
বানভাসি জার্মানি
২০১৩ সালে মধ্য ইউরোপে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, তা-তে এ অঞ্চলের মুখ্য নদীগুলিতে বন্যা নামে৷ স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এলবে নদী কিভাবে কুল ছাপিয়েছে৷
ঘূর্ণিঝড়
হারিকেন অথবা সাইক্লোন; প্রচণ্ড বাতাসের গতি, বিপুল বৃষ্টিপাত, সাগরে বান; এ ধরনের ঝড়ের গতিবেগ, গতিপথ ও অগ্রগতির উপর চোখ রাখার জন্য চাই মহাশূন্য থেকে সংগৃহীত তথ্য৷ মেক্সিকোর উপকূলে ২৫শে নভেম্বর, ২০১৫ তারিখে তোলা স্যান্ড্রা ঘূর্ণিঝড়ের ছবি৷
হিমবাহের বরফ গলছে
জলবায়ু পরিবর্তনের উপর নজর রাখতে স্যাটেলাইটের দরকার, বিশেষ করে হিমবাহের বরফ গলার পরিমাপ বুঝতে৷ মহাশূন্য থেকে তোলা ছবি থেকে বিজ্ঞানীরা দেখাতে পেরেছেন যে, সারা বিশ্বে একাধিক হিমবাহের বরফ কমে গিয়েছে – অপরদিকে সাগরের জল বেড়েছে৷ ২০০২ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে আর্জেন্টিনার পাটাগোনিয়ো অঞ্চলের উপশালা হিমবাহ কিভাবে ধীরে ধীরে সরে গিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র আইএসএস থেকে তোলা এই সব ছবি তার প্রমাণ৷
বালির ঝড়
অথবা ধুলোর ঝড়, হাবুব কিংবা সিমুম৷ ছবিটি তোলা হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, স্যাটেলাইট থেকে৷ মধ্যপ্রাচ্যে এ ধরনের ধুলোবালির ঝড় দিনকে রাত করে দেয়৷ স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য ভূপৃষ্ঠে গ্রাউন্ড স্টেশনের সেন্সরগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হয়৷
‘নগ্ন শিখর’
ক্যালিফর্নিয়ার মাউন্ট শাস্টা পাহাড়ের চূড়ায় যে পর্যাপ্ত বরফ নেই, এই পরিস্থিতি বর্ণনা করার জন্য নাসা ঐ দু’টি শব্দ ব্যবহার করেছে৷ মাউন্ট শাস্টা এই অঞ্চলে পানীয় জলের একটি প্রধান উৎস৷ শুধু ক্যালিফর্নিয়াতেই নয়, বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকেও এই ধরনের ‘বাদামি পাহাড়ের’ ছবি পাওয়া গিয়েছে, যদিও অদূর অতীতে তাদের তুষারাবৃত শ্বেতশুভ্র মূর্তি স্মৃতিতে আজও অম্লান৷