মহাশূন্য থেকে ‘গোলাবর্ষণ’

মহাশূন্যে অসংখ্য গ্রহাণু ঘুরছে৷ তাদের অনেকের ব্যাস বেশ কয়েক কিলোমিটার৷ কিন্তু এই অ্যাস্টেরয়েডগুলির মধ্যে কোনোটির আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার সম্ভাবনা নেই, বলছেন বিজ্ঞানীরা৷

২০১২টিসি৪ নম্বর গ্রহাণুটির ব্যাস ১০ থেকে ২০ মিটার – ২০১৭ সালের ১২ অক্টোবর তারিখে পৃথিবীর ৪৪,০০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে যায় এই গ্রহাণু৷ ২০১২ সালে হাওয়াই-এর অবজারভেটরি থেকে ২০১২টিসি৪-এর অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়৷

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসের গোড়ায় ‘ফ্লোরেন্স’ গ্রহাণু পৃথিবীর পাশ কাটিয়ে যায় – পাশ মানে ৭০ লাখ কিলোমিটার দূর দিয়ে৷ ১৯৮১ সালে আবিষ্কৃত গ্রহাণুটির ব্যাস ৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার৷ এর নাম রাখা হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ নার্স ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের নামে৷

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ১,৩০,০০০ টন ওজনের গ্রহাণু ‘২০১২ডিএ১৪’ পৃথিবীর মাত্র ২৭,০০০ কিলোমিটার দূর দিয়ে যায় – কিছু কিছু কৃত্রিম উপগ্রহের দূরত্ব যার চেয়ে বেশি!

গ্রহাণুর সঙ্গে উল্কার তফাৎ হল এই যে, কোনো গ্রহাণু বা মহাশূন্যের অন্য কোনো বস্তু পৃথিবীর আবহমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠে এসে পড়লে, তাকে উল্কাপিণ্ড বলা হয়৷ উল্কার আঘাতে স্বভাবতই বিপর্যয় ঘটতে পারে৷

সাড়ে ছ’কোটি বছর আগে একটি সুবিশাল উল্কাপিণ্ড য়ুকাতান উপদ্বীপে এসে পড়েছিল৷ এই আঘাতের ফলে যে চিকসুলুব গহ্বরটি সৃষ্টি হয়, তার ব্যাস ৩০০ কিলোমিটার৷ এই উল্কাপাতের ফলেই ডাইনোসররা নিশ্চিহ্ন হয়, বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷

উল্কাপিণ্ড বস্তুত ভূপৃষ্ঠের পাথরগুলির মতোই দেখতে – কিন্তু লাভা পাথরের মতো স্থানে স্থানে মসৃণ, কেননা পৃথিবীর আবহমণ্ডলে প্রবেশ করার সময় প্রচণ্ড ঘর্ষণে উল্কাপিণ্ডটি অংশত গলে যায়৷

ধূমকেতুরা বস্তুত একটি গ্যাসের মেঘ, যার পুচ্ছটি গ্যাস, পাথর ও অসংখ্য ধুলার কণিকা দিয়ে তৈরি৷ ধূমকেতুর ধুলিকণা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করলে সেগুলির তাপমাত্রা দাঁড়ায় ৩,০০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপর – যার ফলে কণিকাগুলি আলো ছড়াতে থাকে৷ এর ফলে আমরা উল্কাপাত দেখতে পাই৷

কোনো ধূমকেতু পৃথিবীর অতি কাছ দিয়ে গেলে অসংখ্য উল্কাপাত ঘটে, যা রাতের আকাশে অসাধারণ দেখতে লাগে, যেমন ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের উপর এই উল্কাবৃষ্টি৷

পৃথিবীর কাছাকাছি আসতে পারে এমন সব গ্রহাণু, ধূমকেতু ইত্যাদির উপর নজর রাখার জন্য ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা ইএসএ ২০১৩ সালে ইটালির ফ্রাস্কাতি অঞ্চলে ‘‘পৃথিবী-সন্নিকটস্থ’’ বস্তুসমূহের সমন্বয় কেন্দ্র খুলেছে৷ টেনেরিফা ইত্যাদি দ্বীপে বসানো টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য এখানে সমন্বয় করা হয়ে থাকে৷