1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মহরম, দুর্গাপুজোয় কড়াকড়ির নির্দেশ কেন্দ্রের

৫ আগস্ট ২০২১

উৎসবের দিনগুলিতে ভিড়ে রাশ টানতে চায় কেন্দ্র। তাই মহরম থেকে দুর্গাপুজোর ভিড় ঠেকাতে রাজ্যগুলিকে বিধিনিষেধ জারির প্রস্তাব।

https://p.dw.com/p/3yZOo
গতবছর দুর্গাপুজো প্যান্ডেলে দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেয়া হয়নি। ছবি: Prabhakarmani Tewari/DW

সব কটি রাজ্য সরকারকে চিঠি দিল কেন্দ্রীয় সরকার। উৎসবের সময় মানুষ যেন রাস্তায় নেমে ভিড় না করে, তারা যেন বাড়িতেই থাকে। রাজ্য সরকারগুলিকে এজন্য স্থানীয় স্তরে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হলো। আগামী ১৯ অগাস্ট মহরম, ৩০ অগাস্ট জন্মাষ্টমী, ১০ সেপ্টেম্বর গণেশ চতুর্থী এবং ১১ অক্টোবর থেকে দুর্গাপুজো শুরু। ফলে বলা যেতে পারে, উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে যাচ্ছে ১৯ অগাস্ট থেকে।

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ এবং ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, আসন্ন উৎসবের মরসুমে ভিড় নিয়ন্ত্রণে না রাখলে তা করোনার সুপারস্প্রেডার হিসাবে কাজ করবে। সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। পরিস্থিতি আবার খারাপ হবে। এরপরই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজ্যের মুখ্যসচিবদের চিঠি দিয়েছেন।

তিনি চিঠিতে বলেছেন, উৎসবের সময় জমায়েত যাতে না হয়, রাস্তায় যাতে ভিড় না নামে তা নিশ্চিত করা উচিত। এর জন্য স্থানীয় স্তরে যেন পদক্ষেপ নেয় রাজ্য সরকার। তার বক্তব্য, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এখনো শেষ হয়নি, তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে। এই সময় কোনো ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না।

গতবছর দুর্গাপুজোর সময় কলকাতায় বিধিনিষেধ জারি করেছিল কলকাতা হাইকোর্ট। মণ্ডপের ভিতরে তারা কাউকে ঢুকতে দেয়নি। দূর থেকে প্যান্ডেল ও প্রতিমা দেখেছিলেন অল্প মানুষ। বেশিরভাগ বাড়িতেই ছিলেন।

কলকাতার ক্লাবগুলি এখন দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। খুঁটিপুজোও হয়ে গেছে অনেক জায়গায়।

কলকাতার কাশী বোস লেনের বড় দুর্গাপুজোর অন্যতম কর্তা সোমেন দত্ত ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, তারা অবশ্যই করোনার কথা মাথায় রাখবেন। সরকার যে সিদ্ধান্ত নেবে, তা মানবেন। ইতিমধ্যেই তারা এবারের পুজোর পরিকল্পনা করোনাকে মাথায় রেখেই করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ''যারা পুজোর কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবেন সকলকেই টিকার দুইটি ডোজ নিতে হবে। অঞ্জলি দিতে হলেও দুই ডোজ টিকা নিতে হবে। অঞ্জলি হবে খুব ছোট ছোট ব্যাচে।''

সোমেন জানিয়েছেন, গতবার থেকেই তারা ডিজিটাল পুজোর ব্যবস্থা করেছেন। পুজো, অঞ্জলি সবই ডিজিটালি দেয়া যাবে। সেখানে সারাদিনের পুজো দেখা যাবে। রাস্তায় জায়েন্ট স্ক্রিন লাগানো থাকবে। সেখানেও দেখা যাবে। দূর থেকে যাতে প্রতিমা দেখা যায় তার জন্য সামনেটা খোলা থাকবে। স্যানিটাইজার, থার্মাল চেকিংয়ের ব্যবস্থা তো থাকবেই। সরকারি নির্দেশ এলে বা করোনার তৃতীয় ঢেউ দেখা দিলে তারা ভার্চুয়ালের উপরই সব চেয়ে বেশি জোর দেবেন। ঘটনা হলো, করোনার কথা মাথায় রেখেই তারা দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ফলে জমায়েত বা ভিড়ে লাগাম পড়লেও তাদের অন্তত কোনো অসুবিধা হবে না।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের বাড়বাড়ন্তের অন্যতম কারণ ছিল কুম্ভমেলা ও পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের প্রচার। করোনাকালে কুম্ভমেলায় বিপুল সংখ্যক মানুষ গেছিলেন। পরে দেখা গিয়েছে, সেখানে করোনা পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না। লাখ লাখ মানুষের করোনা পরীক্ষা করার পরিকাঠামোও ছিল না। এটাও দেখা গেছে, হরিদ্বার থেকে ফিরে অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন এবং তারা প্রচুর মানুষের করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণ হয়েছেন। সে সময় শত সমালোচনাতেও কুম্ভ বন্ধ করা হয়নি। শাহী স্নানের দিন বহু লাখ মানুষ স্নান করেছেন।

একই অবস্থা ছিল বিধানসভা ভোটের প্রচারের ক্ষেত্রেও। ভিড়ে ঠাসা বড় বড় জনসভা হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ গাদাগাদি করে তারকাদের রোড শো দেখেছেন। রাজনৈতিক নেতাদের রোড শো-তেও ভয়ংকর ভিড় হয়েছে। কিছুদিন আগেই কেরালায় ইদের দিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে দেয়া হয়েছিল। তা নিয়ে আদালতে তাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। ভারতে এখন দিনে যতজন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন, তার অর্ধেকের থেকে বেশি মানুষ কেরালার। কেরালা, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হয়েছিল। এই তিন রাজ্যেই করোনার প্রকোপ এখন বেশি। তামিলনাড়ুর হাইকোর্ট তো করোনাকালে এইভাবে নির্বাচনী প্রচার অনুমোদন করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছে।

এই সব ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সম্ভবত এবার কেন্দ্রীয় সরকার আগে থেকে তৎপর হয়েছে। রাজ্য সরকারগুলিকেও সময় থাকতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে চলেছে। যে সময় দুর্গাপুজো হবে, তখন তৃতীয় ঢেউ এসে যেতে পারে। সেজন্যই ভিড়ে রাশ টানার কথা বলা হচ্ছে।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই)