1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহাকাশের পরিবেশে গবেষণার বাড়তি সুবিধা

২৫ মে ২০২০

কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে মহাকাশ যাত্রার প্রয়োজন নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে৷ নানা মৌলিক গবেষণার ক্ষেত্রে মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশ জ্ঞানভাণ্ডার আরও সমৃদ্ধ করছে৷ পদার্থবিদ্যার নানা তত্ত্বের হাতেনাতে প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3cj6P
মহাকাশ অভিযান
ছবি: ESA/ATG medialab

কিছু ক্ষেত্রে প্রকৃতির নিয়ম অকেজো করার কোনো উপায় রয়েছে কি? পদার্থবিদ্যার চারটি মৌলিক মিথস্ক্রিয়া ছাড়া পৃথিবীর অবস্থার ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব নয়৷ সব জায়গায় সেই শক্তির প্রভাব রয়েছে৷

পৃথিবীতেই মহাকর্ষীয় বল বা মাধ্যাকর্ষণ শক্তি সবচেয়ে বেশি টের পাওয়া যায়৷ এই শক্তিই মহাজাগতিক বস্তুগুলিকে নির্দিষ্ট কক্ষপথে আটকে রাখে৷ বস্তুর ভর থাকলেই এর প্রভাব দেখা যায়৷ এই শক্তির এক্তিয়ারের কোনো সীমা নেই৷

ইলেকট্রোম্যাগনেটিজম বা বিদ্যুৎ-চুম্বকীয় মিথস্ক্রিয়ার প্রভাব দৈনন্দিন জীবনেই দেখা যায়৷ এর ফলেই বিদ্যুৎ পরিবাহিত হয়, চুম্বকগুলো একে অপরকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে৷

অন্য দুটি মিথস্ক্রিয়ার প্রভাব পরমাণুর মধ্যে দেখা যায়৷ স্ট্রং নিউক্লিয়ার ইন্টার-অ্যাকশন বা সবল কেন্দ্রিণ মিথস্ক্রিয়া পারমাণবিক নিউক্লিয়াসকে ধরে রাখে৷ পরমাণুর ক্ষয় অথবা পারস্পরিক একত্রিকরণ হলে উইক নিউক্লিয়ার ইন্টার-অ্যাকশন বা দুর্বল কেন্দ্রিণ মিথস্ক্রিয়া দেখা যায়৷

এই চারটি মৌলিক মিথস্ক্রিয়া শুধু পৃথিবীর বুকে দেখা যায় না৷ প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী বহুযুগ ধরে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের বিকাশের ক্ষেত্রে এই মিথস্ক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ প্রায় ১,৩৮০ কোটি বছর আগে তথাকথিত ‘বিগ ব্যাং' বা বস্তুপিণ্ডের বিস্ফোরণের ফলে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিল৷ সেই ঘটনার এক সেকেন্ডের অভাবনীয় ভগ্নাংশের পরই মহাকর্ষ শক্তি কার্যকর হয়৷

চার মিথস্ক্রিয়ার সবচেয়ে পুরানোটি হল মহাকর্ষ৷ সবকটি মিথস্ক্রিয়া মিলে মহাবিশ্বে নির্দিষ্ট নিয়ম ও কাঠামো নিশ্চিত করে৷ এর মধ্যে কোনো একটি শক্তির মধ্যে সামান্যতম পরিবর্তন ঘটলে গোটা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড বদলে যাবে৷

ব্ল্যাক হোলের জন্ম সেই অবস্থা সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ধারণা দিতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে পদার্থের ঘনত্ব বাড়তে থাকে এবং মহাকর্ষ বল আরও শক্তিশালী হতে থাকে৷ সেই শক্তি সর্বগ্রাসী হয়ে উঠলে মহাকাশে গর্ত সৃষ্টি হয়

আমাদের হাতে পদার্থবিদ্যার চার মৌলিক মিথস্ক্রিয়া বদলানোর ক্ষমতা নেই৷ কিন্তু আমরা সেই শক্তির সদ্ব্যবহার করতে পারি৷ যেমন নিউক্লিয়ার ফিশন বা নিউক্লীয় বিদারণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব৷

মহাকাশ ভ্রমণের মাধ্যমেও অন্য কিছু সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে৷ যেমন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন এত দ্রুত পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, যে সেন্ট্রিফিউগাল ফোর্স বা বহির্মুখী টান মহাকর্ষ শক্তিকে প্রায় সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে৷ এভাবে যে মাধ্যাকর্ষণহীনতা সৃষ্টি হয়, সেই অবস্থায় শুধু পানির আচরণ বদলে যায় না৷ শুধু মহাকাশচারীরা এর ফলে বিস্মিত হন না৷

ভূপৃষ্ঠের উপর মোমবাতির শিখা কাঁপতে থাকে৷ গরম বাতাস উপরে উঠে শিখা লম্বা করে তোলে৷ স্পেস স্টেশনে আগুনের শিখা হয় শান্ত ও গোলাকার৷ কারণ সেখানে গরম বাতাস উপর দিকে ওঠে না৷ পৃথিবীর বুকে গরম তরল পদার্থ উপরের দিকে ধেয়ে যায়৷ বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই ক্রিয়াকে কনভেকশন বলা হয়৷ এর ফলে প্রোটিন ক্রিস্টালের সমান বৃদ্ধি হতে পারে না৷ মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশে অণুগুলি মুক্তভাবে বিচরণ করতে পারে৷ সেখানে যে ক্রিস্টাল সৃষ্টি হয়, তা হয় নিখুঁত এবং পৃথিবীর তুলনায় ক্রিস্টালের আকৃতিও বড় হয়৷ এমন ক্রিস্টাল প্রোটিনের প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে৷ এভাবে রোগীর বিশেষ প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ তৈরি করা সহজ হবে৷ গবেষণার অনেক ক্ষেত্রেই মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশ একেবারে নতুন জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করছে৷

কর্নেলিয়া বরমান/এসবি